জুমবাংলা ডেস্ক : প্রায় তিন দশক আগের জনপ্রিয় বাংলা নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’ রচনা করেছিলেন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। নাটকের মূল চরিত্র ‘বাকের ভাই’ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল দর্শকদের মনে। সেই চরিত্রে অভিনয়কারী সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রবিবার ( ১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডের নওরতন কলোনি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজধানীর মিরপুর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন আজ সোমবার এই আদেশ দেন।
এর আগে আজ বেলা তিনটায় কড়া পুলিশ পাহারায় আসাদুজ্জামান নূরকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে তাঁকে রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। সেখান থেকে মাথায় হেলমেট এবং শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। তখন তাঁর হতে হাতকড়া পরানো ছিল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ২৭ জন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলো।
নাট্য অভিনেতা হিসেবে খ্যাতিমান বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূর ২০০১ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি সংস্কৃতিমন্ত্রী হয়েছিলেন।
২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩—‘কোথাও কেউ নেই’-এর শেষ পর্ব প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। সারা দেশের দর্শক তুমুল আগ্রহ নিয়ে টিভি সেটের সামনে বসেছিল, ধারাবাহিকটির মূল চরিত্র বাকের ভাইয়ের পরিণতি দেখার জন্য। মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে। আগের পর্বে বদি [অভিনেতা আবদুল কাদের] মিথ্যা সাক্ষী দিতে গেছে আদালতে।
বাকেরের এই সাগরেদ কুত্তাওয়ালির হুমকিতে ভয় পেয়ে এই কাজ করেছে। পত্র-পত্রিকায় আগেই সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল, বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হবে। সেই খবরে রাস্তায় নেমেছিল দর্শক। তাদের হাতে ব্যানার, পোস্টার।
সেখানে লেখা ‘বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘বদির দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘বাকের ভাইয়ের ফাঁসি কেন, কুত্তাওয়ালি জবাব চাই।’
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নিজের সিদ্ধান্তে অনড়, বাকের ভাইকে তিনি ফাঁসি দেবেনই। দর্শকদের দাবির মুখে নিজের পরিকল্পনা থেকে তিনি সরে আসবেন না। শোনা যায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ফোন করে ধারাবাহিকটির প্রযোজক বরকতউল্লাহকে বলেছিলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদকে বলুন, বাকের ভাইকে বাঁচিয়ে রাখা যায় কি না…।’ হুমায়ূন আহমেদ তবু রাজি হননি।
শেষ পর্বটি প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল আগের সপ্তাহেই। উত্তেজিত দর্শক শুটিং সেটে হামলা চালাতে পারে, এই ভয়ে শুটিং পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই শেষ পর্বটি প্রচারিত হলো নির্ধারিত দিনের পরের সপ্তাহে। সেদিন সন্ধ্যা নামার পর পুরো ঢাকা শহরে নেমে আসে নীরবতা, যেন অঘোষিত কারফিউ। প্রভাব পড়েছিল দেশের অন্য শহর, এমনকি মফস্বলেও।
শেষ দৃশ্যে বাকেরের ফাঁসি হওয়ার পর সেদিন টিভি সেটের সামনে থাকা অনেক দর্শক নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। যেন বাস্তবের কোনো নায়ককে হারিয়ে ফেলেছে তারা। মুনারূপী সুবর্ণা মুস্তাফার কান্না ছুঁয়ে গিয়েছিল দর্শকদের। ভোরে কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে মুনা। জেলার এসে জানতে চান, ‘আপনি আসামির কী হন?’ উত্তরে মুনা বলেন, ‘আমি ওর কেউ না।’ মুনার মুখের এই সংলাপ দর্শকের হৃদয়ে হাহাকার বাড়িয়ে দেয়।
বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে অভাবনীয় জনপ্রিয়তা পান আসাদুজ্জামান নূর। সেই বাকের ভাই আজ সত্যি সত্যি হত্যা মামলার আসামী হয়ে জেলে গেলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।