জুমবাংলা ডেস্ক : ভারত থেকে নেমে আসা তীব্র পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ভাষায় ‘ডাইক’ নামে পরিচিত বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জ পৌর শহর।
মঙ্গলবার (৩ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশল দীপক রঞ্জন দাশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে ৩ রাত জেগে পাহারা ও নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তারা। ডাইক রক্ষা করতে না পারায় প্রবল স্রোতে পানি ঢুকছে জনপদে। ফলে ক্রমেই প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক গ্রাম।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জকিগঞ্জ উপজেলার ৩টি স্থানে নদীর ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) ভেঙে হু হু করে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। ডাইক ভেঙে পড়ায় জকিগঞ্জের ২৫ থেকে ৩০টি স্থানে নদীর তীর প্লাবিত হয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে জকিগঞ্জ পৌরসভা, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও খলাছড়া ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী ২ থেকে ৩টি ইউনিয়নের ১৫ থেকে ২০টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, গোয়াইন ও লোভা নদীতে হু হু করে বাড়ছে পানি। ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত পার করছেন গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাবাসী।
এদিকে সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতা কিছুটা কমেছে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার রাত থেকে আগামী ২ থেকে ৩ দিন ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে।
যদিও একটু বৃষ্টি নামলেই সিলেট নগরবাসীর দুর্ভোগের সীমা থাকে না। জলাবদ্ধতার দেখা দেয় নগরীতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিলেট শহরের সুরমা নদীর পানি এখন বিপদসীমা ছু্ইঁ ছুঁই করছে। ফলে নগরবাসীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না।
তবে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মাঠে রয়েছেন। নগরীর খাল, নালা পরিষ্কার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নগরবাসীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কোনো কারণ নেই।
জানা যায়, রোববার রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রথমে ডাইক ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করে। এরপর সোমবার ভোরে বাখরশাল এবং সকাল ৮টায় খলাছড়া ইউনিয়নের লোহার মহল এলাকায় আরও একটি ডাইক ভেঙে যায়। এতে প্রবল স্রোতে একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হয়। এ ছাড়া জকিগঞ্জ পৌরশহরসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে কুশিয়ারা নদীর ডাইক উপচে পানি ঢুকছে। উপচে পড়া পানিতে তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জ পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র জকিগঞ্জ বাজার। টানা বৃষ্টিপাত ও কুশিয়ারা নদীর পাড় উপচে পড়া পানিতে জকিগঞ্জ শহর পরিণত হয়েছে এক বিশাল জলাধারে। হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে গেছে শহরের প্রধান সড়ক ও বাজার এলাকা। স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
জকিগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার ৮ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কুশিয়ারা নদীর ৩টি স্থানে ভেঙে গেছে এবং বেশ কিছু স্থান দিয়ে ডাইক উপচে পানি ঢুকছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রশাসন সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বন্যাকবলিত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশল দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সুরমা-কুশিয়ারার বেশ কয়েকটি স্থানে রোববার ফাটল দেখা দেয়। সোমবার ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। আমাদের লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। যেখানে ফাটল দেখা দিয়েছে, সেগুলো যাতে না ভাঙে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।