বিমানে চড়ার সময় অনেকে টের পান, ঠিকভাবে কানে শুনতে পাচ্ছেন না। অনেকের কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতিও হয়। কেন হয় এমন অনুভূতি? এই ব্যথা এড়ানোর উপায় কী? বিমান মাটি থেকে হাজার ফুট ওপরে ওড়ার সময় কেবিনের ভেতর বাতাসের চাপের পরিবর্তন হলে এমন অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। শুধু কান ব্যথা নয়, পেট ফাঁপা বা মাথাব্যথাও হতে পারে।
বিমানে কানের এমন সমস্যাকে বলে ‘এয়ারপ্লেন ইয়ার’। নিউইয়র্কভিত্তিক নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ডেভিড গুডিস বলেন, ‘প্লেনে উঠলে অনেকের সামান্য কান বন্ধভাব অনুভূত হতে পারে। ফলে অস্থায়ীভাবে কানে শোনার ক্ষমতা খানিকটা কমতে পারে। আবার কারো কারো হতে পারে তীব্র ব্যথা, এমনকি কানের পর্দাও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।’
তবে বেশি চিন্তার কিছু নেই। কারণ, সাধারণত এই কান ব্যথা এমনিতেই সেরে যায়। কিন্তু সেরে ওঠা পর্যন্ত কানে খুব অস্বস্তি লাগতে পারে। এ অনুভূতি স্থায়ী হতে পারে কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত।
কিন্তু কেন হয় এমন কান ব্যথা? আমাদের কানের পর্দার পেছনে, কানের মাঝখানের অংশ বা মধ্য কর্ণে টিউবআকৃতির একধরনের অঙ্গাণু আছে। একে বলে ইউস্টেশিয়ান টিউব। মধ্য কর্ণকে নাক ও গলার পেছনের অংশের সঙ্গে যুক্ত করে এই টিউব। মধ্য কর্ণের বায়ু চাপ এবং বাইরের পরিবেশের বায়ু চাপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখাই এ টিউবের কাজ।
আটলান্টার অ্যামোরি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের নাক-কান-গলা বিষয়ের অধ্যাপক এসথার এক্স. ভিভাস বলেন, ‘বায়ু চাপ ঠিক রাখার বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাধারণত ভাবতে হয় না। হাই তোলা বা ঢোক গেলার সময়ও ঠিক হয়ে যেতে পারে বায়ু চাপ। কারণ, হাই তুললে বা ঢোক গিললে ইউস্টেশিয়ান টিউব খোলার পেশিগুলো সংকুচিত হয়।’
তবে বিমানে ভ্রমণের সময় বায়ু চাপ দ্রুত পরিবর্তিত হলে ইউস্টেশিয়ান টিউবের পক্ষে এই চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এমন অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। ফলে হাই তোলা বা কানের চাপ কমানোর জন্য ‘পপ’ করার প্রয়োজন হয়। পেশি সংকুচিত করে ইউস্টেশিয়ান টিউব খুলতে সাহায্য করার নামই ‘পপ’ করা। ইউস্টেশিয়ান টিউব দিয়ে বায়ু সরতে না পারলে কানের ভেতরের বায়ু চাপ এবং চারপাশের বায়ু চাপ সমান থাকে না।
এই চাপ সমান না থাকায় বায়ু চাপের কারণে কানের পর্দা প্রসারিত হতে পারে। এটাই ওই ব্যথার জন্য দায়ী। এর ফলে শ্রবণ শক্তিও কিছু সময়ের জন্য কমে যেতে পারে। কারণ, এ সময় কানের পর্দা শব্দ তরঙ্গের প্রতি ঠিকভাবে সাড়া দিতে পারে না।
বিমানে চড়ার আগে শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশে ঘন সর্দি জমলে এমন সমস্যা হতে পারে। মধ্য কর্ণ ও ইউস্টেশিয়ান টিউবের মধ্যে একটি মিউকাস স্তর থাকে। এর কাজ ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া আটকানো এবং কানের সুরক্ষা দেওয়া। তবে ঠান্ডা, অ্যালার্জি বা সাইনাস সংক্রমণের কারণে সর্দি-কাশিতে ভুগলে মিউকাস স্তর ফুলে যেতে পারে। এভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ইউস্টেশিয়ান টিউব।
তবে কানের সংক্রমণ নিয়ে কেউ বিমানে উঠলে এয়ারপ্লেন ইয়ার হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। কিন্তু কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই কানে সংক্রমণ থাকলে ভ্রমণের পরিকল্পনা পরিবর্তন করার কথা ভাবা উচিত।
এই সমস্যা থেকে বাঁচতে হাই তোলার চেষ্টা করা, চুইংগাম চিবানো বা পানি গিলে ফেলতে পারেন। এতে যদি কাজ না হয়, তবে ‘ভালসালভা ম্যানুভার’ পদ্ধতি প্রয়োগের চেষ্টা করা উচিত। এটি একরকম শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল, যেখানে মুখ বন্ধ করে নাক সংকোচিত করে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়া হয়। যেকোনো উপসর্গ যদি কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকে এবং খুব অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়, তাহলে নাক, কান ও গলার ডাক্তার দেখানো উচিত।
তা ছাড়া সর্দি-কাশি থাকলে উড়োজাহাজ উড্ডয়নের ৩০ থেকে ৬০ মিনিট আগে একটি ন্যাজাল ডিকনজেস্ট্যান্ট স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে জমাট সর্দি কেটে যাবে। আর যারা নিয়মিত বিমানে ভ্রমণ করেন এবং এয়ারপ্লেন ইয়ার হয়, তাঁরা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রেশার ইকুয়ালাইজেশন টিউব ব্যবহার করতে পারেন। এটি ছোট ফাঁপা একটি টিউব। চিকিৎসার মাধ্যমে কানের পর্দায় এটি বসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে মধ্য কর্ণে বায়ু চলাচল সহজ হয়।
তবে সাধারণভাবে বেশির ভাগ মানুষই হাই তোলা বা ঢোক গেলার মতো সহজ পদ্ধতিতে এয়ারপ্লেন ইয়ার প্রতিরোধ করতে পারেন। এই সমস্যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বিরল ঘটনা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।