জুমবাংলা ডেস্ক : ২৩ বছর মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরেন ফরিদপুরের নেপাল চন্দ্র কাপাসিয়া। দিনমজুরের কাজ করে পরিবারকে পাঠিয়েছেন ৩৬ লাখ টাকা।
আপন বড় ভাইয়ের প্রতারিত হয়ে প্রবাস জীবনের উপার্জিত সব টাকা হারিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নেপাল। টাকা চাইতে গেলে দুই দফায় হামলার শিকার হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
শহরের মুজিব সড়কের পাশে স্থানীয় একটি সংবাদপত্র কার্যালয়ে রোববার সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ জানান নেপাল। এ সময় তার স্ত্রী ইতি লতা মন্ডল ও তাদের চার বছরের ছেলে সঙ্গে ছিল।
এ সময় তিনি তার পাঠানো টাকা ফেরত চেয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
তিনি জানান, প্রবাস জীবনে উপার্জন করা ৩৬ লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন দেশে তারই আপন বড় ভাই দুলাল কাপাশিয়ার কাছে। দেশে ফিরে সেই টাকার হিসাব চাইলে উল্টো তাকে ও তার স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। থানায় মামলা করলেও প্রতিকার মিলছে না। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বিচারের আশায় তিনি এখন পথে পথে ঘুরছেন। ফিরতে পারছেন না বসতভিটায়ও।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নেপাল চন্দ্র কাপাশিয়া বলেন, ‘ভাগ্য ফেরানোর আশায় ১৯৯৪ সালে মালয়েশিয়া যাই। সেখানে টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ করি, তখনও বিয়ে করিনি। বিদেশ থেকে উপার্জনের টাকা দেশে থাকা বড় ভাই দুলাল কাপাশিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতাম।
‘এর মাঝে ছয় বছর দেশে থেকে আবার বিদেশে যাই। ২০১৭ সালে দেশে ফিরে আমার পাঠানো টাকার হিসাব চাইলে শুরু হয় বিবাদ।’
এলাকার চেয়ারম্যান ও স্থানীয়রা এ নিয়ে সালিশ মীমাংসাও করেন। এরপর অনেকবার টাকা দেয়ার কথা বলেও টাকা ফেরত দেন না দুলাল।
নেপাল জানান, টাকা চাইতে গেলে ভাই-ভাতিজাদের নিয়ে দুই দফায় দুলাল কাপাশিয়া হামলা করে জখম করে তাকে।
এনিয়ে নেপাল কাপাশিয়া ও তার চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী বিউটি বিশ্বাস থানায় দুটি মামলা করেন। ওই মামলায় এ পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানান নেপাল।
নেপালের স্ত্রী ইতি লতা মন্ডল বলেন, ‘বিয়ের পরেও দুই বছর বড় ভাইয়ের কাছে টাকা পাঠাত আমার স্বামী। বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা দিয়ে বড় ভাই দুলাল কাপাশিয়া কিছু জমি কেনে। আমাদের বাবার ভিটের একপাশে ঘর তুলে থাকতে বলেছিল। তিন ভাই একজোট হয়ে এখন আমার স্বামীকে বাড়ি যেতে দিচ্ছে না।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নেপাল কাপাশিয়ার টাকা আত্মসাৎ করে তার ভাই জমিজমা কিনেছেন। বাজারে রড-সিমেন্ট ও শেয়ারের ব্যবসা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে দুলাল কাপাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে কথা হয় তার স্ত্রী পূর্ণিমা কাপাশিয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘নেপাল কাপাশিয়া যে কয়বার বিদেশ গেছে আমার স্বামীও তাকে টাকা-পয়সা দিয়েছিল। উনি এখন হিসাব দিতে পারছেন না।’
হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘জমি মাপার সময় উল্টো নেপাল লোকজন নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে।’
এ বিষয়ে আলিয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘সালিশের মাধ্যমে নেপাল কাপাসিয়াকে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু একান্নবর্তী পরিবার হওয়ায় তাদের মা টাকা ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আপত্তি করে। এজন্য ওই টাকা আর ফেরত পাওয়া যায়নি, তবে বিষয়টি নিয়ে ওই পরিবার ভোগান্তিতে রয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই এসএম রিয়াদুজ্জামান বলেন, ‘ভাইয়ে ভাইয়ে টাকা পয়সা ও জায়গা-জমি নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে দুই পক্ষ থেকেই পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।