বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের একাধিক ওষুধ খাওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক পাঁচ বা এরও বেশি ভিন্ন ধরনের ওষুধ নিতে দেখা যায়, যা ‘পলিফার্মাসি’ নামে পরিচিত। আর এ পরিস্থিতি বিভিন্ন ওষুধের মধ্যে ক্ষতিকর মিথস্ক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এ ঝুঁকি কমিয়ে আনার একটি উপায় হতে পারে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ বাদ দেওয়া, প্রক্রিয়াটি ‘ডিপ্রেসক্রাইবিং’ নামে পরিচিত। তবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়াও ডাক্তারদের জন্য কঠিন ও সময়সাপেক্ষ বিষয় হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রাথমিক সেবাদানকারী ডাক্তাররা, বিশেষ করে যারা অনেক বয়স্ক রোগীদের বড় এক অংশ নিয়ে কাজ করছেন, তারা অনেক চাপের মধ্যে আছেন।
তারা প্রায়শই এই জটিল ওষুধের সময়সূচী ব্যবস্থাপনার কাজ করে থাকেন, যা বিষয়টিকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। কারণ অনেক বয়স্ক রোগীই একাধিক বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, যেখানে প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন।
এ পরিস্থিতি থেকে ডাক্তারদের সাহায্য করতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা কেন্দ্র ‘মাস জেনারেল ব্রিগ্যাম এমইএসএইচ ইনকিউবেটর’-এর গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখছেন, কীভাবে চ্যাটজিপিটি’র মতো এআই চ্যাটবট এ ধরনের ওষুধের সময়সূচী ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হতে পারে।
বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকাশনা ‘জার্নাল অফ মেডিক্যাল সিস্টেমে’ প্রকাশিত এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফলকে ওষুধ ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রথম উদাহরণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
বয়স্কদের একাধিক ওষুধ নেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের প্রেক্ষাপটে চ্যাটজিপিটি’র সক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষকরা।
এজন্য তারা রোগীর কার্ডিওভাসকুলার রোগের ইতিহাস ও তাদের দৈনন্দিন কাজ করার সক্ষমতার তথ্যে কিছুটা পরিবর্তন এনেছিলেন। এর কারণ ছিল চ্যাটজিপিটি কীভাবে সেইসব প্রশ্নের ভিত্তিতে ওষুধ কমিয়ে আনে, তা দেখা।
পরীক্ষায় দেখা যায়, সাধারণত যেসব রোগীর হৃদরোগের ইতিহাস নেই তাদের ওষুধ কমানোর বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে চ্যাটজিপিটি। চ্যাটবটটি এমন রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করেছে, যারা আগে থেকে হৃদজনিত সমস্যায় ভুগছেন। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের ওষুধের সূচীও অপরিবর্তিত রাখার পরামর্শ দিতে দেখা গেছে চ্যাটবটটিকে।
চমকপ্রদভাবে, রোগীর দৈনিক কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্তে তেমন জোর দিতে দেখা যায়নি এআই চ্যাটবটকে। এ গবেষণার লক্ষণীয় বিষয় হল, চ্যাটজিপিটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল বা রক্তচাপের ওষুধের তুলনায় ব্যথার ওষুধ বন্ধের পরামর্শ দিয়েছে।
বিষয়টি উদ্বেগজনক কারণ এইসব ব্যাথার ওষুধ দক্ষ উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা বয়স্ক ব্যক্তির জীবনমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, চ্যাটজিপিটির বিভিন্ন পরামর্শ সময়ের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে চ্যাটবটের প্রশিক্ষণে। এমনকি কখনও কখনও অপ্রাসঙ্গিক তথ্যও দেখাতে পারে চ্যাটবটটি।
৪০ শতাংশেরও বেশি বয়স্করা পলিফার্মাসি বিভাগে আছেন। এসব রোগীর সেবার সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞদের প্রায়ই এ ধরনের ওষুধের সমন্বয় করার জটিল কাজটি প্রাথমিক সেবাদানকারী ডাক্তারদের উপর ছেড়ে দিতে দেখা যায়।
৪০ শতাংশের বেশি বয়স্ক রোগী পলিফার্মাসি শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত। আর যেহেতু তাদের জন্য নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, তাই প্রাথমিক ডাক্তারদের হাতে শুধু তাদের ওষুধের সূচি করে দেওয়ার মতো জটিল কাজ থেকে যায়।
নোরিজ বলছে, একাধিক ওষুধ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভুল পরামর্শ দিয়ে এ অতিরিক্ত বোঝা কমিয়ে আনতে পারে শুধু একটি নির্ভরযোগ্য এআই টুল।
একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক টুল হিসেবে চ্যাটজিপিটি’র সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন এ গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক মার্ক সুচি। তবে, এ ধরনের টুলের প্রচলন শুরুর আগে এদের নির্ভুলতা নিয়ে কাজ করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।