জুমবাংলা ডেস্ক : প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। এদিন চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেটে বৃষ্টিসহ বজ্রবৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃষ্টি আস্তে আস্তে রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা কমার মধ্যেই এসেছে বজ্রপাতে প্রাণহানির খবর। এ ছাড়া গরমে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুও অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার বজ্রপাতে কুমিল্লায় ৪ জন ও রাঙামাটিতে ৩ জনসহ বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আগেরদিন থেকে গতকাল পর্যন্ত গরমে মারা গেছেন আরও ৫ জন।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল যশোরে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। একই দিন চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি। আজও যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এবং খুলনা বিভাগের কিছু অংশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে দিনের সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি। এ দিন রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ অনেক অঞ্চলে বৃষ্টি হলেও গরম কমার বিষয়ে অবশ্য সুখবর জানাতে পারেনি আবহাওয়া অধিদপ্তর। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। তবে এ মাসেই কোথাও কোথাও বয়ে যেতে পারে এক থেকে তিনটি মৃদু ও মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ। মাসজুড়েই দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে।
অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা একটু বেশি থাকতে পারে। তবে তা এপ্রিলের মতো এত দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে না। মে মাসে তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা ধরনের কালবৈশাখী হতে পারে। দুই থেকে তিন দিন হতে পারে বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি এবং তীব্র কালবৈশাখী।
চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ মাসের মাঝামাঝিতে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদনদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে। কিছু কিছু জায়গায় তা অতিক্রম করতে পারে বিপৎসীমাও।
ইতোমধ্যে আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারিসহ কিছু নির্দেশিকা জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)। সংস্থাটি বলছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে প্রাক-বর্ষার পানিপ্রবাহ শুরু হতে পারে। বাসিন্দাদের এ জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে বৃষ্টির পর পাহাড়ি ঢলে আজ সিলেটের জৈন্তাপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেড়েছে সারী, বড় নয়াগং ও রাংপানি নদীর পানি। বন্যা প্লাবিত এলাকার মধ্যে রয়েছে উপজেলার নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ফুলবাড়ী, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, লক্ষ্মীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, কাঠালবাড়ী ও নলজুরী হাওর। পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামীকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। ১০ মের পর তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।
বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ১১ প্রাণহানি
কুমিল্লার বুড়িচং, দেবিদ্বার, সদর দক্ষিণ ও চান্দিনা উপজেলায় আজ বজ্রপাতে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন বুড়িচং উপজেলার পাঁচোড়া নোয়াপাড়া গ্রামের আলম হোসেন (২০), দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী গ্রামের মোখলেছুর রহমান (৫৮), সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়নের উত্তর সূর্যনগর গ্রামের আতিকুল ইসলাম (৫০) ও চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের কিছমত-শ্রীমন্তপুর গ্রামের দৌলতুর রহমান (৪৭)। এ ছাড়া কক্সবাজারের পেকুয়ায় এদিন বজ্রপাতে মারা যান ২ লবণশ্রমিক।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে মগনামার কুদাইল্যাদিয়া এলাকায় মাঠে শুকাতে রাখা লবণ কুড়াতে বের হন দিদারুল ইসলাম। অন্যদিকে একই সময় রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়া এলাকায় মাঠের লবণ গর্তে ঢুকিয়ে সংরক্ষণের জন্য পলিথিন মোড়াচ্ছিলেন আরফাতুর রহমান। এ সময় বজ্রপাতের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই তারা প্রাণ হারান।
রাঙামাটির সদর ও বাঘাইছড়ি উপজেলায়ও বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়। অন্তত ৭ জন আহত হন। সদর উপজেলার রূপকারী ইউনিয়নের বড়াদম এলাকায় মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা যান বাহারজান বেগম (৫৭) নামে এক বৃদ্ধা। সাজেক ইউনিয়নের লংথিয়ান পাড়ায় ঘরের ওপর বজ্রপাতে মারা যান তনিবালা ত্রিপুরা (৩৭) নামে এক নারী। এ ছাড়া রাঙামাটি শহরের তবলছড়ির সিলেটি পাড়ায় কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে মারা গেছেন মো. নজির (৫০) নামে আরও এক ব্যক্তি। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় বজ্রপাতে ৭ জন আহত হন।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ায় সকালে ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাত নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় দিঘীরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের হাওরে দুপুরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান বাবুল আহমদ (৪৮) নামে এক কৃষক। আহত হন আরও দু’জন।
গরমে আরও ৫ মৃত্যু
কুড়িগ্রামে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে জমিতে ধান কাটতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে আবুল হোসেন (৫৫) নামে জেলা সদরের মোগলবাসার ফারাজি পাড়া গ্রামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সকালে উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকিরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। একই দিন গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে গরমে অসুস্থ হয়ে সাজু মিয়া (৫৬) নামে এক পরিবহন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। মে দিবসের কর্মসূচিতে এসে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সাজু মিয়ার বাড়ি উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের ছোটবোনের পাড়া গ্রামে।
আজ দুপুরে নরসিংদীর শিবপুরে তীব্র রোদের মধ্যে জমিতে ধান কাটতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান আমির হোসেন (৪০) নামে এক শ্রমিক। এ ছাড়া নেত্রকোনার মদন উপজেলার দেওয়ান বাজারে প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে মারা যান কৃষক আব্দুস সাত্তার (৭০) ও কাঠ ব্যবসাসী মো. গোলাপ (৪২)। ধারণা করা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।