আব্দুল মান্নান: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু করেছেন দেশ জয় আর শেখ হাসিনা করেছেন সমুদ্র বিজয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন আর তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোনার বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছেন।’
আজ (৫ জুলাই) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কনফারেন্স কক্ষে ইউজিসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফেলো কর্তৃক আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিকরণে সামুদ্রিক শৈবালের গুরত্ব ও সম্ভাব্যতা অনুসন্ধান’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম এই কথা বলেন।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম। সেমিনার প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন ইউজিসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফেলো এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. আফজাল হোসেন।
ড. শামসুল আলম বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুইটি বিজয় অর্জন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সামুদ্রিক সুরক্ষা আইন করেছিলেন আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও বার্মার সাথে বিরোধে থাকা সমুদ্রসীমা ও সিট মহল বিনিময়ের মাধ্যমে জল এবং স্থলভাগের চূড়ান্ত সীমা নির্ধারণ করে আরও দুইটি অর্জন এনে দিয়েছেন। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এই বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ পেয়েছে পরিপূর্ণতা।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সমুদ্র সম্পদের ১৫ ভাগ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য এবং ৩০ ভাগ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংকট তৈরির ফলে বিভিন্ন সময়ে খাদ্যদ্রব্য এবং জ্বালানীর কয়েকবার বেড়েছে।যা আসলে এককভাবে কারোপক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এক্ষেত্রে আমরা যদি আমাদের সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি তাহলে দ্রবমূল্য বৃদ্ধির লাগাম কিছুটা হলেও টেনে ধরা যাবে। ড. আফজাল হোসেন তার গবেষণায় সামুদ্রিক শৈবালের গুরত্ব ও উপযোগিতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যা প্রকৃতপক্ষে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োজন। আমি মনে এটি নিয়ে আরও অনেক গবেষণা করার সুযোগ আছে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ড. এম. আফজাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের কিছু প্রজাতির সি উইডে প্রচুর প্রোটিন আছ যা ফিস ফিড হিসেবে আমদানি করা ফিস অয়েলের বিকল্প হতে পারে। আবার কিছু প্রজাতি অ্যানিমেল ফিডের মান বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হতে পারে। তিন ধরণের সি-উইডের মধ্যে সবুজটি সাধারণত খাবার বা সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। আর লালটি হাইড্রোকলয়েড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। আর বাদামি সি-উইড খাবার ও হাইড্রোকলয়েড উৎপাদন দুই কাজেই ব্যবহার হয়।হাইড্রোকলয়েড উৎপাদন সাধারণত শিল্প উৎপাদনে জলীয় কাঁচামাল হিসেবে কাজে লাগে। কসমেটিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এমন কিছু উপাদান পাওয়া যায় এমন সী-উইডও অনেক পাওয়া গেছে সমুদ্রে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার শাসনামলে সমুদ্র সুরক্ষা আইন প্রনয়ণের মাধ্যমে প্রথম এই ব্লু ইকোনোমি এর ভিত্তি স্থাপন করেন। বর্তমানে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর নেতৃত্বে সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বিরোধ মীমাংসার পর বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকার মালিকানা পেয়েছে বাংলাদেশ।
ড. আফজাল বলেন, এই সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশ অবস্থিত সব ধরণের প্রাণীজ ও অপ্রাণীজ সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ফলে এই এলাকায় মৎস্য আহরণ ও সমুদ্রের তলদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে।সমুদ্রে ও তলদেশে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদ আহরণের নীতি নিয়েছে বাংলাদেশ যাকে বলা হয় ‘ব্লু ইকোনমি’ বা সমুদ্র সম্পদ নির্ভর অর্থনীতি। এই নীতি অর্জিত হলে আমাদের টেকসই উন্নয়নের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে তা বাস্তবায়ন অনেকাংশে সম্ভব হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো.সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকীতে প্রথম বারের মতো ইউজিসি বঙ্গবন্ধুর নামে ফেলোশিপ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে কয়েকটি বিষয় নির্ধারণ করে সার্কুলার দেয়া হয়। অনেকেই আবেদন করেছেন তবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা এবং শর্তপূর্ণ না হওয়ায় আবেদন পত্র গ্রহণ করলেও তাদেরকে ফেলোশিপ দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রফেসর ড. আফজাল হোসেন ইউজিসি কর্তৃক প্রদত্ত সকল শর্ত পুরণ করায় সকলের সর্বসম্মতিক্রমে তাকে প্রথম বারের মতো এ ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। আজকে তার যে উপস্থাপনা শুনলাম এবং তার যে কার্যক্রম আমরা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে আমরা সঠিক মানুষকেই ফেলোশিপ দিয়েছি। আমাদের নির্বাচনে কোন ভুল হয়নি। তিনি যে যাত্রা শুরু করে দিয়ে গেলেন আমি আশাকরি সেটি আগামীর জন্য মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘বিশাল সমুদ্র অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে।’
সিউইডসসহ সমুদ্র সম্পদের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা প্রকল্পের বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তার নিরিখে যথাযথ অর্থায়ন করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রবন্ধ উপস্থাপনার পর প্রশ্নোত্তর পর্ব গ্রহণ করা হয়। এতে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ.কে.এম জাকির হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিজিই এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম, সোনিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েত উদ্দিন কায়সার খান, টিএমএসএস এর পরিচালক হোসনে আরা খাতুনসহ অনেকেই অংশগ্রহণ করেন। তারা প্রফেসর আফজাল হোসেনের গবেষণা কর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আগামীতেও এধরনের কার্যক্রম চলমান রাখার অনুরোধ জানান।
সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।