জুমবাংলা ডেস্ক : বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রতিদিন বেড়েই চলেছে বন্যার পানি। এ বছর প্রথমে ১০ জেলা কবলিত হলেও এখন ৩০ জেলা ছাড়িয়ে গেছে। দিন যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষ। কৃষকের ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে সর্বস্বান্ত প্রায়। ধ্বংস হচ্ছে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।
দেশের বন্যা পরিস্থিতি এবং মোকাবিলা সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়া হয় বিশিষ্টজনের কাছে। মতামত নিয়ে গ্রন্থনা করেছেন সায়েম সাবু।
সমাজ, মানুষ বিপন্নের পথে
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী; শিক্ষাবিদ ও গবেষক
বন্যার ভয়াবহতা আগেও ছিল। তখন রাষ্ট্র এগিয়ে আসত। সমাজের ধনীরাও এগিয়ে আসত। এখন রাষ্ট্র যেমন দায়সারা দায়িত্ব পালন করে, নাগরিক সমাজও আর এগিয়ে আসে না। এ চিত্র একটি সমাজের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গল হতে পারে না।
বাংলাদেশে প্রতিবার বন্যার পেছনেই ভারতের স্বেচ্ছাচারিতা দায়ী বলে আমি মনে করি। অন্য মৌসুমে পানি আটকে রেখে বাংলাদেশের নদীগুলো মেরে ফেলছে ভারত। অথচ বর্ষা এলেই ভারত অপরিকল্পিতভাবে পানি ছেড়ে দিয়ে কৃত্রিম বন্যা সৃষ্টি করছে। নদী ব্যবস্থা নিয়ে আমরা ভারতের সঙ্গে কোনো ফলপ্রসূ আলোচনায় যেতে পারিনি। এটিই হচ্ছে সরকারগুলোর দৈন্যতা।
আবার নদী খননেও সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। নদী, খাল, বিল সব দখল হয়ে গেল। অর্থহীন উন্নয়ন করে সরকার নিজেই পরিবেশবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। জবাবদিহিতা নেই।
আমরা বন্যা মোকাবিলা নিয়ে সংসদেও কোনো আওয়াজ দেখছি না। অথচ গরিব মানুষ হাহাকার করছে। সর্বত্রই মানুষ বিপন্নের পথে। খুন, ধর্ষণ, গুম। মানুষ প্রকাশ্যে কুপিয়ে মারছে। গণপিটুনি দিয়ে মারছে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি কোনো আস্থা নেই। বিশ্বাস নেই। সমাজ, মানুষ বিপন্নের পথে। মূলত ক্ষমতায়নে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকছে না বলেই বিপন্নের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। যে কান্না আমরা বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে আরও তীব্রভাবে শুনতে পাচ্ছি।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে নাগরিকদের দাঁড়ানো খুবই জরুরি
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ; অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার
বন্যার ওপর আসলে মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। গত ক’বছরে বড় ধরনের বন্যা আমরা দেখতে পাইনি। এবার যে বন্যা দেখা দিয়েছে, সেটা এখনও মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। এবার বন্যার পানি খুব বেশি, তাও বলা যাবে না। কিন্তু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটা তো অস্বীকার করা যাবে না।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় গরিব মানুষই। ঘর থাকে না, খাবার থাকে না। কৃষকের ক্ষতি আরও বেশি। ফসলি জমি তলিয়ে যায় বলে সর্বস্বান্ত কয় কৃষকরা। এ বিষয়ে সরকারকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে উপযুক্ত সহায়তা না দিলে অর্থনীতিতে চাপ পড়বে।
আগে বিপদে মানুষ অপরের পাশে দাঁড়াত। নাগরিক সমাজ এগিয়ে আসত। সমাজের ধনী ব্যক্তিরা গরিবদের সহায়তা করত। এখন সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। পাশের বাড়ির একজন না খেয়ে মরলেও খবর রাখে না। এটি মানবিক সমাজ নয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে নাগরিকদের দাঁড়ানো খুবই জরুরি।
ত্রাণ যথেষ্টই দেয়া হচ্ছে
রাশেদ খান মেনন; সভাপতি, ওয়ার্কার্স পার্টি
বন্যা বাংলাদেশের পরিবেশ-পরিস্থিতির অংশ বলে আমি মনে করি। আগের চেয়ে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। মানুষ নিজেরাই নানা উপায়ে বন্যা মোকাবিলা করছে। এবারও আমরা তাই দেখছি।
সরকার আগে থেকে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। বন্যা হতে পারে আমরা সে বার্তা আগেই পেয়েছিলাম। এ কারণে ক্ষতির পরিমাণটা কম হবে মনে করি। সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয় যে সহায়তা দিচ্ছে, তা যথেষ্ট। তবে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।
বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের জন্য গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। ত্রাণ নিয়ে যাতে কোনো অনিয়ম দেখা না দেয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বিপদগ্রস্ত মানুষ যেন সামান্য আনুকূল্য পেয়ে শক্ত অবস্থানে থাকতে পারে।
বন্যা মোকাবিলার জন্য আমাদের আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য নদী-খালে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে আমাদের ভারতের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। সূত্র- জাগো নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।