জুমবাংলা ডেস্ক: রংপুর জিলা স্কুল মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভাগীয় মহাসমাবেশ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকাল ৩টার দিকে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বেলা ১ টা ১৩ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে রংপুর সেনানিবাসের হেলিপ্যাডে পৌঁছালে তাঁকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সার্কিট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি রংপুর বিভাগীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’র পক্ষে জনসমর্থন আদায় করতে রংপুরের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহত্তম সমাবেশে ভাষণ দেবেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা ইতোমধ্যে মহাসমাবেশে বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন।
সকাল থেকেই আ’লীগের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করলে মাঠ ও এর আশপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকা দুপুর ১টার মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রঙিন ব্যানার, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ছোট নৌকা, জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে মিছিলে সমাবেশস্থলে আসতে দেখা যায়।
তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। বিশেষ করে ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ আওয়ামী লীগ সরকার, বার বার দরকার, শেখ হাসিনার দুই নয়ন, রংপুরের উন্নয়ন, উন্নয়নের সরকার বার বার দরকার, পদ্মা সেতু সরকার, বার বার দরকার, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত কয়েকশ’ অস্থায়ী গেইট, ফেস্টুন, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও পোস্টারে পুরো রংপুর অঞ্চল মুখরিত হয়ে উঠেছে।
বিভাগীয় শহরের প্রতিটি গলি ও বাই-লেনও সাজানো হয়েছে।
২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ সফরের প্রায় পাঁচ বছর পর জেলায় প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসবের মেজাজ বিরাজ করছিল।
সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জায় পুরো রংপুর সেজেছে নতুন রূপে।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে শহরের সড়কগুলোও সাজানো হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি সম্বলিত পোস্টার এবং রাস্তার পাশে রঙিন ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে।
ন্যায় অধিকার ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন সংস্থার ব্যানারে ৩৯০ জন হিজড়াদের একটি মিছিলকে রঙিন পোশাক পরে অনুষ্ঠানস্থলে যেতে দেখা যায়।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুসরাত (২৫) নামের এক হিজড়া নারী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ও তাকে সম্মান জানাতে তিনি সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন কারণ প্রধানমন্ত্রী তাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং তাদের সমাজের মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর কারণে চেয়ারম্যান ও সদস্য হচ্ছি।
মাহিগঞ্জ থানার ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৬৩ বছর বয়সী সেলিম মিয়া ৩ হাজারের বেশি নারী-পুরুষের মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসেন। তিনি জানান, সমাবেশে যোগ দিতে সকাল ৮টায় এলাকা থেকে বাসে করে যাত্রা শুরু করেন তারা।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং জেলার পুত্রবধূ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আমরা খুবই খুশি।’
অনেক পুরুষকে নীল টি-শার্ট এবং নীল ক্যাপ পরতে দেখা যায় যখন মহিলারা রঙিন শাড়ি এবং নীল ক্যাপ পরেন।
দলের সহকর্মীদের মতো সাদা টি-শার্ট ও হাতে ছোট জাতীয় পতাকা নিয়ে সাদা ক্যাপ পরা ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আসা ফজলুর রহমান (৭৩) বলেন, রংপুরের সার্বিক উন্নয়নে তার অবদান শোধ করা সম্ভব নয়।
জামাকাপড় ও লাঠি দিয়ে তৈরি একটি ছোট নৌকা নিয়ে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আসা সাইফুল (৪৫)
বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ তিনি কারণ, তিনি রংপুরের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ও জেলার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন এবং অঞ্চলটিকে মঙ্গামুক্ত করেছেন। খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলায় পরিণত হয়েছে।
আজকের জনসভাকে রংপুরের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সমাবেশে পরিণত করতে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি তাদের শক্তি ও জনসমর্থন প্রদর্শন করতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো তৎপর রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা আগামী বছরের প্রথম দিকে নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেন এবং বলেন, তারা রংপুরে সর্বকালের সর্ববৃহৎ জনসমাগম করবেন এবং অনুষ্ঠানস্থলের আশেপাশে ১০ লাখের বেশি লোকের সমাগম হবে।
রংপুর জেলা আ’লীগের আহ্বায়ক একেএম সায়াদাত হোসেন বকুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে সাধারণ মানুষ উৎসাহী হয়ে উঠেছে। কারণ, তার গতিশীল নেতৃত্বে সমগ্র রংপুর প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন দেখেছে।
নগর আ’লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন বাসস’কে জানান, ১০ লাখ লোকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে মহাসমাবেশকে সফল করতে তারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।
উভয় নেতা বলেন, রংপুরের অভিভাবকত্ব গ্রহণের পর আ’লীগ সভাপতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসামান্য উন্নতি করেছেন।
নতুন হাসপাতাল নির্মাণ এবং শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মেডিকেয়ার পরিষেবার উন্নতিসহ অসংখ্য ব্রিজ, কালভার্ট এবং রাস্তা নির্মাণের মতো ব্যাপক অবকাঠামোগত অগ্রগতি জেলাবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছেন, বিপুল ফসল উৎপাদনে সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছেন, রংপুরকে শিক্ষার কেন্দ্রে পরিণত করেছেন এবং অন্যান্য জেলা ও রাজধানীর সাথে এর যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন।
তারা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী রংপুরকে বিভাগ করেছেন, রংপুর সিটি করপোরেশনও করেছেন।
ডা. দেলোয়ার বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১২০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সমাবেশকে সফল করতে আ’লীগ নেতারাও মিটিং, লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার
বিভিন্ন পয়েন্টে এবং জেলার প্রতিটি রাস্তা-ঘাটে মাইকিং করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফরকালে প্রায় ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।-বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।