জুমবাংলা ডেস্ক: বোরকা পরা অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, হাসপাতাল, বাস স্টপেজে ঘুরে বেড়ান তারা। এসব জায়গায় বোরকাতে শরীর ঢেকে চললেও আড়ালে এসব নারী আসলে পকেটমার হিসেবে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করেন।
আর এই নারী পকেটমাররা কৌশলে নারীদের ব্যাগ থেকেই উঠিয়ে নেন মোবাইল ফোন, টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার। এসব পকেটমাররা মোবাইল ফোনগুলো বিক্রি করেন বিভিন্ন এলাকার মহাজনদের কাছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ টিম ৯ জন পকেটমার ও ৭ জন মহাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন মডেলের ৪০টি মোবাইল ফোন।
গ্রেপ্তার এই ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে এ সব তথ্য জানিয়েছেন ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান।
দুটি মোবাইল ফোন হারানোর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে নারী পকেটমারদের সন্ধান পেয়েছে ডিবি। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল একজন এডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজের স্ত্রী নিউমার্কেট থেকে রিকশায় ইডেন মহিলা কলেজে যাওয়ার পথে এক পর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে হারিয়ে ফেলেন আইফোনটি। ফোনটি উদ্ধার করে ডিবি।
গত ২ মে একজন সিনিয়র সাংবাদিকের স্ত্রী তার সন্তানকে স্কুল থেকে আনার জন্য যান আজিমপুরের ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলে। স্কুলের গেইটে হঠাৎ দেখেন তার ব্যাগের চেইন খোলা; মোবাইলটি নাই। ১৪ মে ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে দেয় আইফোনটি।
মশিউর রহমান জানান, রমনা এবং লালবাগ বিভাগে অবস্থিত বিভিন্ন মার্কেট, হাসপাতাল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা নারীদের ব্যাগ বা পকেট কেটে মোবাইল ও টাকা বিশেষ কৌশলে চুরি করার জন্য গড়ে উঠেছে নারী পকেটমারের একটি বড় চক্র।
তিনি বলেন, এরা বোরকা পরে, পর্দানশীল সেজে কখনো ছোট বাচ্চা কোলে নিয়ে স্নেহময়ী মায়ের অভিনয় করে সহসাই ঢুকে যায় জনারণ্যে। চোখের পলকে হাতিয়ে নেয় মোবাইল, নগদ টাকা ও ব্যাগে থাকা স্বর্ণালঙ্কার।
ডিবি লালবাগ বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের সদস্যরা মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আশপাশের এলাকা এবং গুলিস্তান এলাকায় তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ৯ জন নারী পকেটমারসহ মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দখল থেকে বিভিন্ন মডেলের ৪০টি চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার নারীরা হলেন বর্ষা আক্তার অরফে মীম, সুমি আক্তার অরফে প্রিয়া, শাবনুর, আলেয়া অরফে আলো, সাথী আক্তার, মোছা. ছকিনা বেগম, সুজনা আক্তার অরফে সুজিনা আক্তার অরফে রুশকিনা, মোসা. তানিয়া খানম ও তাসলিমা খাতুন।
চোরাই মোবাইল কেনা-বেচায় জড়িত গ্রেপ্তার মহাজনরা হলেন মো. মাহাবুব হোসেন, মো. মোক্তার হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মো. ইমরান হোসেন, ছৈয়দ হালদার, মো. আশরাফ ঢালী ও মো. জাকির হোসেন।
ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বর্ষা আগে কাজ করেছেন ডিজে শিল্পী হিসেবে। পরবর্তীতে বান্ধবীদের হাত ধরে নতুন মডেলের মোবাইল পাওয়ার আশায় যুক্ত হন মোবাইল পকেটমারির কাজে। গত পাঁচ বছরে এ কাজ করে ধরা খেয়েছেন তিনবার, ছাড়া পেয়ে একই কাজে ফিরেছেন।
১০ বছর বয়স থেকে মাকে পকেটমারির কাজ করতে দেখে এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার সংকল্প করেন আলেয়া আক্তার আলো। গত ৮-৯ বছর ধরে দক্ষিণ ঢাকার বিভিন্ন জায়গা করে আসছেন পকেটমারির কাজ। তার সাথে যুক্ত হয়েছেন সুমি আক্তার প্রিয়া।
মশিউর রহমান বলেন, বর্ষা,আলো,প্রিয়া- এই তিন নারী পকেটমার গাউছিয়া মার্কেট, নিউমার্কেট, ইডেন কলেজ, বকশিবাজারস্হ বদরুন নেসা মহিলা কলেজ, আজিমপুরস্থ ভিকারুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কোনো দিন একেকজন ৭টি পর্যন্ত মোবাইল চুরি করেছেন।
ডিবি জানিয়েছে, আইফোন বাদে অন্য ফোনের জন্য তাদেরকে দেয়া হয় ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। আর আইফোনের জন্য দেয়া হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, চুরি করা মোবাইলগুলো থেকে বাটন মোবাইলগুলো বিক্রি হয় নিম্ন দামে। আইফোনগুলোর যন্ত্রাংশ খুচরা দামে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া আইএমইআই পরিবর্তন করেও বিক্রি করা হয়।
মার্কেট, স্কুলের ফটক, হাসপাতাল বা বাস স্টপেজে থাকা অবস্থায় নিজের মালামাল নিয়ে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে ডিবি।
মোবাইল বা অন্য জিনিস চুরি বা হারিয়ে গেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি বা মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন মশিউর রহমান। তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া ৪০টি মোবাইলের মধ্যে মাত্র একটি ফোন হারানোর জিডি পাওয়া গেছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে কখনও না কখনও সুফল পাওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।