জুমবাংলা ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ বিকেল নাগাদ উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে মধ্যরাতে বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলে আঘাত হানবে। ইতোমধ্যে ‘ফণী’র প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। তবে খুলনার দিকে আসতে আসতে প্রলয়ঙ্কারী ‘ফণী’র তেজ অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করছেন ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ‘ফণী’ ভারতে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই আঘাত হেনেছে উড়িষ্যায়। ওই অঞ্চলে এরই মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাতাস বয়ে যাচ্ছে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার বেগে। তবে ধীরে ধীরে এর ক্ষীপ্রতা কমে আসবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ৩ মে বিকেল নাগাদ ‘ফণী’ উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে মধ্যরাত নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। এক্ষেত্রে দুপুরে ফণীর অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর বৃহস্পতিবার (০২ মে) জানায়, শুক্রবার সকালে ‘ফণী’র অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে পারে আর আঘাত হানবে সন্ধ্যায়। এদিক উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে ফণীর গতি কিছুটা ধীর হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার রয়েছে, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
ভারতের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস। এই অবস্থায় আগের মতই মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত, চট্টগ্রামকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত ও কক্সবাজারকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসবের অদূরবর্তী চর দ্বীপ ও চরসমূহের নিন্মাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় এসব এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পুরীতেআছড়ে পড়েছে ‘ফণী। এরপর এটি রাজ্যের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রগর হবে। স্থলভাগে এসেই এটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে এগোবে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ‘ফণী’ উড়িষ্যায় ১৭০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বেড়ে আঘাত হানলেও পশ্চিমবঙ্গে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে আঘাত হানবে ৯০-১০০ কিলোমিটার বেগে।
বর্তমানে ‘ফণী’তে তার সমগ্র বিস্তুতি (৭৪ কিলোমিটার) নিয়ে ১৭ কিলোমিটার বেড়ে এগোচ্ছে। এতে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানতে পারে শনিবার (০৪ মে) সকাল নাগাদ। এটি আরো অগ্রসর হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ উপকূলে প্রবল থেকে আরো কমে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত হানবে। যেখানে গতিবেগ থাকবে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হবে। তবে সাব হিমালয়ান এলাকা ও সিকিমে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। উপকূলীয় এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতও হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুর ও ত্রিপুরায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হলে ৪ ও ৫ মে আসাম মেঘালয়ের কিছু কিছু জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে।
ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের অতিভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা, কুশিয়ারা, কংস, যাদুকাটা ও সুরমা নদীর পানি আগামী ৫ মে নাগাদ বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ফলে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে বলে আভাস দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এই আশঙ্কা করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন সব সংস্থার সকল ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এরই মধ্যে সম্ভাব্য আকস্মিক বন্যার সতকর্তায় হাওর অঞ্চলের জেলা প্রশাসকদের সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।