জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে। নির্মাণাধীন ও চালু মিলিয়ে কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াচ্ছে ১১ হাজার ৩২৯ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে বছরে মোট কয়লার প্রয়োজন হবে ৩৩.৬ মিলিয়ন টন। বড়পুকুরিয়া থেকে বছরে মাত্র ১ মিলিয়ন কয়লা তোলা হয়। নতুন খনি চালু না হলে চাহিদার প্রায় পুরো কয়লা আমাদনি করতে হবে। এতে খরচ হবে ৬ বিলিয়ন ডলার।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের জ্বালানি দিন দিন আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে। এতে বাড়ছে অর্থনীতির ওপর চাপ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট। ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। তাই সরকার দেশীয় জ্বালানি উত্তোলন ও অনুসন্ধানে জোর দিয়েছে বলে সংবাদ করেছে দৈনিক সমকাল।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের কয়লা খনিগুলো নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। দেশের পাঁচ কয়লা খনির মধ্যে বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতি, খালাসপীর ও দীঘিপাড়ায় ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে এবং জামালগঞ্জে কোল গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে খনি থেকে কয়লা তোলার পদ্ধতি নিয়ে চলছে বিতর্ক। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলন হয়। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। ২০০৬ সালের ওই আন্দোলনের পর দেশীয় খনি থেকে কয়লা তোলার বিষয়টি ঝুলে যায়।
কয়লা উত্তোলনে বিরোধিতাকারী পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদের ভাষ্য, খনির কারণে এলাকার কৃষিজমি ধ্বংস, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা নষ্ট ও পরিবেশ দূষিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময় বলেছেন, কৃষিজমির ক্ষতি করে কয়লা তোলা হবে না। এ জন্য জ্বালানি বিভাগ বিশদ জরিপ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাবনা নিয়ে যাচ্ছে। কীভাবে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা করা হবে, স্থানীয়দের পুনর্বাসন, উত্তোলন শেষে ভূমিকে আবার চাষযোগ্য করে তোলাসহ সার্বিক বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সম্প্রতি হাইড্রোকার্বন ইউনিট দেশীয় কয়লার ওপর একটি প্রস্তাবনা জ্বালানি বিভাগে উপস্থাপন করে। এতে বলা হয়, দেশে জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। গ্যাসের মজুত কমছে। ফলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর ওপর চাপ বাড়বে। কেন্দ্রগুলোর চাহিদা অনুসারে কয়লা আমদানি করতে হলে আগামীতে বছরে ৬ বিলিয়ন ডলার লাগবে।
বর্তমানে ডলার সংকটে জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। কয়লা সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন প্রায় বন্ধ ছিল। দেশীয় কয়লার নিশ্চিয়তা পেলে ডলারের ওপর চাপ কমবে, জ্বালানি নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নকারী জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার এক উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কয়লা মজুতের পরিমাণ ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন টন, যা ২০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমান। ১০ শতাংশ তোলা গেলে ২০ টিসিএফ পাওয়া যাবে। অভ্যন্তরীণ কয়লা দিতে পারে বহুমুখী সুবিধা। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণ ও আমদানিনির্ভরতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, নতুন খনি থেকে কয়লা তোলার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জামালগঞ্জে কোল গ্যাসিফিকেশন, বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত খনি ও দীঘিপাড়ায় কয়লা তোলা নিয়ে জরিপ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি পূর্ণাঙ্গ ফলাফল উপস্থাপন করা হবে।
তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এর ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। পরিবেশের ক্ষতি তো হচ্ছেই, অর্থনীতিও চাপে পড়েছে। কয়লা তোলার উদ্যোগ নেওয়া হলে তা হবে আরও সর্বানাশা সিদ্ধান্ত। স্থানীয়রা নিজেদের রক্ষায় জীবন দিয়েছিল। তাই সরকার এই হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবে না বলে তিনি আশা করেন।
ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, কয়লা তোলার বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্তে আসা দরকার ছিল। কারণ কয়লার চাহিদা বেড়েছে, আরও বাড়বে। পুরোটা আমদানিনির্ভর হলে জ্বালানি নিরাপত্তা থাকবে না। তিনি বলেন, দেশে আসলে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যাবে না। ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে যতটুকু করা যায়, সেদিকে এগোতে হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নিতে সরকার অনেক দেরি করে ফেলছে। কয়লা খনির উন্নয়নে বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন বিনিয়োগ করছে না। তবে অনেক কোল কোম্পানি নিজেরা বিনিয়োগ করবে। এ জন্য ভালো নেগোশিয়েশন করতে হবে। আগে সরকার শক্তিশালী অবস্থায় ছিল। এখন সরকার এগিয়ে গেলে কোম্পানিগুলো সে সুযোগ নেবে। তার পরও উদ্যোগ দরকার। তবে সবার আগে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জরিপ করতে হবে। ফল ইতিবাচক হলেই কয়লা তোলা উচিত।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কয়লা তোলা হবে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেই। স্থানীয়দের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে কয়লার খনি হলে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন কমবে। বিপরীতে আগামীতে বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার কয়লা আমদানি করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।