মো. আল-আমিন : দরিদ্র পরিবারের সন্তান ইমতিয়াজ। এক বছর হলো সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে ঢুকেছেন। তার কম বেতনের টাকা দিয়েই চলে পরিবারের খরচ। এজন্য অর্থ জমাতে পারেননি। থাকার জন্য ভালো বাড়িও নির্মাণ করতে পারেননি। এদিকে ইমতিয়াজের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখছে তার পরিবার। কিন্তু ভালো বাড়ি না থাকায় পাত্রীপক্ষ আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে আত্মীয়স্বজন ও ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ইমতিয়াজ বলেন, পড়াশোনা শেষ করেছি অনেক আগেই।
অনেক চেষ্টার পর এক বছর আগে একটি চাকরি পেয়েছি। ভালো চাকরির জন্য চেষ্টা এখনো চলমান। আমার পরিবার দরিদ্র। আমার বেতনের টাকা দিয়েই সংসার চলে। এজন্য কোনো টাকা জমাতে পারি না। থাকার জন্য এখনো ভালো বাড়িও নির্মাণ করতে পারিনি। বয়স হওয়ায় পরিবার থেকে পাত্রী দেখছে। কিন্তু থাকার জন্য ভালো বাড়ি না থাকায় পাত্রীপক্ষ অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। বিয়ের জন্য অন্যতম শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে বাড়ি। এ জন্য বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই সঙ্গে আত্মীয়স্বজনের থেকেও কিছু টাকা ঋণ নিয়েছি।
ইমতিয়াজের মতো অনেকেই বিয়ের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ঋণ নিচ্ছেন। তাদের কেউ নিচ্ছেন বিয়ের আগে ভালো একটি বাড়ি নির্মাণের জন্য, আবার কেউ নিচ্ছেন একটু ঘটা করে বিয়ের আয়োজন করার জন্য।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩’ জরিপের তথ্য অনুযায়ী-জাতীয় পর্যায়ে বিয়ের জন্য গড় ঋণ নেয়ার পরিমাণ ৯৯ হাজার ৭১৪ টাকা। বিয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হচ্ছে আত্মীয়দের নিকট থেকে। এই মাধ্যম থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ গড়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৩ টাকা। এরপর বিয়ের জন্য এনজিও থেকে গড়ে ৯৩ হাজার ১২৩ টাকা, ব্যাংক থেকে ৯২ হাজার ৫০১ টাকা, মহাজনের নিকট থেকে ৩৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৪১ হাজার ৪৪১ টাকা ঋণ নেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে এলাকাভেদে সিটি করপোরেশনের মানুষ সবচেয়ে বেশি ঋণ গ্রহণ করছে, গড়ে এই অঞ্চলে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৬৮ টাকা। এরপরে শহর ও পল্লীতে বিয়ের জন্য গড়ে ঋণ নিচ্ছে যথাক্রমে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৮০ টাকা এবং ৯৫ হাজার ৮২২ টাকা।
বিবিএসের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য দেশের ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ ঋণ গ্রহণ করছে। এ ঋণ গ্রহণের হার পল্লী এলাকায় সর্বোচ্চ ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ। তারপরেই রয়েছে শহরাঞ্চল ও সিটি করপোরেশন এলাকায় যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৬ এবং ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এ ঋণ গ্রহণের উৎস হিসেবে সর্বোচ্চ শতকরা ৬৮ দশমিক ২ ভাগ খানা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া আত্মীয়, ব্যাংক, বিভিন্ন মহাজন এবং অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন যথাক্রমে শতকরা ১৪ দশমিক ৪, ১০ দশমিক ৯, ৩ দশমিক ৫ এবং ৩ শতাংশ। সমগ্র এলাকার মধ্যে এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণের হার সর্বোচ্চ, যা পল্লী এলাকায় শতকরা ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ, শহর এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় যথাক্রমে শতকরা ৬৫ দশমিক ৭ ও ৬১ দশমিক ১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে খানা কর্তৃক গৃহীত গড় ঋণের পরিমাণ ৯০ হাজার ২৩ টাকা। আবাসনের উদ্দেশ্যে গড়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ নেয়া হয়, যার পরিমাণ ১ লাখ ৯ হাজার ২২২ টাকা। ঋণ নেয়ার উদ্দেশ্য হিসেবে তারপর রয়েছে বিবাহ, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং সবশেষে খাদ্য; যার পরিমাণ যথাক্রমে ৯৯ হাজার ৭১৪, ৫৭ হাজার ৬৪৩, ৫৩ হাজার ৭৪২ এবং ৪৯ হাজার ৮৬ টাকা।
এদিকে জাতীয় পর্যায়ে যে কোনো উৎসের ক্ষেত্রে ঋণ পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ সময় হচ্ছে গড়ে ১০ দশমিক ৯ দিন। উৎসগুলোর মধ্যে ঋণ পাওয়ার জন্য মহাজনদের সর্বোচ্চ গড় ৩০ দিনের প্রয়োজন এবং তারপরে আত্মীয় এবং ব্যাংকের যথাক্রমে ১৯ দশমিক ২ এবং ১৪ দশমিক ৭ দিন। আর এনজিও থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন গড়ে ১০ দশমিক ৩ দিনের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে যে কোনো উৎসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঋণ ফেরত দেয়ার সময়কাল গড়ে ১২ দশমিক ৮ মাস। উৎসসমূহের মধ্যে, ব্যাংক ঋণের অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ গড়ে ১৮ দশমিক ৪ মাস সময় দিয়ে থাকে। তারপরে রয়েছে মহাজন এবং এনজিও যথাক্রমে ১২ দশমিক ৭ এবং ১২ দশমিক ৩ মাস। আর আত্মীয়রা ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বনিম্ন গড়ে ১১ দশমিক ২ মাস সময় দিয়ে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।