আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাতিসংঘে বাংলাদেশ সহ বেশ কয়েকটি দেশের সমর্থনে উত্থাপন করা জর্ডানের গাজা বিষয়ক প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘে। তবে পশ্চিমা অনেক দেশের সঙ্গে এই প্রস্তাবে হামাসের নাম উল্লেখ না থাকায় ভোট দানে বিরত থেকেছে ভারত। হামাসকে বাদ দিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার অবিলম্বে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে শত্রুতা বন্ধ করে মানবিক চুক্তি করার আহ্বান জানিয়ে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। এতে গাজায় নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তার সুযোগ দেয়ার আহ্বানও জানানো হয়। প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয় ১২০টি দেশ। ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র সহ ১৪টি দেশ বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ভোটদানে বিরত থাকে ৪৫টি দেশ। কানাডা হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়ে এই প্রস্তাবের একটি সংশোধনী উত্থাপন করে। কিন্তু তা দুই তৃতীয়াংশ ভোট না পাওয়ায় গৃহীত হয়নি। এ খবর দিয়েছে ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই, আল জাজিরা।
৭ই অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক রকেট হামলা করে হামাস। তাতে কমপক্ষে ১৪০০ মানুষ নিহত হয় ইসরাইলে। এরপর থেকেই গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে তারা। এতে গাজার কমপক্ষে ৭৩২৮ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। তারপরও সেখানে প্রায় রাতেই বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। জোরালো করেছে স্থল অভিযান। এ অবস্থায় তাদেরকে পরাজিত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে হামাস। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৯৩টি সদস্য দেশের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১০তম ইমার্জেন্সি স্পেশাল সেশন আহ্বান করা হয়। তাতে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ৪০ দেশের সমর্থন নিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করে জর্ডান। ওই রেজ্যুলুশনের শিরোনাম- ‘প্রটেকশন অব সিভিলিয়ান্স অ্যান্ড আপহোল্ডিং লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান অবলিগেশন্স’। অর্থাৎ বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা, আইনগত ও মানবিক বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখা। কিন্তু এই প্রস্তাবে ভারতসহ ভোটদানে বিরত থাকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ইউক্রেন, বৃটেন। প্রস্তাবটি ভোটে দেয়ার আগে ১৯৩ দেশের এই সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে তাতে সংশোধন প্রস্তাব করে কানাডা।
কানাডার সংশোধনীতে বলা হয়, প্রস্তাবে একটি প্যারাগ্রাফ যুক্ত করতে হবে, যেখানে বলা হবে ৭ই অক্টোবর ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাস যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে, জিম্মি করা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে এবং এর নিন্দা জানায়। জিম্মিদের নিরাপত্তা, তাদের সুস্থতা, আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে তাদের সঙ্গে মানবিক ব্যবহার এবং অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। অন্য ৮৭টি দেশের সঙ্গে এই সংশোধনীর পক্ষে ভোট দেয় ভারত। বিরুদ্ধে ভোট দেয় ৫৫টি দেশ। ভোটদানে বিরত থাকে ২৩টি দেশ। দুই তৃতীয়াংশ দেশ পক্ষে ভোট না দেয়ায় সংশোধনীটি গৃহীত হয়নি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট ডেনিস ফ্রাঁসিস ঘোষণা দেন যে, প্রস্তাবের খসড়ায় সংশোধনী গৃহীত হয়নি।
জর্ডানের খসড়া প্রস্তাবে অবিলম্বে, দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই মানবিক চুক্তির আহ্বান জানানো হয়, যাতে এই শত্রুতা বন্ধের পথ উন্মুক্ত হয়। এতে অবিলম্বে, অব্যাহতভাবে পর্যাপ্ত এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে গাজা উপত্যকাজুড়ে সাধারণ মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার পথ উন্মুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়। এর মধ্যে আছে পানি, খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ। এই খসড়া প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সাধারণ মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে বঞ্চিত রাখা যাতে না হয় তার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। একই সঙ্গে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাকে অবিলম্বে, পূর্ণাঙ্গ, টেকসই, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন মানসিক সেবা করার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। রেডক্রস এবং অন্য মানবিক সংগঠনগুলোকে মানবিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয় প্রস্তাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।