জুমবাংলা ডেস্ক : বিদেশের কারাগারে ১১ হাজার ৪৫০ জন বাংলাদেশি আটক রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫ হাজার ৭৪৬ জন আটক আছে সৌদি আরবে। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১ হাজার ৫৭৯ জন, তুরস্কে ৫০৮ জন, ওমানে ৪২০, কাতারে ৪১৫ জন, গ্রিসে ৪১৪ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪০৪ জন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩৮৫ জন ও মিয়ানমারে ৩৫৮ জন আটক রয়েছেন।
সোমবার (১ জুলাই) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকার দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে শুরু থেকে অদ্যাবধি ক্রমাগত প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। র্যাবের বিরুদ্ধে আনীত কথিত অভিযোগগুলোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের কাছে পদ্ধতিগতভাবে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও বিধিগত প্রক্রিয়া চলমান আছে।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদান করেনি। জিএসপি সুবিধাকালীনও গার্মেন্টস পণ্য এর আওতবর্হিভূত ছিলো। এ সুবিধা ছাড়াই উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির একক বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র তাদের জিএসপি পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন করেনি। জিএসপি সুবিধা পুনরায় চালু হলে তাতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি এবং গার্মেন্টস পণ্যকেও জিএসপির আওতায় আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক প্রচেষ্ট অব্যহত রয়েছে। কোনো বিশেষ আঞ্চলিক চুক্তি/সহায়তা কার্যক্রম ছাড়া কোনো দেশই যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানীতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় না।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকার দলীয় এমপি ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৬০টি দেশে বাংলাদেশের ৮৪টি কূটনৈতিক মিশন রয়েছে, যার মধ্যে ৮০ কূটনৈতিক মিশনের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি দূতাবাস, ১৪টি হাইকমিশন, ১২টি কনস্যুলেট, ৩টি স্থায়ী মিশন, ৪টি উপ-হাইকমিশন এবং ৪টি সহকারী হাইকমিশন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, আন্তত আরও ৯টি নতুন মিশন স্থাপনের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকার দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, পশ্চিম এশিয়া বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার এবং রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস। সরকারের গত দেড় দশকের নিরলস প্রচেষ্টায় ২০০৯ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমশক্তি দ্বিগুণ রপ্তানি হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ অঞ্চলে শ্রমশক্তির প্রায় ৬০ শতাংশ আধাদক্ষ ও অদক্ষ বাংলাদেশী কর্মী নিয়োজিত আছে এবং এ অঞ্চলটি ৬০ শতাংশ রেমিট্যান্সের উৎস।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ২০২৩ পর্যন্ত ১১ লাখ ৮১ হাজার ৫৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক কর্মসংস্থান ভিসা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৈধভাবে গমন করে। অবৈধ হয়ে পড়া এ সকল বাংলাদেশিদের মানবিক সাহায্যের পাশাপাশি এদেশে বৈধতা প্রদানে নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হয়। ২০১৮ সালে সাধারণ ক্ষমার আওতায় এ দেশের সরকার প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশির জেল ও জরিমানা মওকুফ করে দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ প্রদান করে। কারোনাকালীন কাজ হারিয়ে অবৈধ হওয়া কর্মীদের একটি বড় অংশ নিয়োগকর্তা পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর বাইরে ২০২০-২০২২ মেয়াদে ভিজিট ভিসা থেকে কর্মী ভিসায় রূপান্তরের সুযোগ নিয়ে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক বৈধ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মী ভিসা সংকুচিত থাকলেও নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ২০২১ সাল থেকে পুনরায় বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, জর্ডানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে কিছু কিছু প্রবাসী বেশি উপার্জনের লোভে তাদের নিয়োগকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে জর্ডানে অবৈধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ দূতাবাস আম্মান শ্রমিকদের পালিয়ে যাওয় প্রবণতা কমানোর জন্য নিয়োগকারীদের সহযোগিতায় তাদের কর্মক্ষেত্রে পোস্ট এরাইভাল সেশনসহ নিয়মিত সেশন আয়োজন করে থাকে।
স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাস আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইএমও) সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে তাদের উদ্ধার করে দেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে থাকে। ২০২৩ সালের জুলাই হতে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও আইএমও এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অনিয়মিত ১ হাজার ৪৭৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়। সুদান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১২শ জন বাংলাদেশিদের উদ্ধার করে এবং সরকারি খরচে দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।