জুমবাংলা ডেস্ক : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০০ প্রকল্প কথা রাখেনি। ৩৭৭টি প্রকল্প শেষ করার কথা বলে বরাদ্দ নিয়ে ২৭৭টি প্রকল্প কাজ শেষ করে। চলতি অর্থবছরেও এবার ৩৩০টি সমাপ্তযোগ্য প্রকল্প শেষ হবে বলে কথা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। প্রকল্পগুলো শেষ করতে নিয়েছেন পর্যাপ্ত বরাদ্দও।
তবে এবারও সব প্রকল্প শেষ হওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। এদিকে যেসব প্রকল্প শেষ করা হচ্ছে সেগুলোরও শতভাগ কাজ না করেই শেষ করা হচ্ছে। যার ফলে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যও হাসিল হচ্ছে না। আর উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ পেলেও ১ শতাংশও খরচ করতে পারেনি শতাধিক প্রকল্পে উল্লেখ করে সংবাদ করেছে দৈনিক কালের কণ্ঠ।।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া এনইসি সভা শেষে পরিকল্পনাসচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ৩৩০টি প্রকল্প চলতি অর্থবছরে শেষ করতে বলেছেন। ওই ৩৩০টি প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে দেশি-বিদেশি তহবিল প্রস্তুত থাকায় ওই প্রকল্পগুলো সময়সীমার মধ্যে শেষ হবে। যেসব চলমান প্রকল্প বরাদ্দ বাড়ানো হলে দ্রুত সমাপ্ত করা সম্ভব হবে, সেসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে আরো নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেন তিনি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ৩৩২টি প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা থাকায় তারা সময় চেয়েছে। এবং বাকি ৩৩০টি প্রকল্প জুন ২০২৪-এর মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এবং প্রকল্প শেষ করতে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
যদিও আগের বছরগুলোতেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। গত অর্থবছরে ৩৭৭টি প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয় ২৭৭টি। বাকি ১০০ প্রকল্প চলতি বছরের এডিপিতে রয়েছে। এ বিষয়ে আইএমইডির একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সব সচিব প্রতিশ্রুতি দিলেও বছর শেষে দেখা যাবে অনেক প্রকল্পই শেষ করতে পারবে না। আবারও কিছু সময় বাড়ানোর আবেদন করবে। গত কয়েক বছর ধরে এ চিত্রই দেখে আসছি।’ এদিকে যারা প্রকল্প শেষ করেছে, তারাও পুরো কাজ না করেই প্রকল্প সমাপ্ত দেখিয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমার গ্রাম আমার শহর কারিগরি সহায়তা প্রকল্প। যার ওপর নির্ভর করছে মূল প্রকল্পের সফলতাও।
যে প্রকল্পটি সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারও ছিল। সেই প্রকল্পটির পুরো কাজ শেষ না করেই দেওয়া হয়েছে রিপোর্ট। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৯ শতাংশ, আর বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশ। এ ছাড়া ডেমোস্ট্রেশন অব বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট অ্যাকটিভিটিস প্রকল্পটির ৩৪ শতাংশ এবং স্টাবলিশমেন্ট অব সিএ মনিটরিং সিস্টেম অ্যান্ড সিকিউরিটি ইন দ্য অফিস অব দ্য কন্ট্রোলার অব সার্টিফায়িং অথরিটিস শীর্ষক প্রকল্পটির ৩৭ শতাংশ কাজ করেই প্রকল্প শেষ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এমন শতভাগ কাজ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে ১১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প। শুধু তাই নয়, এগুলোর মধ্যে কোনোটির আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি ৩০ শতাংশের নিচেও আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এভাবে প্রকল্প গ্রহণ এবং শেষ করাটা অর্থ ও সময় উভয় ক্ষেত্রেই অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূল লক্ষ্য পূরণ না-ও হতে পারে।
আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৩৭৭টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত শেষ হয়েছে ২৬৪টি প্রকল্প। এ ছাড়া শেষ করার জন্য নির্ধারিত না থাকলেও ওই সময়ের মধ্যে শেষ করা হয়েছে ১৩টি প্রকল্প। সব মিলিয়ে মোট সমাপ্ত প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৭টি। কিন্তু এগুলোর মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে ১৬০টির। বাকি ১১৭টি প্রকল্পের কাজ শতভাগ হয়নি।
আইএমইডি সূত্র জানায়, প্রতি অর্থবছর সংশোধিত এডিপিতে একই ঘটনা ঘটছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে শতভাগ কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত করা হয়েছে ১৮৬টি প্রকল্প। ওই অর্থবছরে মোট বাস্তবায়ন হয় ৩৩৬টি প্রকল্প। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে কাজ বাকি রেখেই সমাপ্ত ঘোষিত প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ১২৪টি। ওই অর্থবছরে মোট বাস্তবায়ন হয় ২৬৪টি। এর মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল ১৪০টি প্রকল্প।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে শতভাগ কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় ৯২টি প্রকল্প। সে সময় মোট বাস্তবায়ন হয়েছিল ১৮২টি। এর মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়া প্রকল্প ছিল ৯০টি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কাজ অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত করা হয় ১৫৭টির। ওই অর্থবছরে মোট বাস্তবায়ন করা হয় ৩১২টি প্রকল্প। এর মধ্যে শতভাগ করা হয়েছিল ১৫৫টির। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ নিয়েও খরচ করতে পারেনি ১০৪ প্রকল্প।
প্রকল্পগুলো এক হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে বসে ছিল। আর ৭৫টি প্রকল্প আট হাজার ৬০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে খরচ করেছে মাত্র ৩.৬৪ শতাংশ। শুধু গত অর্থবছরেই নয়, ২০২১-২২ সালে ১০১ প্রকল্প, ২০২০-২১ সালে ১১৭ প্রকল্প, ২০১৯-২০ সালে ১৮৬ প্রকল্প বরাদ্দ নিয়ে খরচ করতে পারেনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।