নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : বিচ্ছিন্ন কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া চট্টগ্রামে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে। নগরীতে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকলেও উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ভালো ছিল।
রবিবার সকাল থেকে নগরী ও জেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, ভোটারদের মধ্যে যারা নতুন তাদের উপস্থিতি বেশি। বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের জোরালো উপস্থিতি ছিল কেন্দ্রে-কেন্দ্রে। তবে আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়াসহ কিছু কিছু আসনে জাল ভোট ও প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম-১১ আসনে গোসাইলডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩১৮৯ জন, যার সবই মহিলা। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেকেই ভোটারদের উপস্থিতি ভালো। কোনো ঝামেলা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় আছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৭০টি ভোট পড়েছে এ কেন্দ্রে। এখানে মোট ৬টি বুথ আছে।’
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার ৩২১৬ ও মহিলা ভোটার ১৯৬৩। বুথ মোট ১১টি। পুরুষদের ৬টি বুথে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে শুভজিৎ পাল এবং মহিলাদের ৫টি বুথে জুয়েল প্রান্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সকালে ভোট শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে ২৫ টির মতো ভোট কাস্ট হয়।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিমেন্স হোস্টেল শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল কমপ্লেক্স ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রাহুল বিশ্বাস বলেন, ‘সকালে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। মোটামুটি ভালোই ভোট পড়েছে এ কেন্দ্রে। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ভোটগ্রহণ শেষ হবে বলে আশা করছি।’
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে নৌকাপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে কয়েক দফা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে পুলিশকে হুমকি দেওয়া হলে তার প্রার্থীতা বাতিল করেন নির্বাচন কমিশন। বিকালে তার গাড়িতেও হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকেরা।
বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদি আশকরিয়া পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে দুপুর ১২টার দিকে পৌর কাউন্সিলর আব্দুল গফুরকে আটক করে পুলিশ। নৌকার প্রার্থীর সমর্থক গফুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করেছিলেন। গফুরকে থানায় নেওয়ার খবর পেয়ে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী আরও কয়েকজনকে নিয়ে সেখানে যান। ওসি তোফায়েল আহমেদ অভিযোগ করেছেন, মোস্তাফিজুর তাকে মারার জন্য তেড়ে গিয়েছেন।
বাঁশখালী উপজেলার জলদি ভাদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৪৮৬ জনের মধ্যে প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোট দিয়েছেন ২৯১ জন। ভোট গ্রহণের হার ৮ শতাংশ। পশ্চিম চেচুরিয়া ঘোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুরুষ-মহিলা মিলে মোট ভোটার ১৫৮২ জন। দুপুর ২টা পর্যন্ত ৪৮৬ ভোট পড়ে।
এদিকে ভোটগ্রহণ শুরুর পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-১০ আসনের খুলশীর পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে নৌকা ও ফুলকপি প্রতীকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দু’জন গুলিবিদ্ধ হন। এরা হলেন- শান্ত বড়ুয়া (৩০) ও মো. জামাল (৩২)। সংঘর্ষের সময় অস্ত্র উঁচিয়ে এক ব্যক্তির এগিয়ে যাবার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু এবং ফুলকপি প্রতীকের প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে উপজেলার বদুর পাড়া এলাকায় হাজী বশরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে রবিবার দুপুরে নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের আব্দুল জব্বারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল ইসলাম জানিয়েছেন, এসময় পুলিশের ভাড়া করা একটি গাড়ি ভাংচুর ও চালককে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর পর থেকেই সংঘাতমুখর চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে নৌকার কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। রবিবার বেলা ১২টা ১০ মিনিটের দিকে আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যান ঈগল প্রতীকের এ প্রার্থী।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘৩০টি ভোটকেন্দ্র থেকে আমার এজেন্ট বের করে দিয়েছে। রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে ভোটারদের আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। রাতভর পটিয়ায় আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর তাণ্ডব চালানো হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আমি ভোটে থাকব।’
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের বোয়ালখালী উপজেলার দক্ষিণ সারোয়াতলী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুরেশ কুমার চৌধুরীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। সুরেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ফুলকপি প্রতীকের বিজয় কুমার চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। হামলার জন্য তিনি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী কেটলি প্রতীকের আবদুচ ছালামের সমর্থকদের দায়ী করেছেন।
একই আসনের চান্দগাঁও এলাকায় ভোটগ্রহণের আগ থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায়-দফায় সংঘাত হয়েছে। পুলিশ জানায়, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছিল বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রতিরোধ করতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।