খুজিস্তা নূর-ই নাহারিন: দোয়া করি সুখী হোক নবদম্পতি। কিন্তু সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে সত্যিই কি প্রেমের টানে? নাকি কেবলই অভিজ্ঞতা অর্জন, বাউন্ডুলেপনা নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য? আমার বেশির ভাগ বন্ধুবান্ধবের ছেলে-মেয়ে বিদেশে পড়াশোনা করা সত্ত্বেও কেউ চাই না ওরা ভিন দেশি কাউকে জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনী হিসেবে পছন্দ করুক। কারণ হিসেবে ধর্মীও ছাড়াও, অভ্যস্ততা, কৃষ্টি-সংস্কৃতিগত ভিন্নতার কারণে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবধান, পারস্পরিক বোঝাপড়াকে ব্যহত করে। তাঁর মানে কিন্তু এই না ভিনদেশি ছেলে-মেয়ে বিয়ে করা যাবে না। অবশ্যই বিয়ে করা যাবে, কিন্তু ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে। যাতে কোনো মিথ্যার আশ্রয়ে প্রতারিত হতে না হয়।
শৈশবে আমাদের স্কুলে দেখতাম সোনালী চুলের বেণী করা দুই বোন একসাথে স্কুলে আসতো। তাঁদের গায়ের রঙ, চেহারা, হাঁটা-চলায় সুস্পষ্ট ভিন্নতা। অনেক পরে জেনেছিলাম এক জার্মান ভদ্রলোক ভালোবেসে বিয়ে করে দুই কন্যা সন্তানের জন্মের পর একদিন কোথায় উধাও হয়ে যায়। সেই সময়ে তাঁর স্বল্প শিক্ষিতা রূপবতী মা জানতেন না তাঁর অতীত কী? সেই ভদ্র লোকের আগের কোনো পরিবার আছে কী নেই? জানতেন না তাঁদের অকূলে ভাসিয়ে দিয়ে দেশে ফিরে যেতে পারে একদিন।
প্রায়ই দেখি অনলাইনে প্রেমের টানে দেশে এসেছে বিয়ে করতে। বিয়ে পরবর্তী জীবন কি আসলে এতোটাই সহজ? চেনা নেই, জানা নেই দেশে এলো আর বিয়ে করে ফেললো কিংবা আপনারা এতো সহজেই বিয়ে দিয়ে দিলেন। নাকি সাদা চামড়া দেখলেই ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠীর কথা মনে পরে যায়? তাঁদের প্রতি আনুগত্য, কৃতজ্ঞতা নাকি কেবলই বিস্ময়ে গদগদ হয়ে অতীত না জেনে ভালো করে খোঁজখবর না নিয়ে নিজের আদরের কন্যাকে তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন।
দাম্পত্য তো রূপালী পর্দার সিনেমা নয় যে বিয়ে হলো আর পর্দা পরে গেলো, সিনেমা শেষ। এখানে বিয়ে মানে সিনেমার শুরু। সংবাদ মাধ্যম কর্মীরা এমনভাবে সংবাদ উপস্থাপন করেন যেন সাদা চামড়ার মানুষ আমাদের দেশের ছেলে/মেয়েকে এসে বিয়ে করে আমাদের কৃতার্থ করেছে, আমরা ধন্য ধন্য করে কৃতজ্ঞতায় নুইয়ে পরছি। সংবাদ পরিবেশনের আগে প্রেমের টানে বিদেশ থেকে বিয়ে করতে আসা ওই পাত্র/পাত্রীর অতীত আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জিজ্ঞেস করুন, খোঁজখবর নিন, তারপর লিখুন।
ওরা বছরের পর বছর লিভ টুগেদার করে অনেক পরে বিয়ে অর্থাৎ বন্ধনে আবদ্ধ হয় আর আমাদের দেশে আসা মাত্র পাত্রী রেডি। বিয়ের পরে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আগে এবং পরেও খোঁজ রাখতে হবে মেয়েটিকে সঠিক স্ত্রীর মর্যাদা দিচ্ছে নাকি কাজের বুয়া কিংবা টাকা বানানোর মেশিন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ রাখা কঠিন কিছু নয়। দেশেই প্রেমিকের সাথে বিয়ের পর অনেক ক্ষেত্রে দুঃখজনক লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় আর তো বিদেশি পাত্র! প্রেমের জয় হোক আমার শঙ্কা মিথ্যে প্রমাণিত হোক অন্তপ্রাণেই চাই কিন্তু তবুও।
ছবির দম্পতিকে সমালোচনা আমার উদ্দেশ্য নয়, একজন মা হিসেবে কেবল শঙ্কার কথা বলছি যাতে অন্য কন্যারা বিয়ের আগে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে জেনেশুনে বিয়ের পিঁড়িতে বসে। নতুবা সুন্দরী এই কন্যার বিয়ে দেখে অনেক কন্যাই বিদেশি পাত্র ডেকে আনতে অনুপ্রাণিত হবে। ফেসবুক থেকে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।