বিনোদন ডেস্ক : ঢালিউডের সাম্প্রতিক আলোচিত চলচ্চিত্র ‘বরবাদ’ যেন হয়ে উঠেছে এক আবেগঘন যাত্রার নাম—প্রযোজকের স্বপ্ন, দর্শকের ভালোবাসা আর বাস্তবতার কঠিন হিসাব-নিকাশের এক নির্মম সংঘর্ষ। সিনেমাটিকে ঘিরে একসময় তৈরি হয়েছিল আশাবাদের মেঘ, শতকোটি আয়ের টার্গেটের ঘোষণা এসেছিল গর্বভরে। অথচ, বর্তমানে সিনেমাটির আর্থিক হিসাব নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক, ক্ষোভ ও হতাশার চিত্র। তবে এই গল্প শুধু লোকসানের নয়, বরং পুরো ইন্ডাস্ট্রির এক গভীর বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
Table of Contents
বরবাদ সিনেমার আয় ও বাস্তবতা: আশার আলো নাকি হিসাবের দুর্যোগ?
‘বরবাদ’ মুক্তির পরপরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে শাকিব খান ও ইধিকা পাল অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি। প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমি বলেছিলেন, সিনেমাটি হবে ঢালিউড ইতিহাসের সর্বোচ্চ আয় করা ছবি। প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল, টিকিট বিক্রি থেকে প্রায় ২৭ কোটি টাকার মতো আয় হয়েছে। সেই রকম হাউসফুল শো ও মাল্টিপ্লেক্সে সাড়াজাগানো সাড়া দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন, সত্যিই হয়তো শত কোটি টাকার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে।
তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চিত্র কিছুটা বদলে যায়। এখন জানা গেছে, সিনেমাটির মোট আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ কোটি টাকার মধ্যে। যদিও এটা বিশাল অঙ্ক, তবুও প্রযোজকের লগ্নি ১৫ কোটি টাকা এখনো পুরোপুরি উঠেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। তার পেছনে একাধিক কারণ উল্লেখ করছেন শাহরিন আক্তার।
সিঙ্গেল হলের অব্যবস্থাপনা ও চুরির অভিযোগ: বরবাদের আসল চ্যালেঞ্জ
একটি সিনেমার আর্থিক সাফল্য নির্ভর করে সঠিক হিসাবের উপর। প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমির মতে, মূল সমস্যাটা শুরু হয় এখানেই। তিনি অভিযোগ করেছেন, অনেক সিঙ্গেল হল মালিক সঠিক টিকিট বিক্রির হিসাব দিচ্ছেন না। তার ভাষায়, ‘আমাদের ই-টিকিটিং না থাকায় আমরা ভুল সিস্টেমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কিছু হল মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছি।’
বিশেষ করে জয়দেবপুরের ‘উল্কা’ সিনেমা হলের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উঠে এসেছে। সেখানে এক শো-তে ৬৭৮ জন দর্শক গুনলেও রিপোর্টে এসেছে মাত্র ৪৮০ জনের হিসাব। অর্থাৎ প্রায় ২০০ জনেরও বেশি দর্শকের হিসাব গায়েব। শুধু এই হল নয়, দেশের আরও অনেক প্রেক্ষাগৃহে এমন ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই ধরনের অনিয়ম ‘চুরি’ বলেই মনে করেন প্রযোজক।
এই পরিস্থিতিতে প্রযোজক বলেন, ‘আমি ছবি বানাব, বিপরীতে সততাও তো থাকতে হবে। হল মালিকরা যদি ভাবেন ব্যবসার পুরোটা নিজেরা ভোগ করবেন, এটা একদমই ভুল।’ তার মতে, ২০-৩০ জনের হিসাব গড়মিল হলে মানা যায়, কিন্তু ২০০-৩০০ জনের হলে সেটা আর গাফিলতি নয়, সেটা প্রতারণা।
ওটিটি ও বিদেশি মুক্তি: আয় বাড়ানোর সম্ভাব্য পথ
যদিও হলভিত্তিক আয় নিয়ে নানা সমস্যা থাকছে, তবুও প্রযোজক আশাবাদী, সিনেমার আয় আরও বাড়বে। কারণ, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে এখনও বড় অঙ্কের অর্থ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ‘বরবাদ’ সিনেমাটি আন্তর্জাতিক বাজারেও মুক্তি পেতে চলেছে, যা আয় বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই প্রসঙ্গে প্রযোজক বলেছেন, ‘আমাদের লগ্নি হয়তো কোনো না কোনোভাবে উঠে আসবে। তবে এই চুরির সিস্টেম থাকলে আদতে কোনো লাভ নেই।’ তার মতে, হল মালিকদের সহযোগিতা ছাড়া সিনেমা ব্যবসার উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তনের দাবি: প্রযোজকের দৃষ্টিভঙ্গি
শুধু আয় বা হিসাব নয়, প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমি আরও একটি দিক তুলে ধরেছেন—ইন্ডাস্ট্রির চিন্তাধারা ও মানসিকতা। তিনি মনে করেন, এই খাতে এখনো পেশাদারিত্বের বড় ঘাটতি রয়েছে। এফডিসিতে গেলে ‘সালাম দিয়েছি, টাকা দেন’—এই মানসিকতা এখনো বিদ্যমান। প্রযোজক বলেন, ‘আমরা যদি সিনেমাকে শিল্প হিসেবে দেখি, তবে এই ছোট মানসিকতার সিস্টেম বন্ধ হওয়া উচিত।’
সুমি জানান, আগামীতেও তিনি শাকিব খানকে নিয়ে আরও তিনটি ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। তবে এখনকার অভিজ্ঞতা দেখে মনে করছেন, শুধুমাত্র মাল্টিপ্লেক্সে ছবি মুক্তি দেওয়া হবে ভবিষ্যতে।
বরবাদের সফলতা: দর্শকের ভালোবাসা ও সিনেমার ভবিষ্যৎ
যদিও আয় ও হিসাব নিয়ে বিতর্ক আছে, তবে এক জিনিস স্পষ্ট—‘বরবাদ’ দর্শকের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে এখনো হাউসফুল শো চলছে, নতুন নতুন সিঙ্গেল হলে ছবিটি চালু হচ্ছে। ছবিটির ভিজ্যুয়াল, গানের আইটেম পারফর্মেন্স, অভিনয় সব কিছুই প্রশংসিত হয়েছে। শাকিব খান ও ইধিকা পাল জুটিকে ঘিরে আগ্রহও ছিল তুঙ্গে।
এই জনপ্রিয়তা ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটা বড় দৃষ্টান্ত হতে পারে—যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা হয়, তবে ভালো গল্প, প্রযোজনা ও অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা সিনেমা আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারে।
বরবাদের পেছনের তারকারা: কারা ছিলেন এই যাত্রার অংশ
পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয়ের কৌশলী নির্মাণ, অভিনেত্রী ইধিকা পাল, অভিনেতা শাকিব খান, এবং আরও অনেক দক্ষ অভিনেতা যেমন মিশা সওদাগর, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম এবং কলকাতার যীশু সেনগুপ্ত, নুসরাত জাহান—এদের পারফরম্যান্স বরবাদকে সফল করেছে।
এই টিম ও পরিকল্পনা যদি ভবিষ্যতে নিয়মিত হয়, তবে বাংলাদেশি সিনেমা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও ভালো অবস্থান নিতে পারবে।
সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, ‘বরবাদ’ সিনেমা একটি দ্বৈত অভিজ্ঞতার নাম—একদিকে রেকর্ড আয়, অন্যদিকে অশুভ সিস্টেমের আড়ালে চাপা ক্ষোভ। তবুও, বরবাদ আমাদের শেখায় যে ভালো কনটেন্ট, পেশাদার পরিচালনা ও তারকাবহুল অভিনয় থাকলে, বাংলা সিনেমা এখনো দর্শকের মন জয় করতে পারে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
‘বরবাদ’ সিনেমাটি কত আয় করেছে?
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ‘বরবাদ’ সিনেমার মোট আয় ৫০ থেকে ৫৫ কোটি টাকার মধ্যে বলে জানিয়েছেন প্রযোজক।
এই সিনেমার বাজেট কত ছিল?
প্রযোজক শাহরিন আক্তার জানিয়েছেন, সিনেমাটির মোট বাজেট ছিল প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
সিনেমাটি কোথায় কোথায় মুক্তি পেয়েছে?
‘বরবাদ’ দেশের সিঙ্গেল হল ও মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে এবং শিগগিরই আন্তর্জাতিক বাজারেও মুক্তি পাবে।
সিনেমার আয় নিয়ে কেন বিতর্ক তৈরি হয়েছে?
প্রযোজক দাবি করছেন, অনেক হল মালিক সঠিকভাবে টিকিট বিক্রির হিসাব দিচ্ছেন না, যা আয়ের স্বচ্ছতায় সমস্যা তৈরি করেছে।
প্রযোজকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
শাহরিন আক্তার জানিয়েছেন, তিনি আগামী তিন বছরে আরও তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন, যার সবগুলোতে শাকিব খান অভিনয় করবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।