আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিজের সহজ-সরল মুখাবয়বকে কাজে লাগিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে পাতাতেন বন্ধুত্ব। বিশ্বস্ততা অর্জনের পর তাদের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দিতেন ভয়ঙ্কর বিষ সায়ানাইড। এভাবে একজন-দুজন নয়, অন্তত ১৪ জনকে নিজের শিকারে পরিণত করেছেন। এমনই ভয়ানক এক সিরিয়াল কিলারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হয়ে গেল সম্প্রতি।
সারারাত রংসিউথাপর্ন নামে ওই নারী সিরিয়াল কিলারকে গত বুধবার (২০ নভেম্বর) মৃত্যুদণ্ডাদেশ শুনিয়েছেন থাইল্যান্ডের একটি আদালত। খবর বিবিসির
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পর খাবারের সঙ্গে ভয়ঙ্কর বিষ সায়ানাইড মিশিয়ে হত্যা করতেন এই থাই নারী। এভাবে একে একে অন্তত ১৪ জনকে হত্যা করেছেন তিনি।
আদালতের নথি অনুযায়ী, ওই থাই নারী খাবারে সায়ানাইড মিশিয়ে সম্প্রতি তার বান্ধবী সিরিপর্ন খানওংকে হত্যা করেন। এরপর সম্পদ লুট করেন, যার আর্থিক মূল্য মাত্র ৪ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলারের কিছু বেশি।
এই হত্যাকাণ্ডের পরই জড়িত সন্দেহে গত বছর এপ্রিল মাসে গ্রেপ্তার হন সারারাত রংসিউথাপর্ন। তার সাবেক স্বামী আবার পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। সারারাতের গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, বিচ্ছেদের পরও সাবেক স্বামীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল এবং তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
এ ঘটনায় থাইল্যান্ডজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিশেষ করে সায়ানাইড বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর বেশ কয়েকটি অমীমাংসিত মামলা নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়।
পুলিশ আগে বলেছিল, সিসিটিভি ফুটেজে অচেতন হয়ে পড়া এবং মারা যাওয়ার আগে সিরিপর্নকে সারারাতের সঙ্গে দেখা গেছে। ময়নাতদন্তে সিরিপর্নের শরীরে সায়ানাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বেশ কয়েকটি হত্যার ঘটনার সঙ্গে মিল পান। এসব হত্যার ঘটনায়ও হত্যার শিকার ব্যক্তি সারারাতের সঙ্গে খাবার বা পানীয় খেয়েছিলেন। এরপর মারা গেছেন।
সারারাত গ্রেপ্তার হওয়ার পর একজন নারী পুলিশের কাছে আসেন এবং অভিযোগ করেন, কয়েক বছর আগে তাকেও বিষপ্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন সারারাত। ২০২০ সালের ওই ঘটনায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে জীবন রক্ষা পেয়েছিল তার।
এদিকে ব্যাংককের আদালতে শুনানির সময় সারারাত সাক্ষ্য দেননি। আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ছাড়াও তিনি যেসব জিনিস চুরি করেছেন, সেগুলোর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
সারারাত তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং আপিল করার পরিকল্পনা করছেন।
সারারাতের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার পর আদালতে সিরিপর্নের মা কিয়াচানাসিরি মেয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তুমি ন্যায়বিচার পেয়েছ। এই পৃথিবীতে আজও ন্যায়বিচার আছে।’
প্রসঙ্গত, সায়ানাইড শরীরে প্রবেশ করলে তা অক্সিজেন কোষকে প্রভাবিত করে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন ওই ব্যক্তি। সায়ানাইডের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট এবং বমি হওয়া। এই বিষের ছোট্ট একটি ডোজও মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। আর পরিমাণ বেশি হলে মাত্র এক সেকেন্ডের মধ্যেই মৃত্যু ঘটাতে পারে।
থাইল্যান্ডে বিষাক্ত এই পদার্থ ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত। অনুমোদন ছাড়া কেউ এটি কাছে রাখলেই তার দুই বছরের জেল হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।