রঞ্জু খন্দকার : পঞ্জিকা মেনে বসন্ত এসেছে সপ্তাহ আগেই। শোনা গেছে কোকিলের আবাহনও। কিন্তু গ্রামেগঞ্জে সামান্য শীত ছিলই। যেন কিছুতে বিদায় নিতে চাইছিল না হিমবুড়ি। অবশেষে ইলশেগুঁড়ির মধ্য দিয়ে যেন আনুষ্ঠানিকভাবে এবারের মতো পাততাড়ি গুটাল পাতাঝড়া এ ঋতু। এর প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতেও। গাছে-গাছে দেখা দিয়েছে কচি সবুজ পাতা। যেন আগুন লেগেছে শিমুল-পলাশের বনেও।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর নামকরণই করা হয়েছে পলাশ ফুলের নামে। এর স্বার্থকতা বজায় রাখতেই কি না উপজেলা পরিষদ চত্বরের পাশের পুকুরের পূর্ব পাড় ছেঁয়ে গেছে রক্তলালে– পলাশ ফুটেছে গাছে!
এ উপজেলার সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহবাজ কবির বলেন, পল্লীকবি জসীম উদদীন একবার পলাশবাড়ী উপজেলায় বেড়াতে এসেছিলেন। তিনি এখানকার সৌন্দর্যে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, ঢাকায় তাঁর বাসার নামকরণ করেন এ উপজেলার নামে–পলাশবাড়ী। এমনকী কবি তাঁর প্রকাশনীর নামও দেন ‘পলাশ’। বসন্তের এই সময়ে উপজেলা চত্বরের পলাশফোটা পুকুরের পাড়ে এলেই বিষয়টা মনে পড়ে।
শুধু পলাশবাড়ী নয়, পলাশ ফুটেছে গাইবান্ধা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পার্কের দিঘির পাড়েও। এ পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে শোভা বিলাচ্ছে রক্ত রাঙা এ ফুল।
জেলা শহরের বাসিন্দা রোমান রহমান বলেন, পলাশ প্রকৃতিতে বসন্তের বার্তাবাহী ফুল। এর লাল শোভায় আপ্লুত হয় না, এমন মানুষ খুব কম।
শুধু পলাশ নয়, এর জুটিভাই শিমুলবনেও লেগেছে আগুন। এর শোভা দেখতে গ্রামগঞ্জে তো বটেই সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুলবাগান দেখতেও ছুটছেন সৌন্দর্যপ্রেমীরা। ফেসবুকে, রিল ঘুরে সেসব ছবি, ভিডিও সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে অন্যদের নিউজফিডেও।
সুন্দরগঞ্জের সংবাদকর্মী খলিল রহমান জানান, যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী এ বাগানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ঘুরতে আসছেন। এর নাম জয়নাল আবেদীন শিমুলবাগান। প্রায় ১০০ বিঘা জমির এ বাগানে ৩ হাজার শিমুলগাছ আছে। ২০০৩ সালে মানিগাঁও গ্রামে ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন এ বাগান গড়ে তোলেন।
মাঘের শেষে আমের বোল আসে– এ বাক্য মেনে আমগাছও ছেঁয়ে গেছে মুকুলে। বাসা কিংবা সড়কের পাশে পরিচিত এ গাছের দিকে নজর গেলেই দেখা মিলবে আমফুলের, যা বসন্তেরই অংশ। গাইবান্ধার স্টেডিয়াম সড়কের এক বাসায়ও ফুটে থাকতে দেখা গেল এ ফুল।
স্টেডিয়াম সড়কের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেকে হয়ত আমের মুকুলকে বসন্তের বাহক হিসেবে অতটা মনে করেন না। কিন্তু এ ফুল তো বসন্তের একেবারে শুরুতেই ফোটে, ফলে তা ঋতুরাজেরই আগাম বার্তাবাহক।
ফুলে-ফুলে ছেঁয়ে গেছে রাজধানীও। সোহরাওয়ার্দী, চন্দ্রিমা, রমনা থেকে শুরু করে সব উদ্যান, পার্ক শোভিত হয়েছে মাধবীলতা, মধুমঞ্জুরীসহ নানা বসন্তফুলে। সম্প্রতি রমনায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পুষ্পপ্রেমীদের ফুল চেনানোর উৎসবও।
ওই উৎসবে অংশ নেন সংবাদকর্মী ফকির জহুরুল। তিনি বলেন, মাধবীলতা ফুল অনেকে চেনেন না। অনেকে এর সঙ্গে মধুমঞ্জুরীকে গুলিয়ে ফেলেন। তাই এ উৎসব।
রাজধানীর ধানমন্ডি লেক থেকে শুরু করে হাতিরঝিলের পাড়সহ সব সড়ক ও সড়কদ্বীপও সেজেছে বাসন্তীফুলে। ফুটেছে বেগুনীরঙা জারুল থেকেই শুরু করে জানা-অজানা নানা ফুল। চলতিপথে তা মুগ্ধ করছে দর্শনার্থী ও পথচারীদেরও।
হাতিরঝিল পাড়ের মহানগর এলাকার বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঝিলটা এমনিতেই সুন্দর। তবে এর সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ে বসন্তকালে। ঝিল বা রাস্তা পারাপারের সময় এসব ফুলে চোখ আটকে গেলে কিন্তু সর্বনাশ– ঘটতে পারে দুর্ঘটনাও!
তৌহিদুল মজা করে সর্বনাশের আশঙ্কার কথা বললেও বসন্তের সৌন্দর্য যারা উপভোগ করতে পারেন না, তাদের জন্য সত্যিকারের সর্বনাশেরই আশঙ্কা করলেন লেখক মোজাহিদুল ইসলাম।
এই গল্পকার বললেন, গ্রামে না চাইলেও বসন্ত আপনার চোখে ধরা দেবেই। নগরেও অনেক ক্ষেত্রে তা-ই। তবু যারা নাগরিক ব্যস্ততার কারণে বসন্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন না, তাঁদের জীবনের সর্বনাশ হয়ে গেছে অগোচরেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।