ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটারের বাজার প্রতিনিয়ত বদলে যায়। কারণ, নতুন নতুন প্রযুক্তি চলে আসে কম্পিউটারে। আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন প্রযুক্তি আসার কিছুদিনের মধ্যে তা বাংলাদেশেও চলে আসে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করার জন্য কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশের চাহিদাও বদলে যায়। সাধারণ কাজ, যেমন ভিডিও দেখা, ই-বই পড়া, টুকিটাকি অফিস সফটওয়্যার ব্যবহারের কাজ এখনকার যেকোনো কম্পিউটার দিয়েই করা যায়। তবে বিশেষ কাজের জন্য কম্পিউটার কেনা চাই ভেবেচিন্তে।
ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের ১৪ শতাংশ কাজই হয় বাংলাদেশ থেকে। অর্থাৎ বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণ মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। তাঁদের জন্য কেমন কম্পিউটার প্রয়োজন? যাঁরা কনটেন্ট লেখার কাজ করেন, তাঁদের জন্য কোর আই ৫ বা রাইজেন ৫ প্রসেসরসহ কম্পিউটারই যথেষ্ট। কোর আই ৩ মানের প্রসেসর দিয়েও একই কাজ করা সম্ভব। সঙ্গে অন্তত ৮ গিগাবাইট র্যাম থাকা উচিত।
তথ্য ধারণের জন্য হার্ডডিস্ক ড্রাইভের বদলে সলিড স্টেট ড্রাইভ (এসএসডি) ব্যবহার করলে কাজের অভিজ্ঞতা বেশি সুখকর হবে। মোটামুটি ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে মিলবে এমন ডেস্কটপ কম্পিউটার। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে এই দামের শুরু ৫৫ হাজার টাকা থেকে হতে পারে। প্রোগ্রামিং শেখার জন্য খুব বেশি ক্ষমতার কম্পিউটারের প্রয়োজন হয় না। এমন কম্পিউটার দিয়ে স্বচ্ছন্দে কাজ করা যায়।
ওয়েব ডিজাইন, অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস অ্যাপ তৈরির কাজে আরেকটু বেশি ক্ষমতার কম্পিউটার প্রয়োজন। এ জন্য কোর আই ৭ বা রাইজেন ৭ সিরিজের প্রসেসর ব্যবহার করলে ভালো। র্যাম নেওয়া উচিত অন্তত ১৬ গিগাবাইটের। এসএসডি হওয়া উচিত অন্তত ২৫৬ গিগাবাইটের, তবে ৫১২ গিগাবাইট হলে কাজের অভিজ্ঞতা ঝক্কিবিহীন হয়। এসব কাজে বাড়তি গ্রাফিকস কার্ড সংযোজনের প্রয়োজন পড়ে না। এ ক্ষেত্রে ডেস্কটপের জন্য খরচ শুরু হবে ৬০ হাজার টাকা থেকে। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে দাম ৮৫ হাজার টাকা বা তার বেশি।
এই কম্পিউটারগুলোর সঙ্গে সাধারণ মানের গ্রাফিকস কার্ড জুড়ে দিলেই সাধারণ ভিডিও সম্পাদনার কাজগুলো করা যায়। তবে ফোর-কে মানের ভিডিও সম্পাদনা করতে চাইলে আরও উন্নত গ্রাফিকস কার্ড প্রয়োজন হবে। সে কাজের জন্য জুতসই গ্রাফিকস কার্ড এনভিডিয়া আরটিএক্স ৩০৬০ বা এএমডি আরএক্স ৬৬০০ বা আরও উন্নত কোনো মডেল। পাশাপাশি লাগবে ভালো কুলিং সিস্টেম এবং উচ্চ রেজল্যুশন ও রিফ্রেশ রেটযুক্ত মনিটর। সব মিলিয়ে গড়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে মিলবে এমন ডেস্কটপ কম্পিউটার। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে দামটা শুরু হবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে।
গেমস খেলার জন্য অনেকে কম্পিউটার কেনেন। এমনিতে গেমিং কম্পিউটার বলতে উচ্চ প্রসেসিং ও গ্রাফিকস কার্ডযুক্ত কম্পিউটারকেই বোঝানো হয়। তবে সাধারণ গেম খেলা যায় সাধারণ কম্পিউটারে।
বাংলাদেশের বাজারে সর্বশেষ প্রযুক্তি প্রসেসর, গ্রাফিকস কার্ড, এসএসডি, মনিটর দ্রুতই চলে আসে। প্রসেসর কেনার ক্ষেত্রে একই সঙ্গে সিরিজ ও প্রজন্ম দেখতে হয়। ইন্টেলের কোর আই ৯ ও ১৪ প্রজন্মের প্রসেসরগুলো সর্বাধুনিক (৭২ হাজার টাকা)। অন্যদিকে এএমডি সর্বাধুনিক প্রসেসর হলো রাইজেন ৯০০০ সিরিজের ‘জেন ৫’ বা পঞ্চম প্রজন্মের প্রসেসর (৭৯ হাজার টাকা)।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন ৪ গিগাবাইটের তুলনায় ৮ গিগাবাইটের র্যাম বেশি চলছে। কারণ, বাজেট কয়েক শ টাকা বাড়িয়েই দ্বিগুণ ক্ষমতার র্যাম মিলছে। ডিডিআর ৫ সিরিজের র্যাম বর্তমানে সর্বশেষ প্রযুক্তি।
গ্রাফিকস কার্ডের ক্ষেত্রে ‘জিডিডিআর ৬’ গ্রাফিকস মেমোরি খুব আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে বাজারে রয়েছে। এ প্রযুক্তির সর্বাধুনিক আরটিএক্স ৪০৯০ মডেলের গ্রাফিকসের দাম গড়ে ৩ লাখ টাকা। মনিটরের ক্ষেত্রে ফোর-কে রেজল্যুশন আর ১৪৪ হার্টজ রিফ্রেশ রেট যথেষ্ট উচ্চ মানের। তবে এর চেয়েও উন্নত প্রযুক্তি বাজারে চলে এসেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারের অন্যতম প্রধান ভোক্তা হলেও অনেকে ল্যাপটপ কিনতে পারেন না বেশি দামের কারণে। এই উচ্চ মূল্যের কারণ শুল্ক ও ভ্যাট।
দেশে তৈরি ওয়ালটনের কম্পিউটার পণ্য
গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাইটেক পার্কে উৎপাদিত হয় বেশ কিছু কম্পিউটার পণ্য। দেশের বাজারে সেগুলোর চাহিদাও রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদন শুরু করেছে ওয়ালটন।
দেশে উৎপাদিত ওয়ালটনের প্রযুক্তিপণ্য ৩২ মডেলের ল্যাপটপ, ৪৪টি মডেলের ডেস্কটপ কম্পিউটার, ১৮ মডেলের অল-ইন-ওয়ান পিসি, ১১টি মডেলের মনিটর, ৮ মডেলের ট্যাবলেট কম্পিউটার, ৩টি মডেলের প্রিন্টার রয়েছে ওয়ালটনের। এ ছাড়া ৪টি মডেলের ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিসপ্লে, ৭ মডেলের সোলার হাইব্রিড আইপিএস ও ১৫ মডেলের স্পিকার রয়েছে।
ওয়ালটন আরও তৈরি করে অ্যাকসেস কন্ট্রোল ডিভাইস, মাউন্টিং ব্র্যাকেট, ল্যাপটপ ক্যারিয়ার, ওয়াই–ফাই রাউটার, নেটওয়ার্কিং সুইচ, কার্ড রিডার, কি–বোর্ড, এসএসডি, র্যাম, এসডি কার্ড, পাওয়ার ব্যাংক, ডিজিটাল রাইটিং প্যাড, লিকুইড কুলার, মাউস, মাউস প্যাড, ওয়েবক্যাম, পেনড্রাইভ, অনলাইন ইউপিএস, স্মার্টওয়াচ, কেব্ল, সিসিটিভি, হেডফোন, পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট, স্মার্টফিটনেস স্কেল, ইউপিএস, হাব ও ইয়ারফোন।
কী কাজে কেনা হচ্ছে কম্পিউটার
কম্পিউটার কেনার সময় ঠিক কী কাজে সেটা কেনা হচ্ছে, সে কাজের জন্য কী কী সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে এবং ন্যূনতম কোন ক্ষমতার কম্পিউটার দরকার—এসব বিষয় পরিষ্কার থাকলে কম খরচে শখের কম্পিউটার কেনা সম্ভব। এ ছাড়া বেশির ভাগ কাজ করতে খুব উচ্চ ক্ষমতার কম্পিউটার দরকারও হয় না। আবার একই ক্ষমতার ল্যাপটপের দাম ডেস্কটপের থেকে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি পড়ে, তবে এতে বহনযোগ্যতার সুবিধা পাওয়া যায়। তাই কেনার আগে চাই পরিকল্পনা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।