জুমবাংলা ডেস্ক : নানা সময়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে ঝড়ে প্রাণহানির পরিমাণ কমে এসেছে।
সবশেষ চলতি বছরের ৯ নভেম্বর প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আঘাত হানে। এতে মারা যায় চারজন। অপরদিকে ভারতে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এর আগেও আরো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশে।
১৯৬০-২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট ৩৩টি বড় সাইক্লোনের ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। ঐতিহাসিক এসব ঘূর্ণিঝড় নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মেট্রোলজিক্যাল বিভাগ। এর মধ্যে ১৯৬০ সাল থেকে ২০০৭ সালে সিডর হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়গুলোকে ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মেট্রোলজিক্যাল বিভাগের তালিকার প্রথমে দেখা যায়, ১৯৬০ সালের ১১ অক্টোবর চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় হয়। যাতে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। এসময় ১৫ ফুটের মত জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল।
১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়:
১৯৬০ সালের পর আরো কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশে। যেগুলো সবই ছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড়। তবে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়টি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। সেবার ১২ নভেম্বর সবোর্চ্চ ২২৪ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রামে আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়। ফলে ১০ থেকে ৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। অসংখ্য গবাদি পশু এবং ঘরবাড়ি ডুবে গিয়েছিল। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল লাখ লাখ মানুষ। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, ১৯৭০ এর সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল।
১৯৮৮ এর ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস:
১৯৮৮ সালে হওয়া এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাংলাদেশে যে বন্যা হয়, তা ইতিহাসে অন্যতম সর্বনাশা বন্যা হিসেবে পরিচিত। ১৬০ কিমি. গতিতে ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের স্থলভূমিতে আঘাত করে এটি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সে সময় বাংলাদেশের পাঁচ হাজার ৭০৮ জন প্রাণ হারান।
১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়:
প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার। এটি মূলত চট্টগ্রামে আছড়ে পড়েছিল। এতে ১২ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছিল। ২৯ এপ্রিলের এই ঘূর্ণিঝড়কে আখ্যা দেওয়া হয় ‘শতাব্দীর প্রচণ্ডতম ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে। এতে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল বলে জানা যায়।
এরপর ১৯৯৭ সালের ১৯ মে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় হয়। এটি ২৩২ বেগে সীতাকুণ্ডে আঘাত হানে। এতে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। এরপর আরো কয়েকটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। তবে সেগুলো বাতাসের গতিবেগ ছিল কম।
ঘূর্ণিঝড় সিডর:
২০০৪ সাল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের কোনো নামকরণ করা হয়নি। ২০০৭ সালে এসে নামকরণ হয়। এই বছরের ১৫ নভেম্বর যে ঘূর্ণিঝড় হয় তার নাম সিডর। ২২৩ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা সিডরের তাণ্ডবে খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় ১৫-২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়। সিডরে রেডক্রসের হিসেবে ১০ হাজার মানুষ মারা গেছে বলা হলেও সরকারিভাবে ছয় হাজার বলা হয়।
ঘূর্ণিঝড় আইলা:
পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হলো ‘আইলা’। এটি ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে। যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
ঘূর্ণিঝড় মহাসিন:
ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ ২০১৩ সালের ১৬ মে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে। এটির গতি ছিল ১০০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড় কোমেন:
ঘূর্ণিঝড় কোমেন ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল ৬৫ কিলোমিটার। কোমেনের তাণ্ডবে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও ভারতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু:
রোয়ানু একটি ছোট ঘূর্নিঝড়, যা ২০১৬ সারে ২১ মে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে এবং ভারতে আংশিক আঘাত হানে। ধারনা করা হয় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ব্যাপ্তি ছিল দুটি বাংলাদেশের সমান আকৃতির।
ঘূর্ণিঝড় মোরা:
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় এটি। ২০১৭ সালের ৩০ মে কক্সবাজারে ১৪৬ কিমি. বেগে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মোরা। এর তাণ্ডবে হাজার হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। কক্সবাজারে বিদ্যুৎব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জমির ফসল এবং লবন চাষীদের জমাকৃত লবন নষ্ট হয়ে যায়। দুজন নারীসহ তিনজন মারা যায়। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।