জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে এবার নতুন এক উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। যেসব বাংলাদেশি বিদেশি বিনিয়োগ আনার পেছনে ভূমিকা রাখবেন, তাদের জন্য থাকবে বিশেষ প্রণোদনা। এমন উদ্যোগ আগে কখনো দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নে একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা তৈরি করছে। পাশাপাশি, একটি ধারণাপত্রও প্রস্তুত করা হচ্ছে। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিডার পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিডা জানিয়েছে, যারা বিদেশে বসবাস করে দেশের জন্য বিনিয়োগের পথ তৈরি করছেন, তাদের স্বীকৃতি দিতে এবং এই অংশগ্রহণকে আরো উৎসাহিত করতেই এই প্রণোদনা ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এতে করে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সাধারণ মানুষও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারবেন।
বিডা সূত্রে জানা গেছে, অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন যারা স্বেচ্ছায় বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সহযোগিতা করতে চান। কিন্তু তাদের জন্য এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি বা প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। অনেকে বিদেশি ভাষা ও ব্যবসার পরিবেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। তারা বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যে ধরনের যোগাযোগ তৈরি করতে পারেন, তা বিডার পক্ষে সম্ভব নয়।
ঠিক যেমনভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীদের ২.৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়, তেমনি বিদেশি বিনিয়োগ আনায় সহায়তা করা ব্যক্তিদের জন্যও ১ শতাংশ করমুক্ত প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তবে এই সুবিধা শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের জন্য প্রযোজ্য হবে, কোনো প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ পাবে না।
যেসব বাংলাদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখবেন এবং যাদের কোনো স্বার্থসংঘাত থাকবে না, তারাই এই প্রণোদনার জন্য বিবেচিত হবেন। তবে এই প্রণোদনার আওতায় শুধু নতুন ইক্যুইটি বিনিয়োগ আসবে, যার পরিমাণ কমপক্ষে ৫ মিলিয়ন ডলার হতে হবে। কিস্তিতে আসা বিনিয়োগ হলেও মোট পরিমাণের ভিত্তিতে প্রণোদনা নির্ধারিত হবে।
বিডা সূত্রে জানা গেছে, এফডিআই স্বীকৃতি স্কিম কার্যকর করতে একটি তহবিল গঠন করা হবে, যার অর্থ বাজেট বরাদ্দ হিসেবে বিডাকে দেওয়া হবে। যারা এই সুযোগ নিতে চান, তাদের বিনিয়োগ ঘোষণার ১৪ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট ফরম্যাটে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে প্রমাণপত্র, পরিচয়পত্র ও পেশাগত যোগ্যতার দলিল। পাশাপাশি হলফনামায় জানাতে হবে, বিনিয়োগকারীর সঙ্গে তার কোনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক নেই।
আবেদন যাচাইয়ে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হবে, যাতে থাকবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং অর্থ সচিব। প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষের বিশেষজ্ঞদেরও যুক্ত করা হতে পারে। অনুমোদিত প্রণোদনার অর্থ আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে।
বিডা সূত্রে আরো জানা গেছে, গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে এবং এটি সম্পূর্ণ হলে প্রতিটি পক্ষের দায়িত্ব নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হবে। এরপর তা গভর্নিং বোর্ডে উপস্থাপন করা হবে।
বিডার সর্বশেষ বোর্ড সভা হয়েছিল ২০২০ সালে। তিন বছরের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে প্রতি তিন মাস পরপর এমন সভা হবে, যাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
এই প্রণোদনা উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পিপিপি ভিত্তিক বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে একটি বিনিয়োগ পাইপলাইন গড়ে তোলা হচ্ছে, যার মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি বাস্তব বিনিয়োগে রূপান্তর সম্ভব হবে।
এই উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে বিদেশে থাকা বহু বাংলাদেশি উৎসাহিত হয়ে দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখতে পারবেন এমনটাই আশাবাদ বিডার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।