প্রতি-পদক্ষেপে ‘গণবদলি’ ও ‘গণশোকজের’ চাপে অবরুদ্ধ আন্দোলন। অবশেষে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।

‘গণবদলি’ ও ‘গণশোকজের’ মতো পরিস্থিতির মুখে সাময়িকভাবে কর্মসূচি স্থগিত করে আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে বার্ষিক পরীক্ষায় ফিরছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্ধারিত নিয়মেই চলবে বার্ষিক পরীক্ষার কার্যক্রম, এবং এতে অংশ নেবেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
গতকাল শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মো. শামছুদ্দিন মাসুদ। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও অভিভাবকদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই সঙ্গে যেভাবে শিক্ষকরা গণহারে শোকজ ও বদলির মাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষার পর আবার নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বানে ২৭ নভেম্বর সহকারী শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেন। পরবর্তীতে ১ ডিসেম্বর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন এবং ২ ডিসেম্বর থেকে বিদ্যালয় বন্ধ রেখে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চালু হয়। তবে ৪ ডিসেম্বর একযোগে ৪২ জন শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় প্রশাসনিক বদলি করা হলে আন্দোলনের ভেতরে চাপ বাড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করে পরীক্ষায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু বিদ্যালয়ে দুই থেকে তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে—কোথাও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায়, আবার কোথাও অভিভাবকদের উদ্যোগে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রধান শিক্ষকরা। তবে সারাদেশের ৬৫ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৪২ হাজার বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ায় অধিকাংশ স্থানে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এতে কিছু বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হলেও অন্যগুলোতে হয়নি। ফলে যেসব বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়েছে, সেসবের প্রশ্নপত্র অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে প্রশ্নপত্র মিল নিয়ে অভিভাবকসহ অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও কয়েকটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয় নিজস্ব প্রশ্নপত্র তৈরি করে—সে ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র মিল হওয়ার কথা নয়। তবে যেসব উপজেলায় কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্নপত্র তৈরি ও মডারেশন করা হয়, সেখানে মিল থাকতে পারে। এমন উপজেলা হলে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা না নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে পড়ছে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী। শিক্ষক সংখ্যা তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি, যাদের বেশিরভাগই সহকারী শিক্ষক।
বর্তমানে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে আছেন—এ নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করে গ্রেড উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



