বিতর্কিতদের তালিকা করছে বিএনপি

জুমবাংলা ডেস্ক : বিতর্কিতদের তালিকা তৈরি শুরু করেছে বিএনপি। যারা বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ এ সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সহায়তা করেছেন। প্রকাশ্যে একটি নির্দিষ্ট প্রতীকে সিল মারতে দেখা গেছে অনেককে। তাদের মধ্যে কিছু শিক্ষক আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পদধারীও। এ বিতর্কিতদের চিহ্নিত করে একটি তালিকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তৃণমূল নেতারা সেই তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে জমা দেবেন।

মঙ্গলবার বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে এ তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে নয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং এক বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদও ছিলেন।

এছাড়া বৈঠকে সারা দেশের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌর ও ইউনিয়নের কমিটি গঠনের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড। কাউন্সিলের মাধ্যমে এসব কমিটি করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেসব কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে এবং যেগুলো এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি, সেগুলোকে দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য বলা হয়েছে। তবে সব জেলা ও মহানগর কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে করতে হবে। যেসব সাংগঠনিক জেলার আহ্বায়ক কমিটি আছে, সেই জেলায় যেসব ইউনিট কমিটি যেমন: থানা-উপজেলা বা পৌর-এসব কমিটি যদি না হয়ে থাকে, তা দ্রুত করতে হবে। পরে সম্মেলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলার কমিটি গঠন হবে।

তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকের মূল এজেন্ডায় ছিল ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের নেওয়া হলে, তা চিহ্নিত করে তালিকা করা।

তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য যেসব শিক্ষক বা অন্যদের তালিকা নির্বাচন কমিশন করেছে, তাদের এখন প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। এ তালিকা ধরেই মূলত পরে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় ভোটকেন্দ্রে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাই এখানে বিতর্কিত লোক আছে কি না, দুর্নীতিবাজ শিক্ষক বা দুর্নীতিবাজ কেউ আছে কি না, তা চিহ্নিত করার জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ, ইতোমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রে স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, যারা বিগত সরকারের আমলে নির্বাচনগুলোর সঙ্গে জড়িত থেকে বিতর্কিত করেছে, তাদের অনেকে এই ভোটার তালিকা হালনাগাদের তালিকায় রয়েছেন। এজন্য সব উপজেলা ও ইউনিয়নের নেতারা স্থানীয়ভাবে খসড়া তলিকা সংগ্রহ করবেন। তারপর দেখবে বিগত নির্বাচনে যেসব বিতর্কিত লোকরা জড়িত ছিলেন, তারা আছেন কি না। তাদের চিহ্নিত করে তা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে জমা দেবে। যাতে বিতর্কিতদের ভোটার তালিকা হালনাগাদের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয় এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য তালিকাভুক্ত না করা হয়।

এদিকে গত বছরের ২৬ নভেম্বর বিএনপির কেন্দ্র থেকে চিঠিতে তিন মাসের মধ্যে সব পূর্ণাঙ্গ কমিটি শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এজন্য ঢাকা ছাড়া ৯টি সাংগঠনিক বিভাগে ৯ সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া তিন মাসের মধ্যে দেড় মাস ইতোমধ্যে পার হয়েছে। জানা যায়, এর মধ্যে নাটোর, কুমিল্লা (দক্ষিণ), শেরপুরসহ কয়েকটি জেলা কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে খুলনা, মাগুরা, মেহেরপুর জেলাসহ আরও কয়েকটি। এছাড়া জেলা কমিটির অধীনে থাকা বেশ কয়েকটি ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভাগীয় জেলা ও ইউনিটের কমিটি গঠনে জোরেশোরে কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এজন্য তারা অধিকাংশ সময়ই জেলা সফর করে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন।

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, কমিটি গঠনের কাজ পুরোদমে চলছে। ইউনিট কমিটি গঠনের পর সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠন করা হবে। সেজন্য জেলার ইউনিট কমিটিগুলো গঠনের কাজ করছি। ইতোমধ্যে অনেক ইউনিটে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে।

আমার জন্যই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হলো: ট্রাম্প

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে রাজনীতি করেছে বিএনপি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘসময়ে প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশ কমিটি ঢাকা থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে যেখানে কমিটি আছে, তার অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। আবার যেসব আহ্বায়ক কমিটি আছে; তার মেয়াদ ৩ অথবা ৬ মাস দেওয়া হলেও বছরের পর বছর পার করছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন মুক্ত পরিবেশে সব কর্মকাণ্ড করছে দলটি। সূত্র : যুগান্তর