অর্থনীতি ডেস্ক : স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের সামনে তিনটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। প্রথমত বাণিজ্যিক চাপ সৃষ্টি, দ্বিতীয়ত নীতিমালা তৈরিতে সুযোগ সংকোচন এবং তৃতীয়ত উন্নয়ন সাহায্য কমে আসতে পারে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। সম্প্রতি রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে সামষ্টিক অর্থনীতি ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনবিষয়ক কর্মশালায় এসব কথা বলা হয়। ইআরএফ ও পিআরআই যৌথভাবে কর্মশালা আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক ড. এমএ রাজ্জাক, চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার, নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ও ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।
ড. এমএ রাজ্জাক বলেন, স্বল্পোন্নত আয়ের দেশ হওয়ার কারণে পণ্য রফতানিতে জিরো ডিউটি বা শূন্য শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু ২০২৪ সালের পর ন্যূনতম ২ দশমিক ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক গুনতে হবে আমাদের। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সম্প্রতি ব্রেক্সিটের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। কারণ এর আগে বাংলাদেশের একটি পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি দেশ থেকে অন্য দেশে পৌঁছানো সম্ভব ছিল। কিন্তু ব্রেক্সিটের ফলে এখন এ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। তখন চাইলেই আমদানি-রফতানি নীতিমালা পরিবর্তন করতে পারবে না বাংলাদেশ।
ড. মনসুর বলেন, এখনো কোনো রাজস্ব অফিসে ট্যাক্স জমা দিতে গেলে ঘুষ না দিলে কাজ হয় না। অফিসাররা আগ্রহী নন। কিন্তু প্রতি বছরই ট্যাক্স কালেকশনের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যদিও আদায়ের চিত্র পুরোপুরি উল্টো। প্রতিটি জেলায় ডিজিটাল মেশিন স্থাপনের সর্বশেষ উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে। কোনো নিয়মনীতি এখানে কাজ করছে না। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে স্বপ্নপূরণ সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, গত কয়েক বছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা পেনশন, ভর্তুকিসহ যে পরিমাণ সরকারি ব্যয় বেড়েছে, সে অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার।
প্রশ্নোত্তর পর্বে পিআরআই নির্বাহী পরিচালক বলেন, সম্প্রতি ব্যাংকঋণের সুদহার কমানোর যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা মোটেও যৌক্তিক নয়। এটি বাস্তবায়নের কিছুদিনের মধ্যেই অর্থনীতিতে ভয়াবহ চিত্র দেখা যাবে। ক্ষুদ্র শিল্প খাত পরিত্যক্ত হয়ে পড়বে। কারণ এ ঋণের পরিচালন ব্যয় বেশি। তখন ইচ্ছা করেই ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করবে না। একদিকে খেলাপি, মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে আমদানি-রফতানির অবনমন অর্থনীতিকে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এ বছরে ব্যাংক খাত থেকে সরকার যে ঋণ নেবে, তার পরিমাণ গত ৪৮ বছরের সমান। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে সরকার পরিশোধ করবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোকে ৯ শতাংশে ঋণ বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুতরাং ব্যাংকগুলো সুযোগ পেলেই সরকারকে ঋণ দেবে, বেসরকারি খাতে নয়। অর্থনীতিতে চাঙ্গা করতে যেসব নীতিমালা নেয়া হচ্ছে, এর সবগুলোই ভারসাম্যহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।