রাজশাহী প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, বাংলাদেশকে একটি দেশের কাছে ইজারা দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ -এর পরে এ দেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব নষ্ট করে দিয়েছিল।
আজ (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের ৬২ জন শহীদ পরিবারের মধ্যে ৪২ জনের পরিবারের প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকার অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।
সারজিস আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানকে একটি দেশ (ভারত) তাদের ইচ্ছেমতো করে দিয়েছে। এই বাংলাদেশের সামগ্রিক কাঠামো তাদের ইচ্ছেমতো। খুনি হাসিনা নির্লজ্জের মতো বাংলাদেশে উপস্থিত থেকে বলে- সে না কি ভারতকে যা দিয়েছে ভারত সারাজীবন মনে রাখবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আমরা ক্ষমতা পিপাসু নই। বিবেকবোধের জায়গায় যদি আমাদের মনে হয়, আপনারা এই অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূসও যদি হয়, আমরা তাকেও ছেড়ে কথা বলব না। আমরা বিবেকবোধ বিক্রি করে দেওয়া ওই প্রজন্ম না। বিবেকবোধ বেঁচে দেওয়া ওই প্রজন্ম হলে ভারতের দালালি করতাম। কিন্তু আমরা তা করি নাই, করব না। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, পৃথিবীর যে কোনো দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হবে সমতা এবং মর্যাদার। কেউ বিন্দুমাত্র ডমিন্যান্ট করার চেষ্টা করলে তার সঙ্গে চোখ রাঙিয়ে কথা হবে, পুলিশের সামনে বুক পেতে দেওয়া হবে।’
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রসঙ্গ টেনে সারজিস বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী হবে সেটা আপনারা আপনাদের কাজের মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন। খুনি হাসিনা এতগুলো মানুষকে খুন করে এই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে, যেই খুনি হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের দ্বারা বিতাড়িত হয়েছে, সেই খুনি হাসিনাকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন। যদি এই বাংলাদেশের সঙ্গে আপনারা সম্পর্ক স্থাপন করতে চান, খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিন। খুনি হাসিনার বিচার এই বাংলাদেশের মানুষ করবে।’
এখনও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সারজিস বলেন, ‘চব্বিশের অভুত্থানের চারমাস পেরিয়েছে। খুনি হাসিনার অন্যতম দোসর নাটোরের খুনি এমপি শিমুল আজও আমাদের সামনে রয়েছে। আজও পাবনার সাঈদ চেয়ারম্যান, এই বাংলাদেশে তার অস্তিত্ব রয়েছে। অথচ এই খুনিরা প্রকাশ্যে আমার ভাইদেরকে পুড়িয়ে মেরেছে, গুলি করে হত্যা করেছে। তাহলে বাংলাদেশের ওই বিচারব্যবস্থা, পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যারা আছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-বিচার ব্যবস্থার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন যে শহিদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আজকে আপনারা উপদেষ্টা, পুলিশ সুপার, আইজিপি, ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার- তাদের রক্তের সাথে এই বেঈমানি কীভাবে সম্ভব?’
তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল আমাদের এই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ভুলে গিয়ে যদি ক্ষমতার দিকে তাকিয়ে থাকে, সেটা যদি নাহিদ, আসিফ, সারজিস, হাসনাতও হয় আপনারা তাদের বিরুদ্ধেও কথা বলবেন। এই বাংলাদেশে আর যেন কোনো ক্ষমতা পিপাসু নরপিশাচের জায়গা না হয়।’
সারজিস আলম বলেন, ‘পরিচয় তার যাই হোক- পুলিশ, বিজিবি, আর্মি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ- এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল তাদের আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। তারা যেই পরিচয়েই পরিচিত হোক না কেন, তারা আমাদের কাছে একজন খুনি। তাদের এই খুনের বিচার করতে হবে।’
’২৪-এর অভ্যুত্থানে শহীদদের লাশ উত্তোলন করা যাবে না- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচারের জন্য যদি শেখ মুজিবুরের লাশ উত্তোলনের প্রয়োজন না হয়, তাহলে ’২৪-এর অভ্যুত্থানে খুনি শেখ হাসিনা তার হুকুমে এই বাংলাদেশে যারা গণহত্যা ঘটিয়েছে, যারা জীবন নিয়েছে তাদের বিচারের জন্য কেন শহীদদের লাশ উত্তোলন করতে হবে। ২০২৪ এর অভ্যুত্থানের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, এই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছে তাদের এই হত্যা মামলাগুলোর জন্য কারও লাশ উত্তোলন করা যাবে না। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আমাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার যে মন্ত্রণালয় রয়েছে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে একটি কথা বলে দিতে চাই, যে ভাই তার জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ এনে দিয়েছে, যে ভাইয়ের জীবনের বিনিময়ে আপনি ওই চেয়ারে বসে রয়েছেন, যে ক্ষতবিক্ষত বুক দিয়ে যে বাবা-মা, ভাইবোন, সহধর্মিণী বেঁচে রয়েছে তাদের সেই ক্ষতবিক্ষত কলিজার সামনে চার মাস পর শহীদদের লাশ উত্তোলন করতে পারেন না।’
তিনি আরও বলেন,‘পুলিশ সেই মামলাগুলো নিচ্ছে না, যে মামলাগুলোতে তাদের পুলিশ সদস্যদের নাম রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সমঝোতা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ওই খুনি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে টাকার বিনিময়ে বাঁচানোর জন্য ব্যাকডোরে নেগোশিয়েশন করছে। এই যে মামলা বাণিজ্য, এতে রাজনৈতিক দল যেমন জড়িত রয়েছে তেমনি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও জড়িত রয়েছে। নতুন বাংলাদেশেও পুলিশ সদস্য বিভিন্ন জায়গায় মামলা বাণিজ্য করছে।’
গণহত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচারে পুলিশকেই সহায়তার আহ্বান জানিয়ে এই ছাত্রনেতা বলেন,‘পুলিশের যে সকল সদস্য গণহত্যায় জড়িত ছিল, যারা জড়িত ছিলেন না তারা যদি তাদের বিচারের জন্য সহযোগিতা না করেন, তাহলে পরোক্ষভাবে আপনারাও গণহত্যায় জড়িত হয়ে যাবেন। কালো দাগ লেগে গেছে পুলিশে, এই কালিমা আপনাদেরই মুছতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহরাব সিফাত, মোবাশ্বেরুজ্জামান, মাহিন সরকার, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আলমগীর রহমান বক্তব্য রাখেন।
এসময় অন্যদের মধ্যে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারসহ শহীদদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।