আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারে (এআই-১৭১) মোট ২৪২ জন ছিল। একজন বাদে সবার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বি জে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীসহ এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৯। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন নিহতদের পরিবারকে এক কোটি রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেন।
ক্ষতিপূরণ দিতে টাটা গ্রুপের ব্যয় হবে ২৭৯ কোটি রুপি। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভারসহ অন্যান্য সহায়তাও দেবে গ্রুপটি। মেঘানিনগর আবাসিক এলাকায় বি জে মেডিক্যাল কলেজের যে হোস্টেলের ওপর উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয় সেটিও পুনর্নির্মাণ করবে তারা। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনো সামনে আসেনি।
বোয়িংয়ের নির্মাণ ত্রুটি নাকি প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি। এর আগেই মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ ও হোস্টেল পুনর্নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে ব্র্যান্ড ভ্যালু বা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া।
দুর্ঘটনা ঘটার ১৫ মিনিট আগে দিল্লি থেকে প্যারিসের উদ্দেশে রওনা দেন এয়ার ইন্ডিয়ার সিইও ক্যাম্পবেল উইলসন। তাঁর ফ্লাইট নম্বর ছিল ‘এআই১৪৩’।
উড়োজাহাজে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি থাকে না। ফলে ককপিট থেকে জানানো হয় দুর্ঘটনার খবর। তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজ ঘুরে যায় দিল্লির পথে। উইলসন যখন দিল্লিতে নামেন তখন ঘড়ির কাঁটায় সময় বিকেল ৪টা। তিনি পৌঁছার আগেই এয়ার ইন্ডিয়া বিশেষ হটলাইন নাম্বার চালু করে।
লালের বদলে সাদাকালো রং ধারণ করে এয়ার ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইট। কম্পানিটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রফাইলেও দেখা যায় কালো রং। দিল্লি পৌঁছে এয়ার ইন্ডিয়ার প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে আড়াই মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা তৈরি করেন উইলসন। পরেরদিন ছুটে যান দুর্ঘটনাস্থলে।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার বিষয়ে ভারতের যোগাযোগবিষয়ক পরামর্শদাতা দিলীপ চেরিয়ান বলেন, ‘কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, আসলে কার গাফিলতি ছিল, কে কতটুকু দায়ী—এসব প্রশ্নের উত্তর বের করতে অনেক সময় লাগবে। বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটি ছিল বোয়িংয়ের তৈরি। তবে আপাতত সব দায় এয়ার ইন্ডিয়াকেই বহন করতে হচ্ছে। মালিকানা অধিগ্রহণের পর থেকে এমনিতেই ভাবমূর্তি নিয়ে সংকটে ছিল এয়ার ইন্ডিয়া। আকস্মিক এই দুর্ঘটনার পর পুড়ে যাওয়া মানুষগুলোর ছবিই এখন এয়ার ইন্ডিয়ার ভাবমূর্তি। তিনি উল্লেখ করেন, ‘দুর্ঘটনার ক্ষতে প্রলেপ দিতে এয়ার ইন্ডিয়া বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে তাদের সহমর্মিতাও প্রকাশ পেয়েছে। তবে দায় এড়ানোর কোনো পথ নেই। এই দুর্ঘটনার কারণে হারানো ভাবমূর্তি ফিরে পেতে তাদের অন্তত আরো দুই বছর সময় লাগবে।
এয়ার ইন্ডিয়াকে এখন থেকে সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে। এর ওপরই নির্ভর করবে গ্রাহকরা এয়ার ইন্ডিয়াকে কোন দৃষ্টিতে দেখবে।’ বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিধ্বস্ত হওয়ার পরই কমতে শুরু করে টাটা গ্রুপের বিভিন্ন কম্পানির শেয়ারের দাম। দুর্ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যেই টাটা কনসালটেন্সির শেয়ারের দাম কমে ০.৭৭ শতাংশ। টাটা টেকনোলজিসের শেয়ার দর কমে প্রায় ০.৬৯ শতাংশ এবং টাটা টেকের শেয়ারের দাম কমে ০.৮৫ শতাংশ। ২০২২ সালে ১৮ হাজার কোটি রুপিতে ৭৪.৯ শতাংশ অংশীদারি কিনে নেয় টাটা গ্রুপ। এয়ার ইন্ডিয়ার বাকি ২৫.১ শতাংশের মালিক সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস। এর আগে এয়ার ইন্ডিয়া ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারীকরণের মূল লক্ষ্য ছিল ক্ষতির পরিমাণ কমানো। এয়ার ইন্ডিয়া কিনে নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এয়ারলাইনটিতে ১০৪টি উড়োজাহাজ যোগ করেছে টাটা গ্রুপ। সংস্কার পরিকল্পনার আওতায় ৪০ কোটি ডলারের প্রকল্প হাত দেয় তারা। কিন্তু এয়ারলাইনটি বেসরকারীকরণের পর থেকে একের পর এক বাধা আসতে শুরু করে। সূত্র : দি ইকোনমিক টাইমস, স্কিফট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।