মেহজাবিন বশির : প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর জীবনে প্রেম আসাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে নতুন প্রজন্মের ছেলে–মেয়েদের মধ্যকার সম্পর্কেও পরিবর্তন আসছে অনেক। আগে বন্ধু–বান্ধবদের মাধ্যমে কারও সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরির একটা চল চালু ছিল বেশ। তবে হুটহাট ডেটিংয়ের বিষয়টি এখন বদলে যাচ্ছে। উল্টো নিজেকে ঠিকমতো বোঝার আগে সব ধরনের ডেটিং দূরে থাকার ট্রেন্ডও গড়ে উঠছে। এমনই একটি নতুন রীতি হলো ‘বয়সোবার’।
বিশোর্ধ্ব রাধিকা গুপ্ত (ছদ্মনাম) পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বয়সোবার ধারণার মতো করে তিনি বলছিলেন, “অতীতে আমি একাধিক ডেট করেছি, কিন্তু কারো সাথেই পরিণতি পর্যন্ত গড়ায়নি। তবে এসব যাত্রায় আমি নিজেকে জেনেছি। বুঝতে পেরেছি যে, আমি কতটা আবেগপ্রবণ এবং একটা সম্পর্কের ভাঙ্গন আমাকে কত কষ্ট দেয়! এখন তাই আমি যাবতীয় প্রেমের সম্পর্ক এবং ডেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। এখন বরং আমি নিজের ও নিজের ক্যারিয়ারের ওপর সমস্ত মনোযোগ দিতে চাই। ভুল মানুষের পেছনে সময় দেয়ার মতো সময় এই ক্ষুদ্র জীবনে নেই। যখন আমি নিজেকে পুরোপুরি বুঝে যাব, তখন একসাথে জীবন কাটানোর মতো মানুষও পেয়ে যাব।”
আশেপাশে তাকালে দেখবেন, আপনার চেনাজানা বা বন্ধুমহলে কিন্তু অনেকেই রাধিকার মতো করে ভাবেন। সুতরাং ‘বয়সোবার’ শব্দটা নতুন হলেও এর ধারণাটা সাম্প্রতিক নয়।
এক কথায় ‘বয়সোবার’ হল টক্সিক (বিষাক্ত) সম্পর্ক, পরিস্থিতি, মানুষ এবং ভালোবাসার জন্য বিশেষ কারো বৈধতা (ভ্যালিডেশন) খোঁজার চাপ থেকে মুক্ত হওয়া। বরং এটি মানুষকে একা থাকতে, নিজেকে আবিষ্কার করতে, অতীতের বিষাক্ত সম্পর্কের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এবং একান্ত নিজের সাথে সুখী হতে উৎসাহিত করে। দীর্ঘ এ প্রক্রিয়া শেষে অনেকেই শেষতক প্রকৃত প্রেমময় সঙ্গী খুঁজে পান।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের মতে, ‘বয়সোবার’ শব্দটি প্রথম প্রবর্তন করেন আমেরিকান কৌতুকাভিনেতা হোপ উডার্ড। সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম টিকটকে হোপ ঘোষণা দিয়েছেন, “কোনো ডেটিং অ্যাপ নয়, ডেট নয়, এমনকি কোনো প্রাক্তন অথবা সিচুয়েশনশিপও নয়-এসবই ২০২৪ সালের বয়সোবার নীতি। সারা জীবন নিজেকে আমি সিঙ্গেল হিসেবে দাবি করে এসেছি। কিন্তু যতক্ষণ তোমার মস্তিষ্কে অন্য কেউ চেপে আছে, ততোক্ষণ তুমি সিঙ্গেল নও।”
টিকটকে হোপ উডার্ডকে সমর্থন করে এই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়েছেন হাজারও তরুণ। একজন মন্তব্য করেছেন, “জীবনে এতগুলো ডেটের পর, আমি বাকি জীবন সিঙ্গেল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” আরেকজন লেখেন, “(এর মাধ্যমে) যে শান্তি অনুভূত হচ্ছে তা অবিশ্বাস্য।”
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, ‘বয়সোবার’ শুধু নারীদের জন্যই; আদতে এটি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যত সিঙ্গেল তরুণ-তরুণী আছেন, সবাইকেই ডেটিং থেকে বিরতি নেয়ার জন্য উৎসাহিত করে বয়সোবার। শুধু কি প্রেম! সাবেক প্রেমিক, বিষাক্ত সম্পর্ক, হুক-আপ বা প্রতিশ্রুতিহীন নিছক যৌন ঘনিষ্ঠতা থেকেও সরে আসার প্রস্তাব দেয় এই ধারণা।
বয়সোবার বেছে নেওয়ার সময়টুকুতে মানুষ নিজের ভেতরটাকে আরও ভালভাবে বোঝার সুযোগ পায়। ভবিষ্যতে নিজেকে সে কোন অবস্থানে দেখতে চায়, সেটি নিয়ে চিন্তার অবকাশ পায়। মোদ্দা কথা হলো, একবার ‘বয়সোবার’ নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে ব্যক্তির সমস্ত মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সে নিজে।
তাই বলে ভাববেন না যে, এটি সন্ন্যাসযাপন! হোপ উডার্ড তাঁর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘বয়সোবারে আপনি একটা বিরতি নেবেন, নিজেকে মনের আয়নায় দেখবেন এবং আপনার জীবনের অগ্রাধিকারের ব্যাপারে নতুন করে ভাববেন- কারো অনুমোদনের আশায় আপনি বসে থাকবেন না।’
কেন নিজেকে ভালোবাসা জরুরি
অন্যের ভালোবাসা পাওয়ার প্রত্যাশায় অনেক সময় আমরা নিজেকে ভালোবাসার কথা ভুলে যাই। কিন্তু আপনি তখনই অন্যকে ভালোবাসবেন, যখন আপনি নিজেকেও ভালবাসতে সক্ষম হবেন। কেউ যদি নিজেকে ভালো না বাসে, নিজেকে অগ্রাধিকার না দেয়, নিজের জন্য যা ভালো তা বুঝতে না পারে, তাহলে অন্য কেউ তাঁর প্রতি সে আচরণ করতে যাবে কেন!
সম্পর্ক মূলত দু’জন মানুষকে আবেগ ও ভালোবাসার মাধ্যমে মানসিকভাবে যুক্ত করে। নিজেকে ভালোবাসা যে কোনো সুস্থ রোমান্টিক সম্পর্কের অন্যতম মৌল উপাদান। এমন সম্পর্কে দু’জন মানুষ একসাথে বেড়ে ওঠে, তাদের মনে গভীর নিরাপত্তাবোধ জন্ম নেয় এবং পরস্পরের প্রতি আচরণ হয় সম্মানজনক।
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর জীবনে প্রেম আসাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে নতুন প্রজন্মের ছেলে–মেয়েদের মধ্যকার সম্পর্কেও পরিবর্তন আসছে অনেক। আগে বন্ধু–বান্ধবদের মাধ্যমে কারও সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরির একটা চল চালু ছিল বেশ। তবে হুটহাট ডেটিংয়ের বিষয়টি এখন বদলে যাচ্ছে। উল্টো নিজেকে ঠিকমতো বোঝার আগে সব ধরনের ডেটিং দূরে থাকার ট্রেন্ডও গড়ে উঠছে। এমনই একটি নতুন রীতি হলো ‘বয়সোবার’।
বিশোর্ধ্ব রাধিকা গুপ্ত (ছদ্মনাম) পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বয়সোবার ধারণার মতো করে তিনি বলছিলেন, “অতীতে আমি একাধিক ডেট করেছি, কিন্তু কারো সাথেই পরিণতি পর্যন্ত গড়ায়নি। তবে এসব যাত্রায় আমি নিজেকে জেনেছি। বুঝতে পেরেছি যে, আমি কতটা আবেগপ্রবণ এবং একটা সম্পর্কের ভাঙ্গন আমাকে কত কষ্ট দেয়! এখন তাই আমি যাবতীয় প্রেমের সম্পর্ক এবং ডেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। এখন বরং আমি নিজের ও নিজের ক্যারিয়ারের ওপর সমস্ত মনোযোগ দিতে চাই। ভুল মানুষের পেছনে সময় দেয়ার মতো সময় এই ক্ষুদ্র জীবনে নেই। যখন আমি নিজেকে পুরোপুরি বুঝে যাব, তখন একসাথে জীবন কাটানোর মতো মানুষও পেয়ে যাব।”
আশেপাশে তাকালে দেখবেন, আপনার চেনাজানা বা বন্ধুমহলে কিন্তু অনেকেই রাধিকার মতো করে ভাবেন। সুতরাং ‘বয়সোবার’ শব্দটা নতুন হলেও এর ধারণাটা সাম্প্রতিক নয়।
এক কথায় ‘বয়সোবার’ হল টক্সিক (বিষাক্ত) সম্পর্ক, পরিস্থিতি, মানুষ এবং ভালোবাসার জন্য বিশেষ কারো বৈধতা (ভ্যালিডেশন) খোঁজার চাপ থেকে মুক্ত হওয়া। বরং এটি মানুষকে একা থাকতে, নিজেকে আবিষ্কার করতে, অতীতের বিষাক্ত সম্পর্কের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এবং একান্ত নিজের সাথে সুখী হতে উৎসাহিত করে। দীর্ঘ এ প্রক্রিয়া শেষে অনেকেই শেষতক প্রকৃত প্রেমময় সঙ্গী খুঁজে পান।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের মতে, ‘বয়সোবার’ শব্দটি প্রথম প্রবর্তন করেন আমেরিকান কৌতুকাভিনেতা হোপ উডার্ড। সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম টিকটকে হোপ ঘোষণা দিয়েছেন, “কোনো ডেটিং অ্যাপ নয়, ডেট নয়, এমনকি কোনো প্রাক্তন অথবা সিচুয়েশনশিপও নয়-এসবই ২০২৪ সালের বয়সোবার নীতি। সারা জীবন নিজেকে আমি সিঙ্গেল হিসেবে দাবি করে এসেছি। কিন্তু যতক্ষণ তোমার মস্তিষ্কে অন্য কেউ চেপে আছে, ততোক্ষণ তুমি সিঙ্গেল নও।”
টিকটকে হোপ উডার্ডকে সমর্থন করে এই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়েছেন হাজারও তরুণ। একজন মন্তব্য করেছেন, “জীবনে এতগুলো ডেটের পর, আমি বাকি জীবন সিঙ্গেল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” আরেকজন লেখেন, “(এর মাধ্যমে) যে শান্তি অনুভূত হচ্ছে তা অবিশ্বাস্য।”
ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ঝগড়ার পর ভুলেও যেসব কাজ করবেন নাভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ঝগড়ার পর ভুলেও যেসব কাজ করবেন না
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, ‘বয়সোবার’ শুধু নারীদের জন্যই; আদতে এটি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যত সিঙ্গেল তরুণ-তরুণী আছেন, সবাইকেই ডেটিং থেকে বিরতি নেয়ার জন্য উৎসাহিত করে বয়সোবার। শুধু কি প্রেম! সাবেক প্রেমিক, বিষাক্ত সম্পর্ক, হুক-আপ বা প্রতিশ্রুতিহীন নিছক যৌন ঘনিষ্ঠতা থেকেও সরে আসার প্রস্তাব দেয় এই ধারণা।
বয়সোবার বেছে নেওয়ার সময়টুকুতে মানুষ নিজের ভেতরটাকে আরও ভালভাবে বোঝার সুযোগ পায়। ভবিষ্যতে নিজেকে সে কোন অবস্থানে দেখতে চায়, সেটি নিয়ে চিন্তার অবকাশ পায়। মোদ্দা কথা হলো, একবার ‘বয়সোবার’ নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে ব্যক্তির সমস্ত মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সে নিজে।
তাই বলে ভাববেন না যে, এটি সন্ন্যাসযাপন! হোপ উডার্ড তাঁর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘বয়সোবারে আপনি একটা বিরতি নেবেন, নিজেকে মনের আয়নায় দেখবেন এবং আপনার জীবনের অগ্রাধিকারের ব্যাপারে নতুন করে ভাববেন- কারো অনুমোদনের আশায় আপনি বসে থাকবেন না।’
কেন নিজেকে ভালোবাসা জরুরি
অন্যের ভালোবাসা পাওয়ার প্রত্যাশায় অনেক সময় আমরা নিজেকে ভালোবাসার কথা ভুলে যাই। কিন্তু আপনি তখনই অন্যকে ভালোবাসবেন, যখন আপনি নিজেকেও ভালবাসতে সক্ষম হবেন। কেউ যদি নিজেকে ভালো না বাসে, নিজেকে অগ্রাধিকার না দেয়, নিজের জন্য যা ভালো তা বুঝতে না পারে, তাহলে অন্য কেউ তাঁর প্রতি সে আচরণ করতে যাবে কেন!
সম্পর্ক মূলত দু’জন মানুষকে আবেগ ও ভালোবাসার মাধ্যমে মানসিকভাবে যুক্ত করে। নিজেকে ভালোবাসা যে কোনো সুস্থ রোমান্টিক সম্পর্কের অন্যতম মৌল উপাদান। এমন সম্পর্কে দু’জন মানুষ একসাথে বেড়ে ওঠে, তাদের মনে গভীর নিরাপত্তাবোধ জন্ম নেয় এবং পরস্পরের প্রতি আচরণ হয় সম্মানজনক।
ভালোবাসা, বা কারো সাথে সম্পর্কে জড়ানো মানুষের জীবনেরই অংশ; তবে এসব কখনো সুখের একমাত্র উৎস হতে পারে না। সুখী হওয়া প্রতিটি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি এবং ভালোবাসার মানুষটির সাথে সম্পর্ক যেমনই হোক, মানসিক সুখ-শান্তি তার অনেক ঊর্ধ্বে।
পৃথিবীতে বিয়ে করা দুঃখী মানুষ যেমন আছে, সুখী মানুষও আছে। আবার সিঙ্গেল থাকা মানুষদের মধ্যেও কেউ সুখী, আবার কেউ দুঃখের সাগরে ভাসতে থাকেন। আপনি নিজেকে কীভাবে দেখতে চান, সেটি পুরোপুরিই আপনার ওপর নির্ভর করে। সিঙ্গেল থাকা বা বিয়ে করা—দুটিই ব্যক্তির ইচ্ছা ও পছন্দের ওপর নির্ভর করে। এর কোনো ভালো–মন্দ হয় না। তাই ব্যক্তিজীবনের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ও দায় কেবলই আপনার।
তথ্যসূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট, এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।