বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্যে উত্থিত ‘ম্যাজিক রিয়ালিজম’ ধারণা বিশ্ব সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। বাস্তবতার সাথে অলৌকিকতার মিশ্রণ, স্বপ্নের জগতের সাথে জাগ্রত জীবনের একীভূত, এবং ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাসের সাথে আধুনিকতার সংঘাত – এই ধারণার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি বাংলা সাহিত্যেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
বাংলা সাহিত্যে ম্যাজিক রিয়ালিজমের প্রভাবের সূচনা
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্মে ম্যাজিক রিয়ালিজমের সূচনা লক্ষ্য করা যায়। ‘গোরা’, ‘গল্পগুচ্ছ’, ‘নষ্টনীড়’ ইত্যাদি উপন্যাসে তিনি অলৌকিকতাকে বাস্তবতার সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করেছেন। ‘চিড়িয়াখানা’ উপন্যাসটি ম্যাজিক রিয়ালিজমের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ, যেখানে প্রাণীরা মানুষের চিন্তাভাবনা ও আবেগ প্রকাশ করে।
আধুনিক যুগে ম্যাজিক রিয়ালিজমের প্রভাব
বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বাংলা সাহিত্যে ম্যাজিক রিয়ালিজমের প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হুমায়ুন আহমেদ, শওকত ওসমান, আবুল হাসান, আল মাহমুদ, শেখ আলী আদম, এবং শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো লেখকরা তাদের সাহিত্যকর্মে এই ধারণা ব্যবহার করেছেন।
‘মৃত্যুঞ্জয়’, ‘দুঃখী নগর’, ‘শঙ্করহুদা’ গ্রন্থে অলৌকিক ঘটনা, স্বপ্নের জগত এবং বাস্তবতার মিশ্রণ দেখা যায়। ‘কালো ঘোড়া’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘বৃষ্টির দিন’ গ্রন্থে প্রকৃতির সাথে মানুষের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক, লোককাহিনী ও ঐতিহ্যের প্রভাব, এবং অলৌকিকতার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
‘জটিল’, ‘জাহাজ ভেঙে’, ‘নীলনদী’ গ্রন্থে ইতিহাস, বাস্তবতা এবং কল্পনার মিশ্রণ দেখা যায়। ‘কালান্তর’, ‘আঁধারের আলো’, ‘মৃত্যুক্ষুধা’ গ্রন্থে মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন, মৃত্যু ও জীবনের দ্বন্দ্ব, এবং অলৌকিকতার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ‘মৃত্যুক্ষুধা’, ‘মহাপৃথিবী’, ‘অনন্ত অপেক্ষা’ গ্রন্থে মানবজাতির ইতিহাস, সভ্যতার উত্থান-পতন এবং অলৌকিকতার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।