আবু সৈয়দ (সাঈদ), বেরোবি : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উত্তরবঙ্গের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। রোজা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন বিকেল হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠগুলো রোজাদার শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় ।
রমজান মাস মুসলমানদের কাছে সংযম, ত্যাগ ও ইবাদতের একটি বিশেষ মাস। এই মাসে মুসলিমরা তাদের সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্যে সারাদিন রোজা রাখেন। আর সারাদিন রোজা রাখার পর বিকাল বেলা যখন সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে তখন ঘনিয়ে আসে রোজাদারদের ইফতারের সময়।ইফতারের এই মুহূর্তটি রোজাদারদের কাছে অন্যতম একটি মূহুর্ত। আর এই মুহুর্তটি বন্ধুদের সাথে উপভোগ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকেল বেলা থেকে আস্তে আস্তে ইফতারি নিয়ে দলে দলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠগুলোতে জড়ো হতে থাকেন।
এছাড়া প্রতিদিন কোন না কোন জেলা সমিতি বা সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে চলে ইফতার মাহফিল। এভাবে প্রতিদিন আস্তে আস্তে ইফতারের আগ মুহুর্তে বেরোবির সবুজ ক্যাম্পাস রোজাদারদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। রমজানের প্রত্যেক দিন যেন ক্যাম্পাস মেতে উঠে উৎসবমূখর পরিবেশে ।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ইফতারের উৎসব মুখর পরিবেশে মেতে উঠেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও। ৭৫ একরের প্রিয় ক্যাম্পাসের ভালোবাসায় অনেকে ফিরে আসেন প্রিয়জনদের নিয়ে।
এছাড়াও শিক্ষকরা তাদের শিক্ষাথীদের সাথে উপভোগ করেন এই আনন্দঘন সময়গুলো।শিক্ষার্থীরা ইফতারি করার জন্যে বড় বড় বৃত্তাকারে মাঠে বসে পড়েন। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠগুলোতে মেলা বসেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠন থেকে দুস্থও অসহায় মানুষের মাঝে ইফতারি বিতরণ করা হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মাঠ থেকে শুরু করে স্বাধীনতা স্মারক মাঠ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল মাঠ, ভিসি মাঠ, ক্যাফেটেরিয়া ও হলগুলো সবিই যেন ভরে যায় শিক্ষার্থীদের উৎসবমুখর ইফতারির অমেজে। চারপাশের পরিবেশটা যেন সুবাসিত হয় নানান বাহারের ইফতারের স্বাদে।
পলিথিন কিংবা খবরের কাগজ বিছিয়ে পেয়াজু, ছোলা,আলুর চপ, বেগুনের চপ, বুনদিয়া,জিলাপি, তরমুজ, আপেল, কলা, আরও থাকে বিভিন্ন ধরনের শরবত সহ নানান পদের খাবার। সবাই হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে কেউ পানি গ্লাসে ঢালে কেউ আবার পেয়াজু ভেঙে গুড়া করে দেয় আবার কেউ শরবত দিতে ব্যাস্ত। বড় আয়োজন হলে তো কথাই নেই। তখন কেউ কেউ তেহারি, বিরিয়ানি বা খিচুরির ব্যবস্থা করেন। এভাবেই সব মিলে তৈরি হয় আনন্দঘন পরিবেশ।
ইফতার শেষে আবার শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ দায়িত্বে সকল আবর্জনা নিয়ে যায় নির্দিষ্ট জায়গায়। এতে মাঠগুলো থাকে পরিষ্কার এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয় দায়িত্ববোধ। প্রতিদিনের ইফতারি শিক্ষাথীদের মাঝে যোগ করেছে ভিন্ন এক মাএা।যা সারা দিনের রোজাকে ভালোবাসায় সিক্ত করে।শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃদ্ধি পায় সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও ঐক্যের বন্ধন।
শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন বলেন, প্রত্যেকের মনে একটি ইচ্ছে থাকে, রমজান মাস আসলে সে প্রতিদিন তার মা-বাবার সাথে সেহেরী খাবে এবং সন্ধ্যা হলে মা-বাবা, ভাই -বোন সবাইকে সাথে নিয়ে সবা মিলে একসাথে ইফতার করবে। কিন্তু রমজান মাসেও ক্লাস-পরীক্ষা থাকার কারণে আমাদের সেই সুযোগ নেই। ফলে আমরা বাড়ির সবার সাথে ইফতার করার যে আনন্দ সেটা পায় না। এতে আমাদের খারাপ লাগে।
কিন্তু আমরা যখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় বন্ধুরা মিলে ইফতার করতে বসি তখন মনে হয় এখানে আমরা একা নয়। মনে হয় আমরা পরিবারেই আছি, আমরা ভাই-বোন সবাই একসাথে ইফতার করতেছি। সর্বোপরি আমাদের মনে এক প্রকার প্রশান্তি কাজ করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।