বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির (ইভি) বাজারে চাহিদার ধীরতা সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক অটো জায়ান্টকে এ খাতে পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়নে বাধ্য করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো পরিকল্পনা সংশোধন করে হাইব্রিড খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মিলিতভাবে চলতি বছরে ইভি ও প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়ি বিক্রিতে নতুন রেকর্ড তৈরির পূর্বাভাস দিয়েছে প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
চলতি বছর বৈশ্বিক গাড়ির বাজারে ১ কোটি ৭০ লাখ ইউনিট ব্যাটারিচালিত ইভি ও প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়ি বিক্রি বলে জানিয়েছে আইইএ। এ সময় ২০২৩ সালের তুলনায় গাড়ি বিক্রির হার বাড়বে ২০ শতাংশ। এরই মধ্যে প্রবৃদ্ধির লক্ষণও দেখা গেছে বাজারে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ২০২০ সালের পুরো বছরের তুলনায় বেশি ইভি ও হাইব্রিড গাড়ি বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া ২০২২ সালে ১ কোটি ৪০ লাখ ইউনিট ইভি ও হাইব্রিড গাড়ি বিক্রি হয়েছিল, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি।
কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে জীবাশ্ম-জ্বালানিভিত্তিক গাড়ির বদলে ইভির গুরুত্ব সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেড়েছে। তবে উচ্চ মূল্য এখনো এসব গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। আইইএ বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বেশির ভাগ কোম্পানি ইভির মূল্য কমাবে, যা প্রচলিত পেট্রলচালিত গাড়ির কাছাকাছি হবে।
অবশ্য চলতি বছরে গাড়ির বিক্রি বাড়ার পেছনে মূল্য কমানোকে অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি সপ্তাহে প্রধান প্রধান বাজারগুলোয় উল্লেখযোগ্য হারে মূল্য কমিয়েছে শীর্ষ ইভি নির্মাতা টেসলা। এর আগেও চীনের শীর্ষ কোম্পানি বিওয়াইডির মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে মূল্য কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইলোন মাস্কের প্রতিষ্ঠানটি। যার প্রভাব পড়ে সামগ্রিক ইভির বাজারে।
চলতি বছরের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আইইএর প্রধান ফাতিহ বিরল জানান, কিছু বাজারে বিক্রির হার অন্য দেশের চেয়ে বেশ শক্তিশালী। সেখানে বিক্রি প্রবৃদ্ধির লক্ষণ স্পষ্ট।
তিনি বলেন, ‘ইভির বিক্রি বৃদ্ধির নতুন ধাপের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বিশ্ব। ব্যাটারি উৎপাদনে বিনিয়োগ অটোমেকারদের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা পূরণ করবে। ফলস্বরূপ সড়কে ইভির পরিমাণ দ্রুত বাড়তে থাকবে।’
এদিকে কিছু দেশ জনগণকে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি কিনতে উৎসাহ দিচ্ছে, প্রণোদনার মতো সুবিধা দিচ্ছে সরকারগুলো। ২০২৩ সালে নরওয়েতে বিক্রি হওয়া সব গাড়ির চার-পঞ্চমাংশ ছিল বিদ্যুচ্চালিত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্য সম্প্রতি পেট্রলচালিত গাড়ি বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইভির বাজারের গতি প্রাপ্তির উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাজ্যের উল্লেখ করেন খাতটির বিশ্লেষক ম্যাথিয়াস শ্মিট। তিনি জানান, প্রথমবারের মতো ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে ইউরোপের বৃহত্তম ইভির বাজার ছিল যুক্তরাজ্যে।
শ্মিট আরো জানান, ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যে ইভি বিক্রি জার্মানির সমান বা এর বেশি হতে পারে। ভর্তুকি হ্রাসের কারণে জার্মানিতে ইভি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য সরকার ২০২২ সালে ব্যক্তিগত ইভি থেকে ভর্তুকি সরিয়ে দিয়েছে, যা এখনো চলমান রয়েছে।
আইইএর প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী দশকে ইভির বাড়ন্ত চাহিদা বিশ্বব্যাপী অটো শিল্পকে নতুন রূপ দেবে। এ সময় সড়কে সনাতনী জ্বালানিনির্ভর গাড়ির চলাচল উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। এছাড়া ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিক্রি হওয়া গাড়ির অর্ধেকই বিদ্যুচ্চালিত হবে। চার্জিং অবকাঠামো স্থাপনের বিদ্যমান গতি বজায় থাকলে ওই সময়ের প্রতি পাঁচটি গাড়ির একটি হবে ইভি। চলতি দশকের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী ১ কোটি ৫০ লাখ ইভি চার্জিং পয়েন্ট স্থাপনের পূর্বাভাসও দেয়া হয় প্রতিবেদনে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।