লাইফস্টাইল ডেস্ক : ঘাম মুছবার জন্য যেই সেটা তুলতে গিয়েছি, অমনি রুমালটা বলল, ‘ম্যাঁও!’ এটুকু পড়ে ঘাবড়াবার কিছু নেই। আনন্দেরও কিছু নেই। সুকুমারি বয়ানের সেই বিড়াল, হড়বড় করে কথা বলে। আজগুবি যদিও। কিন্তু তা অন্তত একটা যোগাযোগের সেতু তৈরি করে। যারা পোষ্য হিসেবে বিড়াল পছন্দ করেন, তাদের নিশ্চয়ই কখনো কখনো মনে হয় যে, যত আজগুবিই হোক বিড়ালের সাথে একটা কথ্য যোগাযোগ হলে মন্দ হতো না। কারণ, তাহলে অন্তত প্রিয় পোষ্যটির চাহিদা বোঝা যেত সহজেই। তবে মন খারাপের কিছু নেই। প্রাণ যেহেতু আছে, তার নিজ ভাষাও আছে। সেটা কেবল বুঝতে হবে।
আজকাল আমাদের বাসায় বা পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পদে আসীন থাকে আমাদের পোষা প্রাণীরা। এদের মধ্যে বিড়াল যেহেতু কম ব্যয়সাধ্য তাই বিড়ালকে পোষ্য হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী অনেকেই। তাই তাদের সঠিক পরিচর্যা থেকে শুরু করে সার্বিক সুবিধার জন্য বুঝতে হবে আপনার আদরের প্রাণীর অব্যক্ত ভাষা।
নিজের কথাই বলা যাক। রোজকার কাজ শেষে বাসায় ফিরেই প্রথমে যে কাজটি করি, তা হলো বিড়ালছানার সাথে রাজ্যের কথা বলা। অনেক সময় ব্যবধানে আমাকে দেখে সে ও সারাদিনের গল্প চালাতে থাকে অনর্গল। তার ভাষা আমি বুঝি না ঠিকই। কিন্তু তার ভাবের বহিঃপ্রকাশ আমার কাছে একেবারে স্পষ্ট।
তো আমার সাথে আমার বিড়ালছানার এই সখ্য একদিন চোখে পড়ল এক পরিজনের। তাকে অবাক দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি নিজেই এগিয়ে গেলাম তার কাছে । তাকে জানালাম বিড়াল সম্পর্কে কিছু ইন্টারেস্টিং বিষয়।
বিড়াল বা ফেলাইন প্রজাতির প্রাণীরা সাধারণত তাদের নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে তাদের ইচ্ছা বা অনুভূতি প্রকাশ করে। তাদের বোঝার জন্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে তাদের লেজ, কান, চোখসহ অন্যান্য শারীরিক অঙ্গভঙ্গি।
লেজ দেখে যায় চেনা
মাঝে মাঝে দেখবেন তারা লেজ উঁচু করে সামান্য নাড়াতে নাড়াতে ঘরে হাটাহাটি করছে। এমনটা দেখলে বুঝবেন সে আপনাকে দেখে আসলে খুশি। লেজ যদি উপরের দিকে ‘১’ এর মতো বাঁকা হয়ে থাকে, তাহলে বুঝবেন তারা বেশ চনমনে মেজাজে আছে।
আর যদি ঠিক এভাবে জোরে জোরে লেজ নাড়াতে থাকে, তখন তাকে একা ছেড়ে দেওয়াই ভালো। কারণ তখন সে হয় শিকারের সন্ধানে বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকতে চায়। আবার, লেজ উপরের দিকে সোজা করে উঠিয়ে রাখে, তাহলে বুঝতে হবে সে কোনো কারণে উত্তেজিত বা চিন্তিত বা আতঙ্কিত।
যদি লেজ উঁচু করে মাথাসহ শরীরের সামনের অংশ নিচু করে বসে থাকে, তাহলে বুঝে নিন সে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত।
যদি কখনো লেজের অবস্থান ইংরেজি “S” এর উল্টোমতো দেখায়, তাহলে বুঝবেন হয় আপনার ঘরের খাবার সাবাড়, নতুবা অন্য কোনো গণ্ডগোল। কারণ, তাদের মধ্যে কোনো কারণে যদি অপরাধবোধ বা অপরাধবোধ থেকে সৃষ্ট ভীতি দেখা দেয়, তবেই তাদের লেজের এমন আকার ধারণ করে।
চোখ যে মনের কথা বলে
এবার আসা যাক অনুভূতি প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম চোখের দিকে। বিড়ালের চোখের মণির গতিবিধি বুঝলে বোঝা হয়ে যাবে অনেক কিছু। মণি যদি বড় হয়ে থাকে, তাহলে বুঝবেন সে পুরোপুরি শিকারি ভঙ্গিতে আছে। কিন্তু আবার সে যদি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ধীরে দু-একবার পলক ফেলে, তাহলে বুঝতে হবে সে আপনার প্রতি তার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সাথে সে তার অবস্থানকে বেশ আরামদায়ক ও নিরাপদ ভাবছে।
কখন আপনি তার পরিবারভুক্ত
প্রায়ই দেখা যায়, বিড়ালকে তার পছন্দের মানুষের পায়ের কাছে ঘুর ঘুর করতে কিংবা মাথা বা লেজ দিয়ে ঘষাঘষি করতে। এভাবে তারা তাদের লোকালয় চিহ্নিত করে। শুধু তাই নয়, এতে আরও বোঝা যায়, সে তার প্রতি কতটা অনুগত! মজার বিষয় হলো এভাবে তারা ‘হেলো’-ও বুঝিয়ে থাকে।
যদি আপনার বিড়াল আপনাকে চেটে দেয়, তাহলে তা আপনার জন্য সুখবর। আপনি তার পরিবারের একজন হয়ে উঠেছেন ইতোমধ্যে। আমরা অনেকেই জানি, বিড়াল জিহ্ববা দিয়ে তার শরীর চেটে চেটে পরিষ্কার করে। একই কাজ যদি সে আপনার সাথেও করে, বিশেষ করে চুল কামড়ানোর চেষ্টা করে, তাহলে বুঝবেন সে আপনাকে কেয়ার করে। তাই আপনাকেও একই প্রক্রিয়ায় পরিষ্কার করতে চাচ্ছে।
বিড়ালেরও চাই একান্ত সময়
কিন্তু বিড়ালেও দিনের বেশির ভাগ সময় একান্তে নিজের মতো থাকার প্রয়োজন পড়ে। তাদের সাথে খেলতে গেলে বা আদর করতে গেলে যদি আস্তে করে কামড়াতে চায়, তাহলে কিন্তু তাদেরকে আর বিরক্ত না করে নিজের মতো থাকতে দেওয়াই উত্তম।
এ তো গেলো আঙ্গিক বিষয়-আশয়। তাদের নানা রকম ডাকের ভিন্নতার ওপর নির্ভর করেও কিন্তু তাদের মানসিক অবস্থা টের পাওয়া যায়।
কোন ডাকের কী অর্থ
যদি সে মিষ্টি সুরে আস্তে আস্তে ডাকে, তখন তার মন ভালো অবস্থায় থাকে। ডাকাডাকির মাত্রা যখন ঈষৎ বাড়ে, তখন তারা তাদের ছোট-খাটো কিছু চাহিদার জানান দেয়। যেমন ধরুন- পানি খাওয়া কিংবা খাবার খাওয়া। আর এই একই চাহিদা যদি অধিক মাত্রায় দেখা দেয়, তখন হাঁকাহাঁকিও বেড়ে গিয়ে একেবারে পৌঁছায় চূড়ায়।
আর একেবারে আস্তে কিন্তু ভারী স্বরে আওয়াজ তুলে, তারা তাদের অসন্তুষ্টি বা রাগ প্রকাশ করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রমণের পূর্ব মুহূর্তের সংকেত বোঝায় এই ধরনের হাঁকডাক।
অনেক তো হলো। এবার না হয় সুকুমার রায়ের আবোল-তাবোল খুলে আবার পড়তে বসুন। রুমাল থেকে রীতিমতো বদলে হওয়া বিড়ালটির শুরুর ওই ম্যাঁও ডাকটি আদতে কী বোঝাতে, ভাবতে বসুন না হয়। এতে ঘেমে গেলে রুমাল নয়, নিজের পোষা বিড়ালটির কাছেই যান। তার শরীরী ভাষাটি বোঝার চেষ্টা করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।