সম্প্রতি ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে ওরিয়ন নেবুলার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন অ্যাস্টোফটোগ্রাফার জুবায়ের কেওলিন। নিজেই বানান প্রয়োজনীয় সব টেলিস্কোপ। আকাশ দেখার পাশাপাশি সে টেলিস্কোপের সাহায্যে ছবিও তোলেন।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমি দুটি ইমেজিং টেলিস্কোপ বানিয়েছি। তৃতীয়টার কাজ এখনো চলছে। দুটি টেলিস্কোপের সামনে অবজেক্টিভ লেন্স ব্যবহার করেছি। আর তৃতীয়টায় ব্যবহার করব মিরর লেন্স। ওটার ডিজাইনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমি আমার পছন্দ মতো যখন যে টেলিস্কোপ লাগে, সেটা বানিয়ে নিই।
লেন্সগুলো শুধু বিদেশ থেকে কিনে আনি। দেশে ওভাবে অপটিক্যাল লেন্স পাওয়া যায় না। ওগুলো বানানো যায় কিন্তু তাতে কালার ভালো আসবে না। এখানে আমাদের কিছু বাঁধা আছে। তবে আমার ইচ্ছা আছে বড় রিফ্লেক্টিং মিরর নিজের হাতে বানানোর।
ধরুন, আমরা ওরিয়ন নেবুলার ছবি তুলব। তখন ওই নেবুলার দিকে টেলিস্কোপ সেট করি। তারপর ঠিক করতে হয় যে আমি কয়টা ছবি নিব। আরও কিছু ক্যামেরার সেটিংস আছে, সেগুলো দিতে হয়। অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সিগন্যাল টু নয়েজ রেশিও। এর সাহায্যে নয়েজের তুলনায় কতটুকু সিগন্যাল সংগ্রহ করছি, তা বোঝা যায়। সিগন্যাল বেশি সংগ্রহ করতে চাইলে বেশি সময় এক্সপোজ করতে হবে।
অথবা একসঙ্গে ধারণ করতে হবে অনেক আলো। প্রত্যেক টেলিস্কোপের একটা নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। সেই মাত্রা অনুসারে টেলিস্কোপ আলো ধারণ করতে পারে। মূল কথা হলো, আমাদের হিসেব করতে হয় যে কতক্ষণ এক্সপোজার নিলে একটা ভালো ছবি পাওয়া যাবে। ২৮ অক্টোবর আমি ৫ মিনিটের এক্সপোজার নিয়ে ৩৬টা ছবি তুলেছিলাম। এই পাঁচ মিনিটের এক্সপোজার নিতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘণ্টা। এগুলো পরে সফটওয়্যারে কম্বাইন করতে হয়।
আমি একজন অ্যানিমেটর এবং ফিল্মমেকার। অডিও ভিজ্যুয়াল তৈরি করি ও অ্যাডভেটাইসমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি। এছাড়া কর্পোরেট ভিডিও বানাই। আর অবসরে আমি ইমেজ প্রসেসিং করি। মাঝেমধ্যে বিড়ালের সঙ্গে খেলি। আমার স্ত্রীও অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। তার সঙ্গেও অবসরে গল্প করি। মাঝেমধ্যে রান্নাও করি।
আমার মনে হয়, অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফিকে মজার প্ল্যাটফর্মে রুপান্তর করা প্রয়োজন। গৎবাঁধা শিক্ষায় অ্যাস্ট্রোনমি সম্পর্কিত সবকিছু কেমন যেন বোরিংভাবে চিন্তা করে। কিন্তু আমরা যদি ভিজ্যুয়াল কিছু মানুষের সামনে দেখাতে পারি, তাহলে তাঁদের এই ভীতি দূর হতে পারে। ফলে আমি এরকম আরও ভালো ভালো ছবি তুলতে চাই। মানুষের জানার আগ্রহ বাড়াতে চাই। সেজন্য হয়তো কিছু বই প্রকাশ করতে পারি। অনেক ছবি নিয়ে কয়েকটা বই তৈরি করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে আমার ছবিগুলো নিয়ে ওয়ার্কশপ করার ইচ্ছা আছে।
শৈশবেই আমার এই আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আমি নক্ষত্র দেখলেই মনে করতাম, ওটার পাশে হয়তো কোনো গ্রহ আছে। হয়তো থাকতে পারে মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণী। সায়েন্স ফিকশন পড়ে পড়ে এগুলো কল্পনা করতাম। কল্পনা করতেও খুব ভালো লাগত। এরপর ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সেগুলো খুঁজে খুঁজে দেখতাম। পাশাপাশি অ্যানেমেশন, ফিল্মোগ্রাফি নিয়েও কাজ করেছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।