‘সাকিব… খেলবে টাইগার, জিতবে টাইগার’। রীতিমতো বাঘের গর্জন। লাইফবয়ের বিজ্ঞাপনটি আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন। আর এই বিজ্ঞাপন বদলে দিয়েছে ছোট্ট আয়াজের জীবন। পাঁচ বছর বয়সী ছেলেটি এখন রীতিমতো তারকা। রাস্তায় বেরুলেই তাকে নিয়ে সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে।
এই ঈদে গিয়েছিল দাদু বাড়ি নরসিংদীতে।ঈদের পরদিন আয়োজন করা হয় প্রীতি ফুটবল ম্যাচের। কিন্তু খেলা শুরু হতে বিলম্ব হয় আধঘণ্টা। কারণ আয়াজ। আয়াজের বাবা বলেন, খেলা দেখতে গিয়ে রীতিমতো বিপদেই পড়ে গিয়েছিলাম। সবাই আয়াজকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কয়েকশ’ মানুষ হাজার খানিক সেলফি তোলে। সবাই এমনভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল তার ওপর যে ফুটবল কমিটির লোকদের সহায়তায় সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হয়।
এখন চলছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বিশ্বকাপ- ২০১৯। ক্রিকেট পাগল বাংলাদেশ। ক্রিকেট পাগল বাঙ্গালি। আর ক্রিকেট প্রেমীদের মাঝে স্লোগানে পরিণত আয়াজের বিজ্ঞাপনের সেই শ্লোগান- খেলবে টাইগার, জিতবে টাইগার। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বকাপের সময় উদযাপিত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর। বাংলাদেশের লাল-সবুজের জার্সি ছিল অনেকের ঈদ শপিংয়ের তালিকায়। সেই জার্সির ছবি শোভা পায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর অধিকাংশের ক্যাপশন ‘খেলবে টাইগার, জিতবে টাইগার’।
পুরো নাম আজফার আয়াজ। নার্সারীর শিক্ষার্থী। রাজধানীর ন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র। আয়াজ ১৮টি বিজ্ঞাপণে অভিনয় করেছে। তবে তার জনপ্রিয়তা এসেছে এই বিজ্ঞাপণটি দিয়ে। যে বিজ্ঞাপণে অংশ নিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আর সঙ্গে ছিলেন তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন ও সাব্বির রহমান। তারকায় ঠাসা বিজ্ঞাপণ হলেও নজর কেড়েছে ছোট্ট আয়াজ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলছে আর আমুদে সমর্থকরা টিভি সেটের সামনে। ওভারের ফাঁকে ফাঁকে ‘খেলবে টাইগার, জিতবে টাইগার’-লাইফবয় সাবানের বিজ্ঞাপণটি দেখলেই যেন খেলা দেখার উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ।
আয়াজের শুরুটা বেশ নাটকীয়। তখন আয়াজের বয়স মাত্র ২ বছর। বাবা-মা’র সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন বনানী ব্রিজে। অলস বিকেলের স্নিগ্ধ আলোয় একটু সময় কাটানোই ছিলো উদ্দেশ্য। চঞ্চল আয়াজ ছোটাছুটি আর মিষ্টি কথায় মাতিয়ে রেখেছিলো চারপাশ। তার দুরন্তপনা নজরকাড়ে এক বিজ্ঞাপণ নির্মাতার। তার বাবা-মা’কে দেন প্রস্তাব। এই শুরু। এরপর কেটে গেছে তিন বছর। গ্রামীন ফোন, এপেক্স, বোম্বে চানাচুর, দুরন্ত বাই সাইকেল, ভিশন এলইডি টেলিভিশনসহ করেছে ১৮টি বিজ্ঞাপণে কাজ। এছাড়াও আয়াজ মডেল হিসেবে কাজ করেছে দৈনিক প্রথম আলো’র বেশ কয়েকটি সংবাদে।
আয়াজের বাবা আশরাফুল আলম। টিএন্ডটি স্কুল এন্ড কলেজে ইংরেজির শিক্ষক। মা সালমা আলী একজন গৃহিণী। এই দম্পতীর একমাত্র সন্তান আয়াজ। দুরন্ত আয়াজকে ঘিরেই তাদের সংসার। তাদের স্বপ্ন। আয়াজের উচ্ছ্বলতা, ছোটাছুটি সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখলেও কাজের ব্যাপারে বেশ সচেতন। সারারাত টানা শুটিং থাকলেও কোন আপত্তি করে না আয়াজ। থাকে না ক্লান্তি। আয়াজ কাজ করেছে প্রায় সকল বাংলাদেশি জনপ্রিয় ক্রিকেটারের সঙ্গে। আবার কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ব্যাটসম্যান কাইরান পোলার্ডের সঙ্গেও।
তবে সবথেকে তার মনে ধরেছে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। আয়াজ বলে, ম্যাশ মামা অনেক আদর করেছে। মামা শুধু কাতু-কুতু দেয়। আয়াজের নানা বাড়ি নড়াইলে। মাশরাফির বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। সেই সূত্রে মামা বলে সম্বোধন করে। আয়াজের মা বলেন, শুটিংয়ের সময় মাশরাফি সকলকে পরিচয় করিয়ে দেয় তার ভাগ্নে হিসেবে। আর আয়াজ বলে, ম্যাশ মামার মোবাইল ফোনে গেইম আছে। মামার মোবাইলে গেইম খেলেছি। মাশরাফির আদরে মুগ্ধ হলেও তার প্রিয় খেলোয়াড় সাকিব। হতে চায় সে সাকিবের মতো খেলোয়াড়।
আয়াজ এখন টাইগার আয়াজ নামে পরিচিত। স্কুলেও ব্যাপক পরিচিত সে। আয়াজ বলে, একদিন ক্লাস হচ্ছিল হেড স্যার আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। সেলফি তুলে। শুধু স্যার নয় আমার সঙ্গে স্কুলের সবাই সেলফি তুলে। টাইগার আয়াজ, টাইগার আয়াজ বলে ডাকে।
আয়াজরা থাকে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায়। তার মা বলেন, বাড়ির নিরপাত্তাকর্মী কাকে যেন বলেছেন আয়াজের বাসায় কাজ করে। কিন্তু তিনি মানতে নারাজ। পরে আয়াজের সঙ্গে ছবি তুলে লাগিয়ে রেখেছেন ঘরে। তিনি আরো বলেন, কদিন আগে খেতে গিয়েছিলাম একটি রেস্তোরায়। সবাই আয়াজের সঙ্গে সেলফি নিতে শুরু করে। প্রায় পুরো রেস্টুরেন্টের সবাই উঠে আসে আয়াজের সঙ্গে সেলফি নিতে।
আয়াজকে পরিচিতি এনে দেয়া লাইফবয়ের বিজ্ঞাপণটিতে ছিলো একটি হাঁচির দৃশ্য। শুটংয়ে সেই হাঁচি তাকে দিতে হয়েছে প্রায় ১০ বারের মতো। আয়াজ বলে, আমার হাঁচি ওইসময় আসছিলো না। তখন সাকিব মামা বলে, আসো তোমার নাকে সুরসুরি দেই। তাহলে হাঁচি আসবে। এই বলে হাসিতে লুটিয়ে পড়ে আয়াজ।
ঈদে যমুনা ফিউচার পার্কে শপিং করতে গিয়েছিলো। সেখানে হোডিংয়ে বড় করে সাটানো এপেক্সের বিজ্ঞাপণ। অনেক বড় আয়াজের ছবি। আয়াজ বলে, আমি আমার ছবির সঙ্গে ছবি তুলেছি। ছবি তোলার পর সবাই আমার সঙ্গে ছবি তুলতে শুরু করে। আয়াজের বাবা বলেন, সবাই এমনভাবে ছবি তুলতে আসলো আমরা শপিং না করেই বলতে পারেন পালিয়ে যাই সেখান থেকে।
টাইগার আয়াজ ক্রিকেটের বিশেষ ভক্ত। বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে জার্সি পড়ে খেলা দেখে আয়াজ। তার কথায় বাংলাদেশ জিতবে সবগুলো ম্যাচ। মটু-পাতলু আর মোবাইল ফোনে স্পাইডার ম্যান গেইম খেলা তার নেশা কিন্তু বাংলাদেশের খেলা হলেই সব বাদ।
আয়াজের বিকেল বেলাটা কাটে বাড়ির ছাদে। বিশাল ছাদ, সবুজে ঘেরা। সেখানে ক্রিকেট খেলে সময় কাটে তার। ব্যাট বলের খেলা ক্রিকেট হলেও ব্যাট করেতেই স্বাচ্ছন্দ্য আয়াজের। তার জীবনের লক্ষ্য স্পাইডারম্যান হওয়া। স্পাইডারম্যান হয়ে বিপদে পড়া লোকদের বাঁচানো। আর দ্বিতীয় ইচ্ছা সাকিবের মতো ব্যাটসম্যান হওয়া। কিন্তু সাকিবতো ব্যাটের সঙ্গে বোলিংটাও করে? তখন আয়াজ বলে, আমি শুধু সাকিবের মতো ব্যাট করব। বল করবো না। বল করতে আমার ভালো লাগে না।
আয়াজের মা বলেন, আয়াজ তিন বছর ধরে বিজ্ঞাপনে কাজ করলেও চিনতো না তাকে কেউ। এমনকি এই বাড়ির অন্য ফ্লাটের প্রতিবেশিরাও না। কিন্তু হঠাৎ এই বিজ্ঞাপনের পর সবাই আয়াজকে চিনতে শুরু করে। আমার নাম হয়ে গেছে টাইগার আয়াজের মা। বাড়ির বাইরে আয়াজকে নিয়ে গেলে কেউ না কেউ চিনে ফেলেই। সেলফির বায়না ধরে। ভালোই লাগে। কিন্তু মাঝে মাঝে আয়াজ বিরক্ত হয়।
বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে আয়াজের পারিশ্রমিকের টাকা থেকে দাদা-দাদি, নানা-নানিকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন উপহার কেনার জন্য। ছোট্ট আয়াজ আমাদের বাবা-মাকে উপহার দেয়। এটা ভাবতেই ভালো লাগে। গর্বে বুকটা ভরে যায় বলেন আয়াজের বাবা। সৌজন্যেঃ মানবজমিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।