Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home বঙ্গবন্ধু ও বিশ্বকবি ছিলেন বিশ্বমানবতা এবং শান্তির জন্য নিবেদিতপ্রাণ
    মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার শিল্প ও সাহিত্য

    বঙ্গবন্ধু ও বিশ্বকবি ছিলেন বিশ্বমানবতা এবং শান্তির জন্য নিবেদিতপ্রাণ

    abmmannanMay 8, 202310 Mins Read
    Advertisement


    জুমবাংলা ডেস্ক: স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অতিক্রান্ত হলো ২০২১ সালে আর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ১৬২তম জন্মবার্ষিকী আজ। একথা মোটেও বলা অত্যুক্তি হবে না যে, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুকে চিন্তা করা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিলে অর্থহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছিন্ন তরঙ্গ- আমাদের জাতীয় জীবনের অংশ, এমনকি বাঙালির উপলব্ধির সকল ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ। স্বল্পপরিসরে আমি তুলে ধরব বিশ্বসভায় সব বাঙালির গৌরব, ভারতবর্ষ তথা এশিয়ার গর্ব, প্রথম অশ্বেতাঙ্গ নোবেলজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ভাবনা, চেতনা ও গান কিভাবে রাজনীতির কবি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর চিন্তা ও চেতনাকে নিরন্তর উদ্দীপ্ত করে রেখেছিল বাঙালির মহাজাগরণ সৃষ্টিতে যার সফল পরিণতি মহান মুক্তিযুদ্ধ।

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুজনেই বিশ্বমানবতা এবং বিশ্ব শান্তির জন্য নিবেদিতপ্রাণ। গভীর অধ্যাত্মবিশ্বাসী এই দুই মহাপুরুষের চিন্তাভাবনা ও কর্মকান্ডে বাংলা ভাষা এবং বাঙালির প্রতি ছিল অপরিসীম প্রেম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি’। দুজনেই বাংলা এবং বাঙালিকে বিশ্বের দরবারে সুমহান মর্যাদায় হাজির করেছেন, একজন সাহিত্য দিয়ে অন্যজন রাজনীতি দিয়ে। ‘বাঙালি’ বলে যে জাতির কথা রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, বঙ্গবন্ধু সেই জাতিকেই আবিষ্কার করেন ‘সোনার বাংলায়’।

    বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের অগ্রসেনানী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর জীবনে কবিগুরুর প্রভাব ছিল অপরিসীম। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সুখ-দুঃখের সাথী রবীন্দ্রনাথ। ইতিহাসের মূক সাক্ষীর অস্তিত্বহীনতায় বঙ্গবন্ধুর মানসক্ষেত্রের নির্ভুল রূপায়ন অসম্ভব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ গ্রন্থে অবহিত করেন, ‘১৯৪৯ থেকে আব্বা যতবার জেলে গেছেন কয়েকখানা নির্দিষ্ট বই ছিল যা সব সময় আব্বার সঙ্গে থাকত। জেলখানায় বই বেশিরভাগই জেল লাইব্রেরিতে দান করে দিতেন কিন্তু আমার মা‘র অনুরোধে এই বই কয়টা আব্বা কখনও দিতেন না, সঙ্গে নিয়ে আসতেন। তার মধ্যে রবীন্দ্র-রচনাবলী, শরৎচন্দ্র, নজরুলের রচনা, বার্নাড শ’র কয়েকটা বইতে সেন্সর করার সিল দেওয়া ছিল। …মা এই কয়টা বই খুব যত্ন করে রাখতেন। আব্বা জেল থেকে ছাড়া পেলেই খোঁজ নিতেন বইগুলি এনেছেন কিনা। যদিও অনেক বই জেলে পাঠানো হতো। মা প্রচুর বই কিনতেন আর জেলে পাঠাতেন। নিউ মার্কেটে মার সঙ্গে আমরাও যেতাম। বই পছন্দ করতাম, নিজেরাও কিনতাম। সব সময়ই বই কেনা ও পড়ার একটা রেওয়াজ আমাদের বাসায় ছিল। প্রচুর বই ছিল। সেই বইগুলি ওরা নষ্ট করে। বইয়ের প্রতি ওদের আক্রোশও কম না। আমার খুবই কষ্ট হয় ঐ বইগুলির জন্য যা ঐতিহাসিক দলিল হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালে সবই হারালাম।’ (শেখ মুজিব আমার পিতা, পৃষ্ঠা ৭০ ও ৭১)।

    বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত জীবনেও রবীন্দ্রনাথ যে কতদূর প্রভাব বিস্তার করেছিল, তা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। বেগম মুজিবের মতে, ‘কবিগুরুর আসন বঙ্গবন্ধুর অন্তরের অন্তস্থলে। রাজনৈতিক জীবনের উত্থান-পতন দুঃখ-দৈন্য সর্ব মুহূর্তে তাকে দেখতাম বিশ্বকবির বাণী আবৃত্তি করতে। বঙ্গবন্ধু শিল্পী জাহিদুর রহিমের কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা’ শুনতে পছন্দ করতেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে জাহিদুর রহিম বঙ্গবন্ধু কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রায় নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করতেন। বঙ্গবন্ধু ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ’, ‘সুপ্রভাত’, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো’, ‘দুই বিঘা জমি’ প্রভৃতি কবিতা যেমন আবৃত্তি করতেন, তেমনি গুনগুন করে রবীন্দ্রনাথের গানও গাইতেন। ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’, ‘নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার’ বঙ্গবন্ধুর প্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

    বঙ্গবন্ধু ছোটবেলা থেকে কবিতা আবৃত্তি করতেন যা তার বজ্রকণ্ঠ ও বক্তৃতার কারিশমা দেখে সহজে অনুমেয়। তিনি তাঁর জীবনে কাব্য চর্চা করে কবি হতে পারেননি কিন্তু হয়েছেন রাজনীতির কবি। তাঁর ভাষণে থাকতো রবীন্দ্রনাথের কবিতার উদ্ধৃতি এতে তাঁর ভাষণও হয়ে যেত কবিতার পংক্তি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে বিশ্ব বিখ্যাত মার্কিন সাপ্তাহিক নিউজউইক পত্রিকা তাদের নিবন্ধ ‘দ্য পয়েট অব পলিটিক্স’-এ লিখেছিল,‘৭ই মার্চের ভাষণ কেবল একটি ভাষণ নয়, একটি অনন্য কবিতা। ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল সংখ্যায় ‘নিউজ উইক’ লিখেছিল- ’’রাজনীতির প্রকৌশলী নন মুজিব, মুজিব হচ্ছেন রাজনীতির কবি, বাঙালির স্বাভাবিক প্র্রবনতা প্রায়োগিক নয়, শৈল্পিক; তাই মনে হয়, বাংলাদেশের সব মানুষ, শ্র্রেনী ও মতাদর্শকে এক সূত্রে গাঁথা হয়েতো কেবল মুজিবের মত রাজনৈতিক কবির পক্ষে সম্ভব”।

    অপরদিকে কবি নির্মলেন্দু গুণ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ শিরোনামের কবিতায় লিখেছেন, ‘অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন/ তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল/ হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার/ সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী/ গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি/ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

    বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তিনি কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ ও তাঁর সহকর্মী জনাব মাজহারের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন, রুশ লেখক আইজ্যাক অ্যাসিমভ, তুর্কি কবি নাজিম হিকমতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, পাঞ্জাবে অনুষ্ঠিত প্রগতিশীল লেখকদের সম্মেলনে যোগদান করেছেন, লাহোরে কবি আল্লামা ইকবালের বাড়ি ‘জাভেদ মঞ্জিল’-এ অবস্থান করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সঙ্গে করাচি অভিমুখে যাত্রাকালে তিনি সহযাত্রী কয়েকজন কৌঁসুলিকে কাজী নজরুল ইসলামের কিছু কবিতা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাংশ আবৃত্তি করে শোনান। বাংলা ভাষার দিগন্তকে বিস্তৃত করার জন্য বিশ্বকবির অবদানকে বঙ্গবন্ধু বিনয়ের সঙ্গে স্মরণ করতেন। চীনে ভ্রমণকালে তিনি তাঁর উপলব্ধি লিপিবদ্ধ করেন, ‘কবিগুরু রবীন্দ্র্রাথকে না জানে এমন শিক্ষিত লোক চীন কেন দুনিয়ার অন্যান্য দেশেও আমি খুব কম দেখেছি।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃ: ২২৮)।

    স্বদেশে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি যেমন প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তেমনি বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলা ভাষার মহত্ত¡ ও শ্রেষ্ঠত্ব উম্মোচনে তিনি ছিলেন অতি উদ্যমী। ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয়তাবোধের প্রতি সংবেদনশীল থেকে ১৯৫২ সালে পিকিংয়ে এশীয় ও প্র্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলনে তিনি বাংলা ভাষায় বক্তৃতা প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু ও ভারতের ঔপন্যাসিক মনোজ বসু বাংলায় বক্তব্য উপস্থাপন করায় কৌতূহলী অনেক শ্রোতাকে বঙ্গবন্ধু যেভাবে উত্তর দান করেন তা স্মরণযোগ্য : “বাংলা ভাষা যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষা এ অনেকেই জানে। ঠাকুর দুনিয়ায় ‘ট্যাগোর’ নামে পরিচিত। যথেষ্ট সম্মান দুনিয়ার লোক তাঁকে করে। …পাকিস্তানের শতকরা ৫৫ জন লোক এই ভাষায় কথা বলে এবং দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ভাষার অন্যতম ভাষা বাংলা।” (আমার দেখা নয়াচীন ৪৪)।

    ১৯৬৭ সালের ২৩ জুন পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার নিষিদ্ধ করলে শিল্পী ও প্রগতিবাদী মানুষের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু একাত্ম হন। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বক্তৃতা প্র্রদানকালে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘আমরা মির্জা গালিব, সক্রেটিস, শেক্সপিয়ার, এরিস্টটল, দান্তে, লেনিন, মাও সে তুং পড়ি জ্ঞান আহরণের জন্য। আর দেউলিয়া সরকার আমাদের পাঠ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের লেখা, যিনি একজন বাঙালি কবি এবং বাংলায় কবিতা লিখে যিনি বিশ্বকবি হয়েছেন। আমরা এই ব্যবস্থা মানি না, আমরা রবীন্দ্রনাথের বই পড়বই, আমরা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবই এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত এই দেশে গীত হবেই।’ (বঙ্গবন্ধু কোষ পৃ: ২৯৬)। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রবীন্দ্রনাথের অমোঘ অবস্থান সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসংশয়চিত্ত। ১৯৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন, “Tagore had reflected the hopes and aspiration of the millions of Bengalis through his works. Without him…the Bengali Language was incomplete (The Pakistan Times, ১৭.১২.১৯৬৯). রবীন্দ্রসাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে সমধিক গুরুত্ব আরোপ করে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডকে রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু জানতেন, একটি জাতির ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি দমিত হলে সে জাতি ক্রমান্বয়ে নির্মূল হয়ে পড়ে। তাঁর ভাষায়, ‘একটি জাতিকে পঙ্গু ও পদানত করে রাখার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হলো তার ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করা।’ (বঙ্গবন্ধু কোষ পৃ: ২৫৬)। ফলত তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতসহ বাংলার মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত সমুদয় গান ও সাহিত্য প্রকাশের আবশ্যকতাকে গুরুত্ব প্রদান করেন।

    ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করেন। সেদিন পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে রেসকোর্সের ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে দাঁড়িয়ে কবিগুরুর সেই বিখ্যাত কবিতার লাইন ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি’ বিপরীতে অশ্রæভেজা কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘কবিগুরু তোমার উক্তি ভুল প্র্রমাণিত হয়েছে। দেখে যাও তোমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে’। রবীন্দ্র গবেষকরা মনে করেন এর থেকে বড় শ্র্রদ্ধার্ঘ্য কবিগুরুর প্রতি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কের আর কি হতে পারে?

    ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রীরূপে শপথ গ্র্রহণের কিছুক্ষণ পরেই জনৈক সাংবাদিক যখন বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন, ‘স্যার, আজকের দিনে জাতির প্রতি আপনার বাণী কি?’ জবাবে চিরাচরিত হাস্যমুখে তিনি বলেন- ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ যে বাংলাকে ভালোবেসে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি,’ আর বঙ্গবন্ধু সেটিকে ভালোবেসে ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি তারিখে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতে রূপ দিলেন। বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায় অনুযায়ী সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রূপে আমার সোনার বাংলা স্বীকৃতি লাভ করে।

    বাংলা একাডেমি আয়োজিত ১৯৭২ সালের ৮ মে রবীন্দ্রজন্মবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে লাখ লাখ প্রাণ ও অপরিমেয় ত্যাগের বিনিময়ে। কিন্তু সত্য, শ্রেয়, ন্যায় ও স্বাজাত্যের যে চেতনা বাঙালি কবিগুরুর কাছ থেকে লাভ করেছে, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে তারও অবদান অনেকখানি। বাঙালির সংগ্রাম আজ সার্থক হয়েছে। বাঙালির রবীন্দ্র-সম্মাননার চেয়ে বড় কোন দৃষ্টান্ত আমার জানা নেই।’

    বঙ্গবন্ধু পরার্থপরতায় উৎসর্গ করেছেন তাঁর সংগ্রামশীল মহাজীবন। রবীন্দ্রনাথ ১৮৯৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ইন্দিরা দেবীকে লিখেছেন, ‘ইংরেজ আমাদের নিন্দা করুক, প্রশংসা করুক, যাই করুক আমাদের প্রতি বিমুখ হোক বা প্র্রসন্ন হোক সে দিকে দৃকপাতমাত্র না করে আমাদের উপেক্ষিত দেশ, আমাদের উপেক্ষিত ভাষা, আমাদের অপমানিত লোকদের কাজে জীবন সমর্পণ করতে হবে।’ (ছিন্ন পত্রাবলী পৃ: ১৩২) রবীন্দ্রনাথের এ উপলব্ধি বঙ্গবন্ধুর ভাবনায়, পরিকল্পনায়, কর্মে ও ত্যাগে প্রোজ্জ্বল হয়ে আছে।

    বঙ্গবন্ধুও সাহিত্যে নগরসর্বস্ব জীবনের প্রতিফলনকে উৎসাহিত করেননি। তিনি সদ্যস্বাধীন দেশের অগণন গ্রামবাসীর অকৃত্রিম জীবনাচরণকে সাহিত্যের উপজীব্য করে তোলার জন্য দেশের সাহিত্যিকগণকে আহ্বান জানান। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে উপস্থিত শ্রোাতা ও সাহিত্যসেবীদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেন, ‘আমি সাহিত্যিক নই, শিল্পী নই, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, জনগণই সব সাহিত্য ও শিল্পের উৎস। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনোদিন কোন মহৎ সাহিত্য বা উন্নত শিল্পকর্ম সৃষ্টি হতে পারে না। আমি সারাজীবন জনগণকে সাথে নিয়েই সংগ্রাম করেছি, এখনও করছি ভবিষ্যতেও যা কিছু করবো, জনগণকে নিয়েই করবো। সুধী বন্ধুরা, আপনাদের কাছে আমার আবেদন, আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি যেন শুধু শহরের পাকা দালানেই আবদ্ধ না হয়ে থাকে, বাংলাদেশের গ্রাম-গ্রামান্তরের কোটি কোটি মানুষের প্রাণের স্পন্দনও যেন তাতে প্র্রতিফলিত হয়। আজকের সাহিত্য সম্মেলনে যদি এসবের সঠিক মূল্যায়ন হয়, তবে আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হব’…(মুনতাসীর মামুন, বঙ্গবন্ধু কোষ ৪২)।

    রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এক মহাসমুদ্রের মতো; যে কোনো দিকে তাকালেই যাঁর বিবিধ রূপ সহজেই ধরা পড়ে। তাঁর মহাপ্রয়াণের ঠিক ত্রিশ বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম হয়। আর এ দেশে জন্মগ্রহণ করেন এমন আর এক বাঙালি কালের বিবর্তনে যিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি; এমনকি রবীন্দ্রনাথের মতো বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে ডিঙিয়ে। ঠিক যেমনটা ইংরেজরা উইনস্টন চার্চিলের গলায় শ্রেষ্ঠ ইংরেজের বরমাল্য পরিয়ে দিয়েছেন শেক্সপিয়ারের মতো আরেক কালজয়ী মানুষকে ডিঙিয়ে। বঙ্গবন্ধুকে এক কথায় অভিহিত করা যায় দেশপ্রেমের অবতার হিসেবে। দেশের মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কিংবদন্তীতুল্য। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের কত শত সংগ্রামের শীর্ষ যিনি রচনা করেছিলেন, বাংলাকে তাঁর মতো আর কে ভালোবেসেছে? সাংবাদিক যখন তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন ‘হে মহানায়ক, আপনার শক্তি কোথায়? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন “বাংলার মানুষকে আমি ভালোবাসি, সে-ই আমার শক্তি।” সাংবাদিকের আবার প্রশ্ন ‘আর আপনার দুর্বলতা? তাঁর উল্টর “বাংলার মানুষকে আমি বড় বেশি ভালোবাসি, সেই আমার দুর্বলতা।”

    রবীন্দ্রনাথ যেমন তাঁর রচিত সাহিত্যের মধ্যে বেঁচে আছেন তেমনি আমাদের কাছে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দিক নির্দেশনা। তাঁর আদর্শই আমাদের শক্তি, তাঁর স্বপ্নই আমাদের প্রেরণা। বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি যতদিন থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু এবং রবীন্দ্রনাথ আমাদের আলোর দিশারী হয়ে থাকবেন। তাঁদের সৃষ্টি, স্বপ্ন আর জীবনদর্শন আগামী প্রজন্মকেও পথ দেখাবে সত্য ও সুন্দরের পক্ষে থাকতে। বঙ্গবন্ধু এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে বলে আমি মনে করি।

    দেশ পরিচালনায় জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি অসাম্প্রদায়িক, নিরক্ষরতা-ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই আমাদের সামনে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন তুলে ধরেছেন। তিনি এবং তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরে আলোকিত মানুষ এবং কল্যাণমুখী সমাজের দিকে ধাবিত হতে পারলেই উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠন সহজতর হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই অন্যান্য উন্নয়নের সমান্তরালে সকল ক্ষেত্রে আনন্দময়তার মধ্য দিয়ে উপলব্ধি ও উপার্জনের পথকে সুগম করবে। বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথ এর ভাবনা এবং আদর্শকে ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজ্ঞানভিত্তিক, ন্যায়ভিত্তিক, আধুনিক, উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সকলকেই আত্মনিয়োগ করতে হবে।

    লেখক: প্রফেসর ড. এ. কে. এম জাকির হোসেন, ভাইস-চ্যান্সেলর, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম

     

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    এবং ছিলেন জন্য নিবেদিতপ্রাণ বঙ্গবন্ধু বিশ্বকবি বিশ্বমানবতা মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার শান্তির শিল্প সাহিত্য
    Related Posts
    রাজনীতি

    ‘প্রতিরোধ-প্রতিহিংসার পরিবর্তে পরিকল্পনার রাজনীতি করতে হবে’

    August 19, 2025
    নির্বাচন

    ‘রাজনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’

    August 19, 2025
    সারজিস

    মিডিয়া কিছু বলছে মানেই সেটা সত্যি, এটা বিশ্বাস করা বোকামি : সারজিস

    August 19, 2025
    সর্বশেষ খবর
    Social Security August Payment

    Social Security Stimulus Checks: Eligibility and Payment Details

    hell let loose vietnam

    Hell Let Loose: Vietnam Announced – Tactical Jungle Warfare Shooter Launching in 2026

    Wildfire Prompts I-90 Closure Near Cle Elum

    Wildfire Prompts I-90 Closure Near Cle Elum

    pixel 10 pro xl

    Google Pixel 10 Pro XL Unveiled with Tensor G5, 6.8″ OLED, 5,200 mAh Battery, and 100x Telephoto Zoom

    Pixel 10 Pro Fold

    Pixel 10 Pro Fold Debuts as Google’s Brightest, Most AI‑Packed Foldable

    2025 NBA Salaries

    2025 NBA Salaries: Who Leads the League in Earnings?

    Palisades Fire Report Delayed Amid Federal Probe, Mayor Confirms

    Palisades Fire Report Delayed Amid Federal Probe, Mayor Confirms

    The Morning Show Season 4 trailer

    Jennifer Aniston, Reese Witherspoon Return in Morning Show Season 4 Trailer

    The Conjuring

    WEAPONS Eyes Third Consecutive Box Office Weekend Win

    Gen V Season 2's Rapid Release Schedule Over Too Soon

    Gen V Season 2’s Rapid Release Schedule Over Too Soon

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.