জাতিসংঘের তথ্য মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ৩০০ মানুষ বজ্রপাতে মারা যায়। সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে মারা যায় মাত্র ২০ জন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বজ্রপাতের অন্যতম হটস্পট। আর সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সিলেটে। সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে, বা বলা যায় বৈশাখে দেখা যায় বজ্রপাত।
সে জন্য স্থির তড়িৎ সম্পর্কে জানতে হবে। তার আগে জানতে হবে চার্জ সম্পর্কে। নিশ্চয়ই জানেন, সব বস্তু অসংখ্য ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি। এর নাম পরমাণু। প্রতিটি পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস। এর ভেতরে থাকে প্রোটন ও নিউট্রন। এদের ভর প্রায় সমান। প্রোটন ধনাত্মক আধানযুক্ত, আর নিউট্রন নিরপেক্ষ। মানে এর কোনো আধান বা চার্জ নেই। আর নিউক্লিয়াসের চারপাশে অবিরত ঘুরতে থাকে একটি কণা—ইলেকট্রন।
এটি ঋণাত্মক আধানযুক্ত। স্বাভাবিক অবস্থায় পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটন সংখ্যা সমান থাকে। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় পরমাণু হয় তড়িৎ নিরপেক্ষ। তবে বেশির ভাগ পরমাণুই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইলেকট্রনের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। তাই দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে এলে যে বস্তুর ইলেকট্রন আসক্তি বেশি, সে অন্য বস্তু থেকে মুক্ত ইলেকট্রন সংগ্রহ করে। ফলে ঋণাত্মক আধান প্রাপ্ত হয়। আর যে বস্তু থেকে ইলেকট্রন চলে আসে, সেটি হয় ধনাত্মক আধান যুক্ত। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।
জারণ-বিজারণ সম্পর্কে সবারই হয়তো খানিকটা ধারণা আছে। কোনো ধাতুর সঙ্গে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াই জারণ। আয়নিত বাতাস বা প্লাজমা পরিবাহী হওয়ায় এতে প্রবল ধাতব বৈশিষ্ট্য থাকে। তাই বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে প্লাজমার বিক্রিয়ায় বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়।
নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, তারে তারে স্পর্শ করলে আগুনের স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়। কারণ, তারের মধ্যে একটি ধনাত্মক ও একটি ঋণাত্মক তার থাকে। এই তার দুটি কোনো কারণে স্পর্শ করলে সেখানে আগুন ধরে যায়। একই ব্যাপার ঘটে মেঘের মধ্যে। মেঘে ঋণাত্মক চার্জ ও ধনাত্মক চার্জ মিলে গেলে আলো বা স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়। এটাকে আমরা আলোর ঝলক হিসাবে দেখি।
পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে কোথাও না কোথাও ১০০ বজ্রপাত হয়। ফলে বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচা একটু কঠিনই বটে। তবে সতর্ক থাকলে মৃত্যুহার কমানো যায়। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে যা করবেন:
১. বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে বা খোলা স্থানে দাঁড়াবেন না। গাছের নিচেও আশ্রয় নেওয়া উচিৎ নয়। কারণ খোলা স্থানে গাছের ওপর বজ্রপাত বেশি হয়। এর একটা কারণ আছে। গাছ মাটি বা ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে যুক্ত। বজ্রপাতের সময় ভূপৃষ্ঠে যে ধনাত্মক চার্জ আবিষ্ট হয়, তা ভূপৃষ্ঠ থেকে মেঘের ঋণাত্মক চার্জের আকর্ষণে গাছের মাথায় চলে যায়। ফলে বড় গাছের মাথা মেঘের কাছাকাছি থাকে। তাই বড় গাছে বা টাওয়ারের ওপর বেশি বজ্রপাত হয়।
২. পানির কাছে যাওয়া যাবে না। কারণ পানি বিদ্যুৎ সুপরিবাহী।
৩. মোটর সাইকেল বা সাইকেলে থাকলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে।
৪. বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যায়। তবে ল্যান্ড ফোন খুব বিপদজনক। কারণ এটি তার দিয়ে যুক্ত থাকে।
৫. বাড়ির সব ইলেকট্রিক জিনিস, যেমন টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, এসি ইত্যাদির প্লাগ খুলে রাখতে হবে।
৬. ফাঁকা মাঠে থাকলে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে পড়ুন। তবে মাটিতে শুয়ে পড়বেন না।
সম্ভব হলে বজ্রপাতের সময় বিল্ডিংয়ে থাকা ভালো। কারণ, বিল্ডিংয়ে থাকে লোহার রড। এগুলো বিদ্যুৎ পরিবাহী। ফলে পাকা বাড়িতে বজ্রপাত হলে মেঘ থেকে ইলেকট্রন লোহার রডের ভেতর দিয়ে মাটিতে চলে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।