আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মায়ের সঙ্গে মুম্বাইয়ের বস্তিতে একটা ছোট ঘরে থাকতেন জয়কুমার বৈদ্য। দিনের শেষে পাউরুটি, শিঙাড়া বা চা এই ছিলো তাদের নিত্যদিনের খাবার। সেই জয়কুমার-ই কিনা এখন আমেরিকার মস্ত বড় গবেষকরা। বস্তি থেকে আমেরিকার পৌঁছালো জয়কমার সে এক বিশাল কাহিনী। শুনলে রূপকথার গল্প বলেই মনে হয়। আসলে চেষ্টা আর নিষ্টা থাকলে মানুষ যে নিজেকে কতদূর নিয়ে যেতে পরে জয়কুমার যেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
মুম্বাইয়ের কুরলা বস্তিতে থাকতেন জয়কুমাররা। শ্বশুর বাড়ির লোকেরা নলিনীকে বার করে দিয়েছিলেন। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ঠাঁই নেন ওই বস্তিতে। ২০০৩ সাল থেকে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। নলিনীর মা একটা চাকরি করতেন। মেয়েকে তিনি অর্থ সাহায্যও করতেন। কিন্তু ২০০৩ সালে অসুস্থতার জন্য তাকে চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়। যার কারণে ছেলেকে নিয়ে বড় ধরনের আর্থিক সঙ্কটে পড়েন নলিনী। কিন্তু দরিদ্রতার কষাঘাত যাতে ছেলের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটতে না পারে এজন্য মা নলিনী অনেক কিছু করেছেন। যখন যা কাজ পেয়েছেন তাই করেছেন। কখনও শিঙাড়া, বড়াপাউ খেয়ে দিন কাটিয়েছেন। এত কষ্টের পরও হাল ছাড়েননি জয়কুমার ও তার মা। স্কুলে মাইনে দিতে না পারায় স্কুল কর্তৃপক্ষ একবার নলিনীকে বলেছিলো, ‘বেতন দেয়ার টাকা নাই, তাহলে স্কুলে পড়ানোর শখ কেন বাপু! ছেলেকে গাড়ি চালানো শেখাও, পরে গাড়ি চালিয়ে কিছু টাকা আয় করতে পারবে।’
কিন্তু এসব উপহাসে মন খারাপ হলেও দমে যাননি নলিনী। ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বদ্ধ পরিকর ছিলেন এই নারী। এ অবস্থায় নলিনীর সাহায্যে এগিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেসকো। তারা জয়কুমারের স্কুলের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দেয়। পরে কলেজে পড়ার সময় জয়কুমারকে সুদ ছাড়া ঋণও দেয় মেসকো।
কিন্তু কারও সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল থাকা পছন্দ ছিল না জয়কুমারের। তিনি স্থানীয় একটা টিভি মেরামতির দোকানে কাজ শুরু করেন। মাসে ৪০০০ টাকা মাইনে। পাশাপাশি এলাকায় টিউশনি করতেও শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের জোরে কেজে সোমাইয়া কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ইলেকট্রিক্যালে স্নাতক হন। রোবোটিকসে তিনটে জাতীয় এবং চারটে রাজ্যস্তরের পুরস্কারও পান জয়কুমার।
এটাই ছিল তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময়ই প্রথম চাকরির প্রস্তাব আসে লার্সেন অ্যান্ড টুবরো থেকে। কলেজ পাস করে তিনি ৩০,০০০ টাকা বেতনে টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর)-এ চাকরি নেন।
দু’মাসের বেতন জমিয়েই প্রথম নিজের বাড়ির জন্য একটা এসি কেনে। আর জিআরই আর টিওইএফএল পরীক্ষার জন্য ফর্মপূরণ করেন। ফর্মের জন্য অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। সেই ঘাটতি মেটাতে এবার অনলাইন টিউশনি শুরু করেন জয়কুমার। তিন বছর টাটা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ করার পর জয়কুমার পিএইচডি শুরু করেন। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে তার দু’টো গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সেই গবেষণা ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তারা জয়কুমারকে ডেকে নেয়।
রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ায় যোগ দেন ২৪ বছরের জয়কুমার। একসময়ে যাদের মাস শেষে হাতে ১০ টাকাও থাকতো না , আজ সে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকারও বেশি অর্থ বৃত্তি পায়।
এই অর্থ থেকে মাত্র ৫০০ ডলার জয়কুমার নিজের খরচের জন্য রেখে দেন। বাকিটা মাকে পাঠান। খুব তাড়াতাড়ি মাকে আমেরিকায় নিয়ে যেতে চান জয়কুমার। আর মাকে নেবেন না কেন বলুন! এই মায়ের জন্যই তো আজ তিনি এতটা সফল, আমেরিকার এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজ করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।