বাখমুত কি রাশিয়ার দখলে?
রওশন প্রধান : সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। আস্তে আস্তে হলেও শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে রুশ বাহিনী।
সর্বশেষ শুক্রবার খোদ ইউক্রেনীয় বাহিনীর এক কমান্ডার ও এক সরকারি কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, বাখমুতে থাকা ইউক্রেনীয় ড্রোন ইউনিটকে অবিলম্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাখমুতের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী শহর চাসিভ ইয়ারের মধ্যে সংযুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজও উড়িয়ে দিয়েছে রুশ বাহিনী। ব্রিজটি বাখমুত ও চাসিভ ইয়ারের মধ্যে রসদ সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রধান একমাত্র রুট ছিল।
ইউক্রেনের প্রধান মিত্র ও চলমান যুদ্ধে প্রধান অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন বলছে, ব্রিজটি উড়িয়ে দেওয়ার কারণে বাখমুতে থাকা বেসামরিক লোকজন ও যুদ্ধাস্ত্র নিয়েও সহজে বের হতে পারবে না ইউক্রেনীয় বাহিনী। এর জন্য তাদের ব্যবহার করতে হবে কর্দমাক্ত মেঠো পথ।
বাখমুতের একজন সেনা এবং একজন স্থানীয় কর্মকর্তা সিএনএন-কে বলেছেন, সেতুটি রাশিয়ার সেনারা সরিয়ে নিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এ সংক্রান্ত একটি ছবি সেতুটি ধ্বংসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ওই সেনা সদস্য বলেন, সেতুটি একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। তার মতে, সেতুটি ধ্বংসে একটি ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে রুশ বাহিনী।
স্থানীয় ওই কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, আগামী দিনে তারা সেতুটি মেরামত করার আশা করছেন।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, দোনেৎস্ক অঞ্চলে আগেই বাধ্যতামূলকভাবে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যদিও প্রায় ৫ হাজার মানুষ বাখমুতে রয়ে গেছে।
খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ান বাহিনী আস্তে আস্তে বাখমুত শহরের প্রাণকেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা এখনও পূর্বাঞ্চলীয় শহরটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং শত্রুদের হামলা প্রতিহত করছে।
তবে এমন দাবি করলেও দোনেৎস্ক অঞ্চলের এই শহরটি থেকে নিজেদের ড্রোন ইউনিট দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইউক্রেন। দেশটির এক কমান্ডারের বরাত দিয়ে পৃথক প্রতিবেদনে এমন খবর দিয়েছে সিএনএন।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, শুক্রবার টেলিগ্রামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে ইউক্রেনের ওই কমান্ডার বলেছেন, বাখমুতে অবস্থিত একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন রিকনেসান্স ইউনিটকে অবরুদ্ধ পূর্বাঞ্চলীয় শহরটি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবার্ট ব্রোভডি নামের এই কমান্ডার বলেছেন, ‘গভীর রাতে মাদিয়ার বার্ডস ইউনিটকে অবিলম্বে বাখমুত ছেড়ে নতুন একটি যুদ্ধ-অভিযানে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আদেশ অনুসরণ করছি।’ তবে কেন ইউনিটটি সরানো হচ্ছে, তা তিনি জানেন না বলেও উল্লেখ করেন ব্রোভডি।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ান বাহিনী গত কয়েক দিন ধরে বাখমুতের দিকে অগ্রসর হয়েছে। তবে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিগত কয়েক মাস ধরে তীব্র গোলাবর্ষণ এবং বিধ্বস্ত শহরটির চারপাশে দুই পক্ষের লড়াই চলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দোনেৎস্ক অঞ্চলের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এ শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে রাশিয়ার জন্য যুদ্ধে বিজয় লাভ করা অনেকটা সহজ হবে।
সিএনএন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত শহরটি চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ। এমনকি কিছু সেনা বর্তমানে শহরটির ভেতর ঢুকে পড়েছে। শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছে রাশিয়া।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, বাখমুত এখন কার্যত ঘিরে ফেলা হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, নিজের সেনাদের প্রাণ বাঁচাতে হলে তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করুন। কারণ বর্তমানে বাখমুত ছাড়ার জন্য ইউক্রেনীয় সেনাদের মাত্র একটি পথ খোলা আছে।
অবশ্য ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। তবে বাখমুতের পরিস্থিতি যে ভয়াবহ এবং রুশ বাহিনী যে শহরটির খুব কাছাকাছি পৌঁছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকেই সেটা স্পষ্ট হচ্ছে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এতদিনই বাখমুত রক্ষায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি করা হয় এবং সেই দাবির সত্যতাও অস্বীকার করার মতো যথেষ্ট তথ্যও ছিল না। তবে দুই দিন আগে খোদ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের এক শীর্ষ উপদেষ্টা স্বীকার করেন যে, প্রয়োজন হলে তারা সেনাদের বাখমুত থেকে সরিয়ে নেবেন। কারণ শুধু শুধু সেনাদের আমরা বলি দিতে পারি না। তার ওই কথাতেই এটা স্পষ্ট হয়েছিল যে, রুশ বাহিনীর মোকাবিলায় টিকতে পারছে না ইউক্রেনীয় বাহিনী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সবকিছু বিবেচনায় নিলে কার্যত বাখমুত এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে, অথবা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারলেও শহরের চারদিকে রুশ বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। যুগান্তর
খোলামেলা দৃশ্যে ভরপুর এই ওয়েব সিরিজ, ভুলেও কারও সামনে দেখবেন না
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।