জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পিত বেশ কিছু প্রকল্প বাতিল বা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্র্বতী সরকার। এর মধ্যে রয়েছে সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের নির্বাচনী এলাকা রাজবাড়ীতে রেল কারখানা নির্মাণ, কিশোরগঞ্জে হাওরে উড়ালসড়ক এবং বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প। মোট ৩৫টি প্রকল্প বাতিল অথবা স্থগিত হতে যাচ্ছে, যার মোট ব্যয় ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি।
পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনায় এসব প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে, যেগুলো রাজনৈতিক কারণে নেওয়া হয়েছিল এবং সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। বর্তমান সরকার প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা, পরিবেশের ওপর প্রভাব এবং জনগণের উপকারিতা বিবেচনা করে এগুলো বাতিল করছে।
বিগত সরকারের সময়ে নেওয়া প্রকল্প তিনটি দিক বিবেচনা করে বাতিল করা হচ্ছে। এক. প্রকল্পটি কতটা মানুষের প্রয়োজনে নেওয়া হয়েছে। দুই. প্রকল্প থেকে রিটার্ন (সুফল) কেমন আসবে। তিন. প্রকল্পটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কি না।
রেলওয়ে বিভাগের দুটি পুরনো কারখানা আধুনিকায়ন না করে রাজবাড়ীতে নতুন রেল কারখানা নির্মাণের প্রকল্পটি বাতিল করা হচ্ছে। এছাড়া, কিশোরগঞ্জের হাওরে নির্মাণাধীন উড়ালসড়ক প্রকল্পের অর্থায়ন স্থগিত হতে পারে, কারণ এতে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে এবং যানবাহনের চলাচল নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
রেল, সড়ক, সেতু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, বিগত সরকারের সময়ে নেওয়া প্রকল্প তিনটি দিক বিবেচনা করে বাতিল করা হচ্ছে। এক. প্রকল্পটি কতটা মানুষের প্রয়োজনে নেওয়া হয়েছে। দুই. প্রকল্প থেকে রিটার্ন (সুফল) কেমন আসবে। তিন. প্রকল্পটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কি না। তিনি আরও বলেন, অনেক প্রকল্প শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশে নেওয়া হয়েছে। সে প্রকল্পগুলো বাতিল হবে।
অতিরিক্ত খরচ এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে কিশোরগঞ্জের হাওরে ৫ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে উড়ালসড়ক, সুনামগঞ্জে আরেকটি উড়ালসড়ক, মৌলভীবাজারে সাফারি পার্ক নির্মাণ, ফরিদপুরে পার্ক নির্মাণ, এবং নেত্রকোনা ও নবাবগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন। এছাড়া, ফরহাদ হোসেনের উদ্যোগে মেহেরপুরে মেরিটাইম ইনস্টিটিউট নির্মাণের প্রস্তাবও বাতিল হচ্ছে।
এছাড়া, ২০১৮ সালে শুরু হওয়া “প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন প্রচার” প্রকল্পটি, যার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কাজ প্রচার করার কথা ছিল, ইতিমধ্যে ১৩ কোটি টাকা খরচ হওয়ার পরও বাতিল হয়েছে।
কৃষি গবেষণা, হাইটেক পার্ক নির্মাণ এবং দুর্যোগে ব্যবহৃত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের মতো প্রকল্পগুলোও বাতিল কিংবা স্থগিত হতে পারে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া মুজিব কিল্লা প্রকল্পের বেশ কিছু কেন্দ্রের নির্মাণকাজ প্রাথমিক অবস্থাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্প (এমআরটি লাইন-৫) বাতিল হতে পারে। এই প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল এবং ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে- এই প্রকল্পের প্রভাবশালী আবাসন ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছিল। এর বদলে গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের বাজেটের ক্ষেত্রে অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যদিও এতে কিছু খাতে কর্মসংস্থান এবং পণ্যের চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সাবেক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার এখন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পে অর্থায়ন বৃদ্ধি করা উচিত, যেমন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও দরিদ্রদের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা।
সব মিলিয়ে, অন্তর্র্বতী সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় বা রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং পরিবেশের জন্য ইতিবাচক হতে পারে, তবে এতে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সুবিধা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।