ঢাকার অভিজাত এলাকায় যেকোনো সময় আপনার চোখে পড়তে পারে বিশ্বের সবচেয়ে অভিজাত গাড়ি রোলস রয়েস। কারণ, বাংলাদেশে এই অভিজাত গাড়ির বাজারজাত শুরু হয়েছে। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে আটটি রোলস রয়েস গাড়ি এনেছেন দেশের বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ ও গাড়ি ব্যবসায়ীরা।
দেশে গত দুই দশকে বাণিজ্যিকভাবে আমদানি হওয়া সবচেয়ে দামি গাড়ির তালিকায় এখন এ আটটি রোলস রয়েস। এসব গাড়ির সব কটিই রোলস রয়েসের বৈদ্যুতিক গাড়ি ‘স্পেক্টার’। একেকটি গাড়ির কেনা দামই পড়েছে চার থেকে সাড়ে চার কোটি টাকা। এর আগে আমদানি হওয়া সবচেয়ে দামি গাড়ি ছিল ‘ফেরারি’।
ব্রিটিশ বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রোলস রয়েস গত বছর প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারজাত শুরু করে। বাজারজাত শুরুর পর বাংলাদেশ থেকে আটটি গাড়ি কেনার জন্য বুকিং দেওয়া হয়। গত এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে এই আটটি গাড়ি দেশে পৌঁছেছে, যেগুলোর নির্মাণ সাল ২০২৪। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এসেছে চারটি। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এসেছে আরও চারটি।
রোলস রয়েসের গাড়ির আভিজাত্যের বড় বিষয় ছিল—শুধু টাকা থাকলেই হবে না, এই গাড়ি কেনার জন্য অনেকগুলো শর্ত মানতে হতো। এ ছাড়া বিক্রির আগে এ ধরনের গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার সক্ষমতাও বিবেচনায় নিত ব্রিটিশ কোম্পানিটি। তবে এক–দেড় দশক ধরে রোলস রয়েস গাড়ি বিক্রির সময় এসব শর্ত দিচ্ছে না। তাতে এখন যে কেউ টাকা থাকলে রোলস রয়েস গাড়ি কিনতে পারে। তবে বাংলাদেশে রোলস রয়েসের সবচেয়ে কম দামি কুলিনান ব্র্যান্ডের গাড়িতে শুল্ক–কর আসে অন্তত ২৫–৩৯ কোটি টাকা। বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্ক–কর অনেক কম। এ সুযোগে রোলস রয়েস গাড়ি আমদানি বাড়ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের হিসাবে আটটির মধ্যে তিনটি রোলস রয়েস এনেছে যথাক্রমে বসুন্ধরা মাল্টি ট্রেডিং লিমিটেড, ফারইস্ট স্পিনিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইসলাম নিট ডিজাইনস লিমিটেড। বাকি পাঁচটি আমদানি করেছে ঢাকার প্রিয়াঙ্কা ট্রেডিং লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল মোটরস, এশিয়ান ইমপোর্টস লিমিটেড, এ এম করপোরেশন ও ফোর হুইলস মোটরস।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্যবহারের জন্যই অভিজাত এই গাড়ি আমদানি করেছে। তবে গাড়ির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতার কাছ থেকে বুকিং নিয়ে আমদানি করেছে। গাড়ি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দুজন ক্রেতার নাম জানা গেছে। তার একটি বেক্সিমকো পরিবার, আরেকটি শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক ডিবিএল গ্রুপ। ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম রোলস রয়েস আমদানির বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর বেক্সিমকো পরিবারের কেনা গাড়িটি আগুনে পুড়ে যায়।
রোলস রয়েসের বৈদ্যুতিক মডেলের সর্বশেষ গাড়িটি গত ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করেছে ঢাকার ভাটারা এলাকার ফোর হুইলস মোটরস। এই বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানিমূল্য ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড। চট্টগ্রাম কাস্টমস গাড়িটির আমদানি মূল্য ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ধরে শুল্কায়ন করেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি হওয়ায় শুল্ক–করের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
তাতে শুল্ক–কর দিতে হয়েছে ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়িটি আমদানিতে সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি না হলে এই গাড়ির (চার হাজার সিসির বেশি ধরে) শুল্ক–কর দিতে হতো ৮২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ বা ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারবিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, রোলস রয়েসের তেলচালিত গাড়িগুলো ইঞ্জিনক্ষমতা সাধারণত ছয় হাজার সিসির বেশি হয়।
এসব গাড়ি আমদানিতে আমদানি মূল্যের চেয়ে সোয়া আট গুণ বেশি শুল্ক–কর দিতে হয়। বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্ক–কর কম, তাই ক্রেতারা কেনার সাহস করেছেন। এসব দামি গাড়ির ঋণপত্র খোলা হয় দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে। এখন এসব দামি গাড়ির ক্রেতা কম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।