সৌরজগতের বাইরে বিজ্ঞানীরা যখন বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান করেন, তখন বেশকিছু বিষয় আমলে নিতে হয়। গ্রহটি তার নক্ষত্রের বাসযোগ্য অঞ্চলে আছে কি না, এর গঠন গ্যাসীয় না পাথুরে, বায়ুমণ্ডল আছে কি নেই—এমন সব বিষয় দেখতে হয়। এ ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য দেখতে হয়। সেটা হলো, গ্রহটির মহাকর্ষ কতটা শক্তিশালী।
গ্রহপৃষ্ঠে মহাকর্ষ খুব হালকা হলে ঠিকমতো হাঁটতে পারবেন না। হয়তো এক কদম তুলে আরেক কদম ফেলার আগেই নিজেকে আবিষ্কার করবেন শূন্যে। আবার মহাকর্ষ অনেক বেশি হলেও ঝামেলা। শরীরের সমস্ত রক্ত গিয়ে জমা হবে পায়ের অংশে। পা যদি ততক্ষণ মাটিতে (গ্রহের পৃষ্ঠে) থাকে আরকি! এখানেই শেষ নয়, শক্তিশালী মহাকর্ষের কারণে শরীরের সব হাড় ভেঙে যেতে পারে। পুরোপুরি চ্যাপ্টা অবস্থায় আপনার ঠাঁই হতে পারে গ্রহের পৃষ্ঠে। তাই বাসযোগ্য গ্রহ সন্ধানের সময় মহাকর্ষ কেমন শক্তিশালী, তা গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল রাখা হয়।
এমন কেন হবে, তা বুঝতে হলে ভর ও ওজন নিয়ে একটু জানা দরকার। একদম সহজ করে বললে, কোনো বস্তুতে কী পরিমাণ পদার্থ আছে, তার পরিমাপ হচ্ছে ভর। এটিকে কিলোগ্রাম এককে পরিমাপ করা হয়। ভর স্থান নিরপেক্ষ। অর্থাৎ মহাবিশ্বে যেখানেই যান না কেন বস্তুর ভর একই থাকবে। অবশ্যই, শর্ত সাপেক্ষে। তার মানে, পৃথিবীতে আপনার ভর যদি ৬০ কিলোগ্রাম হয়, চাঁদেও আপনার ভর ৬০ কিলোগ্রামই হবে।
তবে, ওজনের বিষয়টি ভিন্ন। বস্তুর ভরকে অভিকর্ষজ ত্বরণ দিয়ে গুণ করলে পাওয়া যায় ওজন। এটি পরিমাপের জন্য নিউটন একক ব্যবহার করা হয়। ভরের মতো ওজন কিন্তু স্থান নিরপেক্ষ নয়। কারণ স্থান পরিবর্তন করা মাত্রই বদলে যায় ওই স্থানের (পড়ুন, গ্রহ বা উপগ্রহের) অভিকর্ষজ ত্বরণ। ফলে ওজনও যাবে বদলে। এ কারণে, পৃথিবীতে আপনার ওজন ৬০×৯.৮ = ৫৮৮ নিউটন হলে, মঙ্গল গ্রহে আপনার ওজন হবে মাত্র ২৮৮ নিউটন। এর কারণ মঙ্গল পৃষ্ঠে মহাকর্ষ ত্বরণের মান প্রতি সেকেন্ডে ৩.৮ মিটারের মতো।
আবার বৃহস্পতিতে আপনার ওজন বেড়ে হবে প্রায় ১ হাজার ৪৮৮ নিউটন। কারণ, বৃহস্পতিতে মহাকর্ষ ত্বরণের মান প্রায় ২৪.৭৯ মিটার/বর্গসেকেন্ড। তাই পৃথিবীর প্রায় তিন গুণ ওজন হবে এই গ্রহে। বুঝতেই পারছেন, ওজন এভাবে বেড়ে গেলে কী হতে পারে। মানবদেহ খুবই নমনীয় ও ভঙ্গুর। অতিরিক্ত ওজন নিমিষেই একে চিড়ে চ্যাপ্টা বানাতে সক্ষম। এ কারণেই বেশি মহাকর্ষ বলবিশিষ্ট গ্রহে নিজের ওজনেই চিড়ে চ্যাপ্টা হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
তাই গ্রহান্তরে বেরিয়ে পড়ার আগে আমাদের জানতে হবে, মানবদেহ ঠিক কী পরিমাণ মহাকর্ষ বল সহ্য করে টিকে থাকতে পারবে। বিজ্ঞানীরা এই সীমা নির্ধারণের চেষ্টা অনেক আগে থেকেই করছিলেন। ২০১৯ সালে দ্য ফিজিক্স টিচার্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে ক্রোয়েশিয়ান তিন পদার্থবিজ্ঞানী বিষয়টার একটি সমাধান করেছেন বলে দাবি করেন।
তাঁদের গবেষণাপত্র অনুযায়ী, মানুষ পৃথিবীর চেয়ে প্রায় সাড়ে চার গুণ শক্তিশালী মহাকর্ষ বল আছে, এমন পরিবেশেও দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারবে। আপনি যদি দানব পর্যায়ের শক্তিশালী মানুষ হন, তাহলে হয়তো অর্ধ মেট্রিক টন বাড়তি ওজন কাঁধে নিয়েও বহাল তবিয়তে হাঁটতে পারবেন। তবে সাধারণ গড়পড়তা মানুষের জন্য সেটা সম্ভব নয়। অন্তত গবেষকদের তা-ই ধারণা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।