জুমবাংলা ডেস্ক : পৃথিবী এখন চলছে হাতের ইশারায়। সফটওয়্যার মানুষের কাজকে করেছে আরো গতিশীল এবং নির্ভুল।
সফটওয়্যার খাতে এক সময় বাংলাদেশ সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর এবং পাইরেসি নির্ভর ছিল। কিন্তু দেশে এই খাতের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সফটওয়্যার যাচ্ছে উন্নত বিশ্বেও।
সফটওয়্যার শিল্পের হাত ধরে আইটি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন বাড়ছে তরতর করে। পৃথিবীর একশোটির বেশি দেশে বাংলাদেশি সফটওয়্যার রফতানি হচ্ছে, আয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা।
গত পাঁচ বছরের রফতানি আয়ের দিকে চোখ বুলালে রীতিমতো চমকে যেতে হয়। শুধু এই খাতে আয় বেড়েছে ১০ গুণ। সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান নিজেদের চাহিদা ও সেবা নিশ্চিত করায় বেসরকারি খাতও স্থানীয় আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অনেক কোম্পানি বিদেশের মাটিতে অফিস খুলেছে এবং দেশেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করছে।
এলআইসিটির তথ্যমতে, ২০২০ সালে আইটি খাতের আকার ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা গত বছর ছিল ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। স্থানীয় বাজারের আকার বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য ও সেবা রফতানি ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা গত বছর ছিল ৮শ মিলিয়ন ডলার।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য ও সেবা রফতানি বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। বেসিসের সমীক্ষা অনুযায়ী, স্থানীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। শুধু বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত আছেন ৩ লাখ ২০ হাজার জনবল। এ ছাড়াও দেশে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন ৯ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। বেসিসের ঐকান্তিক প্রয়াসে দেশের সফটওয়্যার খাতের উন্নতি সম্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশ ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ২৮ লাখ (২.৮ মিলিয়ন) ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানি করে। এরপর ২০০৩ সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ ডলার। এরপর ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে এক কোটি ২৬ লাখ ডলার, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার, ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, ২০১০-১১ অর্থবছরে চার কোটি ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) ডলার অতিক্রম করে। ওই অর্থবছরে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এই আয় বেড়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ডলার ও ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে প্রায় ১৩ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই খাত থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়। চলতি বছর সেটা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ টার্গেট ৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
সরকারের পদক্ষেপ:
অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর ২০১৮ সালে তথ্য ও যোগাযোগ খাতভিত্তিক পণ্য ও সেবা রফতানি আয়ের ওপর ১০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা চালু করে সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৩টি প্রতিষ্ঠান রফতানি আয়ের ওপর ১০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা পেয়েছে। পাশাপাশি আবেদনকৃত মোট ১৬৬টি প্রতিষ্ঠানের ১৬২ মিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের ওপর ১৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ খাত থেকে আয় বাড়াতে হলে স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। ফলে দেশীয় বাজারের পাশাপাশি সফটওয়্যার রফতানির পাঁচ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে এবং পোশাকশিল্পের পরে তথ্যপ্রযুক্তি খাত রফতানির দ্বিতীয় বৃহৎ খাত হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে আবির্ভূত হবে। দিন দিন স্থানীয় বাজারে সফটওয়্যারের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও সরকারি সব ধরনের নাগরিক সেবাও সফটওয়্যার কেন্দ্রিক হচ্ছে।
চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের চিন্তা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। সেজন্য সরকারের অবদান প্রশংসনীয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানে দেশীয় ডোমেইন ও ইমেইল ব্যবহার নীতিমালার মাধ্যমে ডিজিটাল যোগাযোগ নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে যেটা দেশীয় সফটওয়্যার প্রযুক্তি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করছে। সফটওয়্যার শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকারি ও বেসরকারি সফটওয়্যার টেকনোলোজি পার্কগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সরকারের আগ্রহ অনেক। শুধু যে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা চালুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে তা নয়, প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন ও অধিকতর উন্নত প্রযুক্তি বাজারে আনছে। যার মাধ্যমে স্মার্টফোনের সক্ষমতা, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ক্লাউড কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, রিয়েল-টাইম স্পিচ রিকগনিশন, ন্যানো কম্পিউটার, ওয়্যারেবল ডিভাইস ও নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন, সাইবার সিকিউরিটি, স্মার্ট সিটিজ, ইন্টারনেটে সব পণ্য-সেবা আরো উন্নত হবে।’ বিশ্বে বর্তমানে বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি ডলারের সফটওয়্যার রফতানির বাজার রয়েছে।
এই খাতে আমাদের নিকটতম প্রতিযোগী
প্রতিবেশী ভারত একাই রফতানি করে আট হাজার কোটি ডলারের। শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন প্রভৃতি এশীয় দেশও এ খাত থেকে ভালো আয় করছে। সেই সঙ্গে ভিয়েতনাম, পাকিস্তানের সঙ্গেও আমাদের পাল্লা দিতে হচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার ২০১১ সালে এ খাতের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ৩০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশকেও রেখেছে।
সূত্র: ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



