ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম : কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। চলছে ‘ফিনিশিং ওয়ার্ক’। এখন অপেক্ষা শুধু উদ্বোধনের।
বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আগামী সেপ্টেম্বরে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মাল্টিলেন টানেলটি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরকে আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে সরাসরি কক্সবাজারকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ জানান, আমরা সময়মতো টানেলটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় এবং আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করছি। টানেলের ৯৭.২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করেছি। এখন টানেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিরাপত্তা কাজ চলছে। প্রকল্পের বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ক্রস প্যাসেজ ও টোল প্লাজার নির্মাণকাজও প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। টানেলের যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক ও সিভিল ওয়ার্ক চলছে এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
জানা গেছে, নির্মাণাধীন টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। এ ছাড়া ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ সড়কের পাশাপাশি একটি ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ রয়েছে, যা মূল শহর, বন্দর ও নদীর পশ্চিম দিককে এর পূর্ব দিকের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
নদীর নিচ দিয়ে এই ধরনের টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, এই টানেল দিয়ে যানবাহন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য টানেলটি বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। বাকি অর্থ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে সুদে এই ঋণ দিয়েছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ২০১৫ সালের নভেম্বরে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মাল্টিলেন রোড টানেল প্রকল্পটি অনুমোদন করে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে খরচ বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা করা হয় এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সংশোধিত বাজেটে, প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১৬৪ কোটি টাকা।
টানেল নির্মাণের আগে ২০১৩ সালে পরিচালিত জরিপ অনুসারে, দিনে প্রায় ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি চলতে পারবে। ২০২৫ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন যাতায়াত করতে পারবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের প্রথম টানেলটি এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করবে। টানেলটি চালু হলে এটি দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।