জুমবাংলা ডেস্ক : বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা, এরপর বিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একসঙ্গে পথচলা ও বিসিএসের স্বপ্নজয় সত্যিই রোমাঞ্চকর বিষয়। ৪১তম বিসিএস ছিল আমাদের দুজনেরই প্রথম বিসিএস। খারাপ সময়ে দুজন দুজনকে সাহস জোগাতাম। বিশ্বাস করতাম, ভালো সময় আসবে। এভাবেই নিজেদের প্রথম বিসিএসে সাফল্য অর্জনের গল্প শুনিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থী দম্পতি সুমাইয়া ফারজানা হক (ববি) ও মো. রবিউল ইসলাম।
সম্প্রতি প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসে সুমাইয়া ফারজানা হক (ববি) প্রশাসন ক্যাডার ও মো. রবিউল ইসলাম পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার পেয়েছেন। এমন সাফল্যে উভয়ের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণামূলক ভূমিকা ছিল অনন্য। তাঁদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেছেন ইফতে খারুল ইসলাম সৈকত।
সুমাইয়া ফারজানা হক (ববি) বলেন, ‘আমরা দুজনেই একই অনুষদের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালে আমাদের বন্ধুত্ব শুরু হলেও ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিবার মেনে নেবে কি না, কবে দুজন প্রতিষ্ঠিত হব, কবে চাকরি হবে, পরিবারকে কীভাবে জানাব—এসব বিষয় নিয়ে অনেক সংশয়ে ছিলাম। এই ভয়ের মাত্রা আরও বেড়ে যায় যখন ২০২০ সালে করোনায় আমি যখন বাসায় চলে আসি। একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় বাবা কারণ জানতে চান, তখন আমাদের সম্পর্কের কথা বাসায় জানাই। দুজনেই বেকার ও সমবয়সী হওয়ায় প্রথমে কেউ রাজি হতে চাননি। সম্পর্কের ব্যাপারে আম্মু আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। অবশেষে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা বিবাহবন্ধনে
আবদ্ধ হই।
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘২০১৯ সালের মার্চে স্নাতক শেষ করার পর ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের প্রস্তুতি শুরু। শুরুতে আমরা সিলেবাস ও বিগত প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে নিজেদের প্রস্তুতি আরম্ভ করি। দৈনিক রুটিনমাফিক পড়া শেষ করার চেষ্টা করি। পড়া শেষে উভয়েই একে অপরকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতাম। নিজেদের দুর্বলতাগুলো একে অপরের কাছ থেকে বুঝে নিতাম। করোনার সময়ে উভয়েই অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়া শুরু করি। পরীক্ষায় হওয়া ভুলগুলো সব সময় নোট খাতায় লিখে রাখতাম। একসঙ্গে পত্রিকা পড়া, দৈনিক অনুবাদ চর্চা করার পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করতাম। এভাবে ৪১তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় দুজনেই উত্তীর্ণ হই।’
ববি বলেন, ‘প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মাত্র তিন মাস সময় পেয়েছিলাম। তাই আরও সুপরিকল্পিতভাবে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। অল্প সময় থাকায় সব বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো আগে শেষ করার চেষ্টা করেছি। সরকারি চাকরির প্রতি দুজনেরই বেশ আগ্রহ থাকায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ২০২২ সালের আগস্টে ঢাকায় এসে টিউশন শুরু করি। বাবার বাসার পাশেই বাসা থাকায় আম্মু রান্না করে দিতেন, যাতে আমরা পড়াশোনায় আরও বেশি সময় দিতে পারি।
২০২২ সালের অক্টোবরে জনতা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে চাকরিতে যোগ দিই। আমার স্বামী টিউশনের পাশাপাশি চাকরির পড়াশোনা গুছিয়ে রাখতেন। রাতে এসে নিয়মিত একসঙ্গে পড়াশোনা করতাম। পরে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আমার স্বামী রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ও জনতা ব্যাংকে সুপারিশপ্রাপ্ত হলে জনতা ব্যাংকে যোগ দেন।’
নিজেদের বিসিএস জয়কে স্বপ্নের মতো আখ্যা দিয়ে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নামাজ পড়তাম আর বিশ্বাস করতাম, আল্লাহ সঠিক সময়ে সঠিক প্রতিদান দেবেন। খারাপ সময়ে একে অপরকে সাহস জোগাতাম ভালো সময়ের অপেক্ষায়।
এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, দুজনেই পেয়ে যাই কাঙ্ক্ষিত চাকরির সুযোগ। ৪১তম বিসিএস ছিল আমাদের দুজনেরই প্রথম বিসিএস। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার দিনগুলো ছিল স্বপ্নের মতো।
এ জন্য সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তাআলার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, যিনি আমাদের এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর তৌফিক দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আমাদের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আমাদের স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বন্ধুবান্ধবদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
বিসিএস প্রত্যাশীদের উদ্দেশে এই ক্যাডার দম্পতির পরামর্শ হলো—প্রিলিমিনারি ধাপটিতে সফলতা অর্জনের জন্য বিগত বিসিএসসহ অন্যান্য পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান, তথ্যবহুল লিখিত
উপস্থাপনা, গণিত, মানসিক দক্ষতা ও ইংরেজির ওপর দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ এবং মৌখিক পরীক্ষায় সাবলীল উপস্থাপনা ও মার্জিত আচরণ কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।