বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বাজার নিয়ন্ত্রণে নতুন অ্যাপ আনছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এতে কারখানা থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত কোথায় কতটুকু তেল-চিনি থাকলো, কতদিন পর হাত বদল হলো, তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য তাৎক্ষণিক জানতে পারবে সংস্থাটি।
বিক্রেতাকে পণ্যমূল্য পরিশোধ করছেন এক ক্রেতা।
সরবরাহে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কিংবা কোনো আশঙ্কায় চাহিদা বাড়িয়ে বাজার কারসাজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা হিসাবে একবার গরমিল করতে পারলেই বাজার থেকে চড়ামূল্যে পণ্য কিনতে বাধ্য হন ক্রেতারা। অথচ সহজ এ টোটকায় ভোক্তার কষ্টার্জিত টাকা ঠিক কার পকেটে ঢোকে তা থেকে যায় অধরা।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বাজারব্যবস্থার কোনো একটি পর্যায় যদি ব্লক করে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে দেয়া হয়, তাহলে সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়; বরং আইন বিরোধী।
তাই বিপণন ব্যবস্থার চিরচেনা এ দুর্বলতাই দূর করতে চায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। বাজার নিয়ন্ত্রণের এ কাজটি করতে অ্যাপ আনার পরিকল্পনা করছে তারা। সংস্থাটি বলছে, অ্যাপ তৈরির ব্যাপারে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে চিঠিও দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
একটি কারখানায় কবে কতটুকু ভোজ্যতেল ও চিনি উৎপাদন করা হলো; এরপর কত দামে কী পরিমাণ পণ্য কার হাতে গেল, সেখান থেকে আবার কতক্ষণ বা কতোদিন পর কতটুকু পণ্য কত দামে হাতবদল হলো – জেলা পর্যন্ত এ সরবরাহ ব্যবস্থার হালনাগাদ তথ্য থাকবে ওই অ্যাপে।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘এ অ্যাপসের মাধ্যমে আমরা জানবো যে উৎপাদনকারী কতটুকু উৎপাদন করেছে; সেখান থেকে কতটুকু সরবরাহ ব্যবস্থায় গেল; কার কাছে সেই পণ্য সরবরাহ করা হলো এবং কোন জেলায় গেল।আমরা এ জিনিসগুলো যখন ট্র্যাক করতে পারব, তখন এটির সঙ্গে আমরা আমাদের জেলা প্রশাসকদের যুক্ত করব। জেলা প্রশাসক জানতে পারবেন যে, তার জেলায় এত ট্রাক চিনি বা এত ট্রাক তেল আসছে; সেই সঙ্গে তিনি জানবেন সেটি কে নিয়ে আসছে; কোন বাজারে যাচ্ছে। তাহলে এই যে বিপণন ব্যবস্থার অনেক ক্ষেত্রে ব্লক তৈরি করে বাজার অস্থির করে দেয়ার বিষয়টি, সেটি আর থাকবে না। পাশাপাশি আমরা মিল থেকে পাওয়া তথ্য থেকেও বুঝতে পারবো যে, তারা আসলে কতটুকু উৎপাদন করে বা তারা কোথাও পণ্য মজুত করে বাজার অস্থির করছে কি না। আমরা এসব বিষয় এ অ্যাপ দিয়ে ধরতে পারবো।’
বাজার অস্থিরতা রুখতেই এ অ্যাপ তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘একটি অ্যাপ তৈরি করতে হলে বাজার ব্যবস্থার খাত সংশ্লিষ্টদের তথ্যাদি নিতে হবে; তাদের সঙ্গে লিংক করতে হবে। সুতরাং, সেখানে যদি তাদের সহযোগিতা পাওয়া যায়, তাহলে আমার তো মনে হয় এটি সর্বোচ্চ তিন থেকে চার মাসের মধ্যে করা সম্ভব।’
এদিকে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তার হাতে পণ্য পৌঁছাতে এভাবে তথ্য সরবরাহের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে।
এ প্রসঙ্গে আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেডের হেড অব সেলস মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মিলে কী পরিমাণ উৎপাদন হলো; কার কাছে বিক্রি করা হলো; কত দামে বিক্রি হলো – এসব তথ্য আমরা পরিষ্কারভাবে সংরক্ষণ করছি। বাকিটা সরকার বাজারে নিয়ন্ত্রণ করবে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা কোত্থেকে কত টাকায় কিনে বা বিক্রি করে, সেটি ঠিক রয়েছে কি না, তা সরকার দেখবে। সরকার যদি অ্যাপ করার পরিকল্পনা করে থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই এটিকে সাধুবাদ জানাবো। আমরা তো ব্যবসা করি। আমরা এখানে স্বচ্ছতার সঙ্গেই ব্যবসা করি। এখন আমাদের যে পরিমাণ মার্জিন হওয়া দরকার সে পরিমাণ মার্জিন হলে, আমাদের তো এখানে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকে না।’
তিনি আরও বলেন, এ অ্যাপ আসলে বাজারের অস্থিরতা কমে যাবে। কারণ বাজারে বর্তমানে যে অস্পষ্টতা রয়েছে, যেমন পাইকারি বা খুচরা ব্যবসায়ীরা কত টাকায় পণ্য কিনেছে বা বিক্রি করেছে, সেটি এখন খোলাসা হয়ে যাবে।
অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ বলছে, বিপণন কাঠামো সঠিক তথ্যনির্ভর হলে বাজার অস্থিরতা দূর করার পাশাপাশি দেশের কোন অঞ্চলে কী পরিমাণ পণ্য দরকার, সেই হিসাবও জানা যাবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘কতটুকু পণ্য মজুত রয়েছে বা কতটুকু সরবরাহ করা হয়েছে বা দাম কত এবং কোথায় কোন পণ্যটি রয়েছে – বাজার স্থিতিশীল করতে এসব তথ্য জানা প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো জেলায় সরবরাহ কম থাকে বা কোনো কোনো জেলায় সরবরাহ বেশি থাকে। এ কারণে অনেক সময় সংকট তৈরি হয়। কাজেই আমি মনে করি, এ সরবরাহ ব্যবস্থায় যদি সম্পূর্ণ তথ্য স্বচ্ছভাবে অ্যাপের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়, তাহলে বাজারে অস্বচ্ছতা দূর হবে; বাজারে স্থিতিশীলতা তৈরি হবে।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা প্রশাসন পর্যন্ত যুক্ত করা এ অ্যাপের তথ্য ভান্ডারে পরবর্তীতে কোন বাজারের কোন দোকানে কী পরিমাণ পণ্য গেল, সেই তথ্য-উপাত্তও যুক্ত করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।