নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর গাজীপুরের শ্রীপুরে সংরক্ষিত ঘন বনাঞ্চলের মাঝখানে গড়ে তোলা হচ্ছে রিসোর্ট। বন আইন অমান্য করে কেবল সীমানা নির্ধারণের আবেদন করেই নিয়মবহির্ভূতভাবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ বন কর্মকর্তাদের।
ঘন শাল-গজারি বনের চারপাশে দেওয়া হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। নিজের মালিকানাধীন জমি থাকলেও বন বিভাগের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণ না করে এ ধরনের কটেজ নির্মাণ নিয়মবহির্ভূত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিট কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম । রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, চারপাশে বন বিভাগের জমি থাকলেও রিসোর্টের জায়গা তাদের। সীমানা নির্ধারণের আবেদন করে কাজ চালানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুরে রেঞ্জের বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর বিটের আওতাধীন ঘন শাল ও গজারি বনের মাঝখানে তৈরি হচ্ছে রেইন ফরেস্ট ইকো রিসোর্ট নামের রিসোর্টটি। রিসোর্টের ভেতরে ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় কটেজ, সুইমিংপুল, শিশুপার্ক। বনের চারপাশ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী কাঁটাতারের সীমানাপ্রাচীর। রিসোর্টে যাওয়ার জন্য সংরক্ষিত বনের ভেতরের রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। রিসোর্ট নির্মাণের মালামাল গাড়িতে করে আনার সময় ভেঙে নষ্ট হয়েছে সংরক্ষিত বনের অনেক গাছপালা।
শ্রীপুর রেঞ্জের অধীনে সাতখামাইর বিট অফিসের বিট কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০২১ সালে রেইন ফরেস্ট ইকো রিসোর্ট নামে একটি রিসোর্টের জন্য টিপু সুলতান নামে জনৈক এক ব্যক্তি ৪.৭৪ একর জমির সীমানা নির্ধারণের আবেদন করেন। আবেদনটি করেই রিসোর্টের নির্মাণকাজ শুরু করেন, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। চারপাশে আমাদের সংরক্ষিত বনভূমি থাকার কারণে এই সীমানা নির্ধারণের অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বন বিভাগের।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সীমানা নির্ধারণের অনুমতি দেন না। এ ছাড়া সীমানা নির্ধারণ ছাড়া বনভূমি ঘেঁষে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে করছে। ইতিমধ্যে আপনাদের মাধ্যমে আমাদের নজরে এসেছে বিষয়টি। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাপজোখ করে অবৈধ সীমানাপ্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। পাশাপাশি নির্মাণকাজ বন্ধ করব। যদিও তাদের মালিকানা জমিতে রিসোর্টের কাজ করছে, কিন্তু রিসোর্টের চারপাশে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমি। সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে যে রাস্তা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করছে, তা দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
রেইন ফরেস্ট ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মো. আশিক মোবাইল ফোনে বলেন, ‘রেইন ফরেস্ট ইকো রিসোর্টের মালিক টিপু সুলতান নামে এক ব্যক্তি। আমি রিসোর্টের সার্বিক বিষয়টি দেখভাল করে থাকি। রিসোর্ট নির্মাণের জায়গা আমাদের সম্পূর্ণ মালিকানা জমি। সীমানা নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের কাছে আবেদন করা হয়েছে। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ বনভূমির রাস্তা ব্যবহার করবে না। আমরা আমাদের জমিতে কটেজ নির্মাণ করছি। আমরা বন বিভাগের এক শতাংশ জমি ব্যবহার করছি না।’
শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, চারপাশে বনভূমি, ভেতরে রিসোর্ট নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাকে। চারপাশে বনভূমি, মাঝখানে মালিকানা জমির সীমানা নির্ধারণের আবেদন করেই সেখানে রিসোর্টের কাজ শুরু করা কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না। চারপাশে যেহেতু বনভূমি, সে জন্য বন বিভাগ সীমানা নির্ধারণের অনুমতি দেবে না। সংরক্ষিত বনভূমির ভেতর দিয়ে কোনো ধরনের রাস্তা ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ সীমানাপ্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel