জুমবাংলা ডেস্ক: বসনিয়ার যুদ্ধ ছিল নব্বইয়ের দশকে সংঘটিত একটি বড় ট্র্যাজেডি। এ যুদ্ধে নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলমান। মুসলমানদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছিল সার্বরা। এ যুদ্ধে গণহত্যা ও ধর্ষণ; এমনকি শিশুকন্যাদের ধর্ষণ ও শিশুদের হত্যা করাকে যুদ্ধ জয়ের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছিল বর্বর সার্বরা। কথিত সভ্য ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনও এত বড় গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান ঘটেনি। আজ আপনাদের জন্য রয়েছে পর্ব ০২।
১৯৯৩ সালের মে মাসে সার্ব ও ক্রোয়াটরা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে বসনিয়ার আরো কিছু অঞ্চল দখল করে। একই বছরের ৩০ জুলাই বিবদমান তিনটি পক্ষ ওয়েন-স্টোল-টেনবার্গ প্ল্যান মেনে নেয়। প্ল্যানে বসনিয়া হার্জেগোভিনায় তিনটি জাতির সহা-বস্থানে একটি যুক্তরাজ্য গঠনের কথা বলা হয় যার কেন্দ্র শুধু পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করবে।
রিপাবলিকস অব বসনিয়ান ইউনিয়ন নামের এ নতুন রাষ্ট্রের ৫২ শতাংশ ভূমি বসনিয়ার সার্বদের, ১৭ শতাংশ ক্রোয়াটদের এবং ৩০ শতাংশ দেয়া হয় মুসলমানদের। রাজধানী সারায়েভোর জন্য থাকে ১ শতাংশ ভূমি, যা ২ বছর জাতিসংঘের অধীনে থাকবে। তিন পক্ষ ওই শান্তি প্রস্তাব মেনে নেয়া সত্ত্বেও যুদ্ধ অব্যাহত থাকে এবং এভাবে তা ব্যর্থ হয়।
এরপর আরো কয়েকটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। সার্বরা ১৯৯৫ সালের মে মাসে সারায়েভো ও তুজলায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে। ফলে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক বসনীয় মুসলমান নিহত হয়। এছাড়া সার্বরা ন্যাটোর হামলা ঠেকাতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর ২০০-রও বেশি সেনাকে পণবন্দী করে। এই শান্তিরক্ষীরা পণবন্দী হওয়ায় জাতিসংঘ গোরাজদে অঞ্চলে সার্বদের তীব্র হামলার কোনো জবাব দেয়নি।
জাতিসংঘ সার্বদের সঙ্গে আপস-রফা করার কথা অস্বীকার করে এলেও একই সময়ে শান্তিরক্ষীরা সারায়েভোয় সার্ব অধিকৃত অঞ্চল থেকে সরে আসলে সার্বরা পণবন্দী শান্তিরক্ষীদের ছেড়ে দেয়। এছাড়া সার্বদের জঙ্গি বিমানগুলো বসনিয়ার নিষিদ্ধ অঞ্চলের আকাশেও অবাধে টহল দিয়ে বেড়ায়। অবশেষে সার্বরা ১৯৯৫ সালের জুন মাসে জাতিসংঘের রক্ষীদের কোনো বাধা বা প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সেব্রেনিৎসা ও জেপা শহরটি দখল করে নেয়। জাতিসংঘের ৮১৯ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী, সেব্রেনিৎসা শহরটি নিরাপদ অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু সার্বরা শহরটি দখল করে সেখানকার হাজার হাজার বেসামরিক মুসলমানকে হত্যা করে ও হাজারো নারীকে ধর্ষণ করে। নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তাদের বেশিরভাগই ছিল বৃদ্ধ ও যুবক। রাতকো মিলাদিচের নেতৃত্বাধীন সার্ব বাহিনী এই গণহত্যা চালায়। ২০০৪ সালে যুদ্ধাপরাধ আদালতের রিপোর্টে বলা হয়, ২৫ থেকে ৩০ হাজার বসনীয় মুসলিম নারী ও শিশুকে জোর করে অন্য অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং স্থানান্তরের সময় তাদের এক বিপুল অংশ ধর্ষণ ও গণহত্যার শিকার হন। নানা সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা গেছে, এইসব হত্যাকাণ্ড ছিল সুপরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ অভিযানের ফসল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।