বাংলাদেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন ব্যবস্থা অঙ্গীকারের সাথে শুরু হলেও বর্তমানে এটি গভীর সংকটের মুখোমুখি। প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে এই ব্যবসা পরিচালনা করতে চেয়েছিল, সেভাবে কিন্তু তা সফল হয়েছে না। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতি নির্ভরতা, সরকারী নীতির অস্থিতিশীলতা এবং অবৈধ ফোনের বিস্তার—এসব কারণে দেশের এই খাতটি আজ রুগ্ণ। দেশের যুবকদের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে এই শিল্পে নিযুক্ত হলেও, বর্তমান অবস্থায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
Table of Contents
মোবাইল ফোন উৎপাদন: সংকট এবং অবস্থা
বর্তমান বছরগুলোর মধ্যে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে যে, মোবাইল ফোন উৎপাদন সেক্টরে সংকট শুধু উৎপাদন পর্যায়ে নয়, বরং তারা বাজারেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। ২০১৭ সালে যেখানে ১৪টি প্রতিষ্ঠান একসাথে বাংলাদেশে ফোন তৈরির মজবুত ভিত গড়েছিল, সেখানে বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে এসেছে। মোবাইল ফোন উৎপাদনের খরচ নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে এবং এতে প্রকৃত মুনাফা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।
সরকারি প্রতিশ্রুতির অভাবে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একাধিক প্রতিষ্ঠান এমনকি উৎপাদন বন্ধ করে শুধুমাত্র সীমিত পরিসরের অ্যাসেম্বলিং করতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক সমিতির একটি সদস্য জানিয়েছেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল কর সুবিধা দেওয়ার, কিন্তু বাস্তবে কোন সুবিধা মিলছে না।
অবৈধ ফোনের প্রভাব: বাজারের পক্ষে বিপদ
অবৈধ ফোনের বাজার বিস্তার কার্যত স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে ২-৩ লাখ অবৈধ ফোন দেশের বাজারে প্রবেশ করে, যা বৈধ ফোনের বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। চোরাই ফোনের কারণে উৎপাদকরা ইতোমধ্যে ৫০% উৎপাদন কমিয়ে ফেলার কথা জানিয়েছেন।
এছাড়া, স্মার্টফোনের দাম কমানোর লক্ষ্যে যদি সরকার শুল্ক মামলা করেন, তাহলে এটি উৎপাদকদের জন্য খুবই সহায়ক হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের সামনে একাধিক বাধা রয়ে গেছে।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ব্যাংকিং সেক্টরের মনোভাব
মোবাইল উৎপাদনের পেছনে অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়াই এই খাতের সামনে আরেকটি সমস্যা। ব্যাংকের আর্থিক ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাচ্ছে এবং রফতানি নীতির অভাবে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে চিন্তিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের নীতিমালা যদি এই শিল্পকে সহযোগিতা না করে, তবে আগামী বছরগুলোতে মোবাইল উৎপাদন খাতের স্থায়ী সংকট সৃষ্টি হবে।
সরকারী নীতি ও সম্ভাবনা: একটি দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য মোবাইল ফোন উৎপাদন একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। দক্ষ শ্রমিক, বড় বাজার এবং অবকাঠামো সুবিধার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন একটি বাস্তবায়নযোগ্য জাতীয় ম্যানুফ্যাকচারিং পলিসি। বর্তমানে, যে খসড়া তৈরি হয়েছে, তা ২০২১ সাল থেকেই চূড়ান্ত হয়নি। এর ফলে উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বেড়েছে।
ক্ষমতাসীন সরকারের উচিত অত্যাবশ্যক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সঠিক নীতিমালা বাস্তবায়ন করা। এভাবে দেশীয় উৎপাদনকে সচল রাখা সম্ভব।
মোবাইল ফোনের উৎপাদনের সঙ্গে ২০-২৫ হাজার মানুষের জীবিকা ও ভবিষ্যৎ জড়িত। এই শিল্প যদি সংকুচিত হয়, তাহলে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই তাদের কর্মসংস্থান হারাবে। ইউনিয়নের মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে এই খাতের উন্নয়ন সাধন করা যায়।
বর্তমানের সংকট অতিক্রম করতে হলে, চোরাই ফোনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, ব্যাংক ঋণের সহজীকরণ এবং সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন খুবই জরুরি।
টেকনো ক্যামন ৪০ প্রো বনাম ইনফিনিক্স নোট ৫০: সেরা স্মার্টফোন নির্বাচন চলবে কিভাবে?
FAQs
১. বাংলাদেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনের বর্তমান অবস্থা কী?
বর্তমানে, মোবাইল ফোন উৎপাদন খাত গভীর সংকটে রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে এবং অবৈধ ফোনের বাজারে বিস্তার ঘটছে।
২. অবৈধ ফোনের বাজার বাংলাদেশে কীভাবে প্রভাব ফেলছে?
অবৈধ ফোনের বাজার এসে বৈধ ফোনের বিক্রি কমিয়ে দিচ্ছে, যা লোকাল উৎপাদকদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ।
৩. সরকারের কি কোনো সহযোগিতা রয়েছে মোবাইল উৎপাদনে?
সরকার কিছু প্রতিশ্রুতি দিলেও, বাস্তবে উৎপাদকদের জন্য কোন সুবিধা এখনও কার্যকর হয়নি।
৪. মোবাইল উৎপাদনের খাতে মানুষের কর্মসংস্থান কেমন?
মোবাইল ফোন উৎপাদনের সাথে ২০-২৫ হাজার মানুষ যুক্ত রয়েছে, যারা বিপদে পড়েছেন।
৫. ভবিষ্যতে এই শিল্পের কি সম্ভাবনা রয়েছে?
সঠিক নীতিমালা ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার মাধ্যমে এই খাতটি বড় সম্ভাবনা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।